পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকাস্তের উইল 峻 গুৰু সেই স্ফীত, হৃত, অপরিমিত—প্রেমপরিপূর্ণ হৃদয়—থামিল না। কখনও ভাবিল, গরল খাই ; কখনও ভাবিল, গোবিন্দলালের পদপ্রাস্তে পড়িয়া, অন্তঃকরণ মুক্ত করিয়া সকল কথা বলি ; কখনও ভাবিল, পলাইয়। যাই ; কখনও ভাবিল, বারুণীতে ডুবে মরি। কখনও ভাবিল, ধৰ্ম্মে জলাঞ্জলি দিয়া গোবিন্দলালকে কাড়িয়া লইয়। দেশান্তরে পলাইয়া যাই । রোহিণী কাদিতে কঁাদিতে গোবিন্দলালের কাছে পুনৰ্ব্বার উপস্থিত হইল । গোবিন্দলাল জিজ্ঞাস করিলেন, “কেমন, কলিকাতায় যাওয়া স্থির হইল ত?" রে| 1 ন! } গো । সে কি ? এইমাত্র আমার কাছে স্বীকার করিয়াছিলে ? রে । যাইতে পারিব না । গো । বলিতে পারি না । জোর করিবার আমার কোনই অধিকার নাই—কিন্তু গেলে ভাল হষ্টত । রে । কিসে ভাল হইত ? গোবিন্দলাল অধোবদন হইলেন । স্পষ্ট করিয়৷ কোন কথ। বলিবার তিনি কে ? রোহিণী তখন চক্ষর জল লুকাইয়। মুছিতে মুছিতে গৃহে ফিরিয়া গেল। গোবিন্দলাল নিতান্ত দুঃখিত হইয়। ভাবিতে লাগিলেন । তখন ভোমর। নাচিতে নাচিতে সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল ; বলিল, “ভাবছ কি ?” গো । বল দেখি ? ভ্র । আমার কালোরূপ : গো । ইঃ - ভোমরা ঘোরতর কোপাবিষ্ট হইয়। বলিল, “সে কি ? আমায় ভাবছ না ? আমি ছাড়া পৃথিবীতে তোমার অন্ত চিস্ত আছে ?” গো । অাছে না ত কি ? সৰ্ব্বে সৰ্ব্ব ময়ী আর কি ! আমি অন্ত মানুষ ভাবিতেছি । ভ্রমর তখন গোবিন্দলালের গল। জড়াইয়। ধরিয়া, মুখচুম্বন করিয়া, আদরে গলিয়া গিয়া, আধো আধো মুকু মৃদু হাসিমাখ। স্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “অন্ত মানুষ কাকে ভাবছ, বল না ?? — গো ! কি হবে তোমায় বলিয়া ? ভ্র । বল না ? গে। তুমি রাগ করিবে । ভ্র। করি করবো, বল না ? গো । যাও, দেখ গিয়া সকলের খাওয়া হলে কি .২৩ ভ্র । দখব এখন—বল না, কে মানুষ ? : গে। সিয়াকুলকাটা । রোহিণীকে ভাবছিলাম । কেন রোহিণীকে ভাবছিলে ? 3 ! গে| তা কি জানি ? ভ্র । জান—বল না ? গো । মানুষ কি মানুষকে ভাবে না ? ভ্র । না । যে যাকে ভালবাসে, সে তাকেই ' ভাবে । আমি তোমাকে ভাবি--তুমি আমাকে . ভাব ! গো । তবে আমি রোহিণীকে ভালবাসি । ভ্র । মিছে কথা—তুমি আমাকে ভালবাস– আর কাকেও তোমার ভালবাসতে নাই ; কেন রোহিণীকে ভাবছিলে, বল না ? গো । বিধবাকে মাছ খাইতে আছে ? चि । न ! গো । বিধবাকে মাছ খাইতে নাই, তবু তারিণীর ম। মাছ খায় কেন ? * * * ভ্র । তার পোড়ারমুখ, যা করতে নাই, তাই করে । গো । আমারও পোড়ারমুখ, যা করতে নাই, তাই করি । রোহিণীকে ভালবাসি । ধ। করিয়া গোবিন্দলালের গালে ভোমরা এক ঠোন। মারিল । বড় রাগ করিয়া বলিল, “আমি শ্ৰীমতী ভোমরা দাসী—আমার সাক্ষাতে মিছে কথা ?” গোবিন্দলাল হারি মানিল । ভ্রমরের স্কন্ধে হস্ত আরোপিত করিয়া, প্রফুল্লনীলোৎপলদলতুল্য মধুরিমময় তাহার মুখমণ্ডল স্বকরপল্লবে গ্রহণ করিয়া মৃদ্ধ যুদ্ধ অথচ গম্ভীর, কাতর কণ্ঠে গোবিন্দলাল বলিল, “মিছে কথাই ভোমরা । আমি রোহিণীকে ভালবাসি না । রোহিণী আমায় ভালবাসে ।" - তীব্রবেগে গোবিন্দলালের হাত হইতে মুখমণ্ডল মুক্ত করিয়া ভোমরা দুরে গিয়া দাড়াইল । হাপাইতে হাপাইতে বলিতে লাগিল—“আবাণী—পোড়ারমুখী— বাদরী মরুক্‌ ! মরুক্‌ ! মরুক্‌ ! মরুক্‌ ! মরুক্‌ ! গোবিন্দলাল হাসিয়া বলিলেন, “এখনই এত গালি কেন ? তোমার সাত রাজার ধন এক মাণিক এখনও ত কেড়ে নেয় নি " - - ভোমরা একটু অপ্রতিভ হইয়া বলিল, “দুর, তা কেন—তা কি পারে—তা মাগী তোমার সাক্ষাতে বলিল কেন * গো । ঠিক ভোমরা—বল তাহার উচিত ছিল না—তাই ভাবিতেছিলাম । আমি তাহাকে বাস