পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ես খঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী সৈন্যসজ্জা করিয়৷ যাইতে বর্ষাকাল উপস্থিত হুইবে ; অতএব রাজা মানসিংহ আপাততঃ বর্ষাশেষ পৰ্য্যন্ত শিবির সংস্থাপন করিয়া থাকিলে, তিনি বর্ষাপ্রভাতে সেনাসমভিব্যাহারে রাজসন্নিধানে উপস্থিত হইবেন । রাজা মানসিংহ অগত্য তৎপরামর্শানুবন্তী হইয়। দারুকেশ্বরতীরে শিবির সংস্থাপন করিলেন । তথায় সৈদ গরি প্রতীক্ষায় রহিলেন । * তথায় অবস্থিতিকালে লোকমুখে রাজ সংবাদ পাইলেন যে, কতলু খাঁ তাহার আলস্ত দেখিয়৷ সাহসিক হইয়াছে ; সেই সাহসে মান্দারণের অনতিদুর মধ্যে সসৈন্ত আসিয়া দেশ লুঠ করিতেছে । রাজা উদ্বিগ্নচিত্ত হ’ য়। শক্রবল কোথায় কি অভিপ্রায়ে আসিয়াছে, কি করিতেছে, এই সকল সংবাদ নিশ্চয় জানিবার জন্য র্তাহার এক জন প্রধান সৈন্তাধ্যক্ষকে প্রেরণ করা উচিত বিবেচনা করিলেন । মানসিংহের সহিত র্তাহার প্রিয়তম পুত্ৰ জগতসিংহ যুদ্ধে আসিয়াছিলেন । জগতসিংহ এই দুঃসাহসিক কার্য্যের ভার লইতে সোৎসুক জানিয়া, রাজা তাহাকেই শতেক অশ্বারোহী সেন সমভিব্যাহারে শক্রশিবিরোদেশে প্রেরণ করিলেন । রাজকুমার কার্য্য সিদ্ধ করিয়া অচিরাং প্রত্যাগমন করিলেন । যৎকালে কাৰ্য্য সমাধা করিয়া শিবিরে প্রত্যাগমন করিতেছিলেন, তখন প্রান্তরমধ্যে পাঠক মহাশয়ের সহিত র্তাহার পরিচয় হইয়াছে । চতুর্থ পরিচ্ছেদ নবীন সেনাপতি শৈলেশ্বর-মন্দির হইতে যাত্রা করিয়া জগংসিংহ পিতৃশিবিরে উপস্থিত হইলে পর, মহারাজ মানসিংহ পুত্র প্রমুখাৎ অবগত হইলেন যে, প্রায় পঞ্চাশৎ সহস্ৰ পাঠানসেন ধরপুর গ্রামের নিকট শিবির সংস্থাপন করিয়া নিকটস্থ গ্রামসকল লুঠ করিতেছে এবং স্থানে স্থানে দুর্গ নিৰ্ম্মাণ বা অধিকার করিয়া, তদাশ্রয়ে এক প্রকার নির্বিঘ্নে আছে । মানসিংহ দেখিলেন যে, পাঠানদিগের দুৰ্ব্বত্তির আশু দমন নিতান্ত আবশুক হইয়াছে, কিন্তু এ কার্য্য অতি দুঃসাধ্য। কর্তব্যাকৰ্ত্তব্য নিরূপণজন্ত সমভিব্যাহারী সেনাপতিগণকে একত্র করিয়া এই সকল বৃত্তান্ত বিবৃত করিলেন এবং কহিলেন, “দিনে দিনে গ্রাম গ্রাম, পরগণা পরগণা, দিল্লীশ্বরের হস্তম্বলিত হইতেছে, এক্ষণে পাঠানদিগকে শাসিত না কৰিলেই নয়, কিন্তু কি প্রকারেই বা তাহাদিগের শাসন হয় ? তাহার। আমাদিগের অপেক্ষাও সংখ্যায় বলবান্‌ ; তাহাতে আবার দুর্গশ্রেণীর আশ্রয়ে থাকিয়া যুদ্ধ করিৰে ; যুদ্ধে পরাজিত করিলেও তাহাদিগকে বিনষ্ট বা স্থানচু্যত করিতে পারিব না ; সহজেই দুর্গমধ্যে নিরাপদ হইতে পারিবে । কিন্তু সকলে বিবেচনা করিয়া দেখ, যদি রণে আমাদিগকে বিজিত হইতে হয়, তবে শত্রর অধিকারমধ্যে নিরাশ্রয়ে একেবারে বিনষ্ট হইতে হইবে । এরূপ অন্তায় সাহসে ভর করিয়া দিল্লীশ্বরের এত অধিক সেনানাশের সম্ভাবনা জন্মান এবং উড়িষ্যাজয়ের ‘অশা একেবারে লোপ করা, অামার বিবেচনায় অনুচিত হইতেছে ; সৈদ খার প্রতীক্ষা করাই উচিত হইতেছে ; অথচ বৈরিশাসনের আশু কোন উপায় করাও আবশুক হইতেছে । তোমরা কি পরামর্শ দাও ?” বৃদ্ধ সেনাপতিগণ সকলে একমত হুইয়া এষ্ট পরামর্শ স্থির করিলেন যে, আপাততঃ সৈদ খার প্রতীক্ষায় থাকাই কৰ্ত্তব্য । রাজা মানসিংহ কছিলেন, “আমি অভিপ্রায় করিতেছি যে, সমুদয় সৈন্তনাশের সম্ভাবনা না রাখিয়া কেবল অল্পসংখ্যক সেনা কোন দক্ষ সেনাপতির সহিত শক্রসমক্ষে প্রেরণ করি ।” এক, জন প্রাচীন মোগল সৈনিক কহিলেন, “মহারাজ ! যথায় তাবৎ সেনা পাঠাইতেও আশঙ্কা, তথায় অল্পসংখ্যক সেনা দ্বারা কোন কাৰ্য্য সাধন হুইবে ?” মানসিংহ কহিলেন, “অল্পসেনা সম্মুখ-রণে অগ্রসর হইতে পাঠাইতে চাহিতেছি না । ক্ষুদ্র বল অস্পষ্ট্রে থাকিয়া গ্রামপীড়নাসক্ত পাঠানদিগের সামান্ত দল সকল কতক দমনে রাখিতে পারিবে- " তখন মোগল কহিল, “মহারাজ ! গ্রাসে কোন সেনাপতি যাইবে ?” মানসিংহ ভ্রভঙ্গী করিয়া কহিলেন, “কি, এই .রাজপুত ও মোগলসেনামধ্যে মৃত্যুকে ভয় করে না, এমন কি কেহই নাই ?” এই কথা শ্রীতিমাত্ৰ পাচ সাত জন মোগল ও রাজপুত গাত্ৰোখান করিয়া কহিল, “মহারাজ ! দাসের যাইতে প্রস্তুত আছে ” জগৎসিংহও তথায় উপস্থিত ছিলেন ; তিনি সৰ্ব্বাপেক্ষ বয়ঃকনিষ্ঠ ; সকলের পশ্চাতে থাকিয় কছিলেন, “অমুমতি হইলে এ দাসও দিল্লীশ্বরের কার্য্যসাধনে যত্ন করে ।” রাজা মানসিংহ সম্মিত বদনে কহিলেন, “না হবে কেন ? আজ জানিলাম ষে, মোগল-রাজপুতনাম লোপের বিলম্ব আছে । তোমরা সকলেই এ স্থঙ্কর নিশ্চিত কাল