পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ś, * : না । তরণী সজ্জিত করিয়া, ভৃত্যবর্গে পরিবেষ্টিত হইয়া, ভ্রমরের মুখচুম্বন করিয়া গোবিন্দলাল দশ দিনের পথ বন্দরখালি যাত্র করিলেন। ভ্রমর আগে মাটীতে পড়িয়া কাদিল, তার পর উঠিয়৷ অন্নদামঙ্গল ছিড়িয়া ফেলিল, খাচার পার্থী উড়াইয়া দিল, পুতুল সকল জলে ফেলিয়৷ দিল, টবের ফুলগাছ সকল কাটিয়া ফেলিল, আহারের অন্ন পাচিকার গায়ে ; ছড়াইয়া দিল,—চাকরাণীর খোপ। ধরিয়। ঘুরাইয়৷ ফেলিয়া দিল,—ননদের সঙ্গে কোন্দল করিল—এইরূপ নানাপ্রকার দৌরাত্ম্য করিয়া শয়ন করিল। গুইয়া চাদর মুড়ি দিয়! আবার কাদিতে আরম্ভ করিল। এ দিকে অনুকুল পবনে চালিত হইয় গোবিন্দলালের & তরণী তরঙ্গিণী-তরঙ্গ বিভিন্ন করিয়৷ চলিল । বিংশতিতম পরিচ্ছেদ

কিছু ভাল লাগে না ভ্রমর এক। ভ্রমর শয্য “তুলিয়া ফেলিল—বড় গরম । খাটের পাখ পুলিয়া ফেলিল-বাতাস বড় গরম ; চাকরাণীদিগকে ফুল আনিতে বারণ করিল—ফুলে বড় পোক। তাসখেল বন্ধ করিল—সহচরীগণ জিজ্ঞাসা করিলে বলিত তাস খেলিলে শাশুড়ী রাগ করেন । সুচ, স্থত), উল, পেটাৰ্ণ সব একে একে পাড়ার মেয়েদের বিলাইয়া দিল— জিজ্ঞাসা করিলে -বলিল যে, বড় চোখ জ্বালা করে । বস্ত্র মলিন কেন, কেহ জিজ্ঞাসা করিলে, ধোপাকে ’গালি পাড়ে, অথচ ধৌতবস্ত্রে গৃহ পরিপূর্ণ। মাথার চুলের সঙ্গে চিরুণীর সম্পর্ক রহিত হইয়। আসিয়াছিল --উলুবনের খড়ের মত চুল বাতাসে তুলিত, - জিজ্ঞাসা করিলে ভ্রমর হাসিয়া চুলগুলি হাত দিয়া টানিয়া খোপায় গুজিত, ঐ পর্যন্ত । আহারাদির সময় ভ্রমর :নিত্য বাহান করিতে আরম্ভ করিল, “আমি খাইব টুনা, আমার জর হইয়াছে।” শাশুড়ী কবিরাজ দেখাইয়া, পাচন ও বড়ীর ব্যবস্থা করিয়৷ ক্ষীরোদার প্রতিভার দিলেন যে, “বেীমাকে ঔষধগুলি খাওয়াটু ইবি ।” বৌম ক্ষীরির হাত হইতে বড় পাচন কাড়িয়৷

লইয়া জানাল গলাইয়া ফেলিয়। দিল । ং ক্রমে ক্রমে এতটা বাড়াবাড়ি ক্ষরি চাকরাণীর চক্ষে অসহ্য হইয়া উঠিল ; ক্ষরি বলিল, “ভাল, বেী, ঠাকুরাণি, কার জন্য তুমি অমন কর ? যার জন্য তুমি আহার-নিদ্রা ত্যাগ করিলে, তিনি কি তোমার কথা এক দিনের জন্যও ভাবেন ? তুমি মরিতেছ কেঁদে কেটে, আর তিনি হয় ত হুকার বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী নল মুখে দিয়া চক্ষু বুজিয়া রোহিণীঠাকুরাণীকে ধ্যান করিতেছেন ।” ভ্রমর ক্ষীরিকে ঠাস করিয়৷ এক চড় মারিল । ভ্রমরের হাত বিলক্ষণ চলিত। প্রায় কঁাদ কাদ হইয়া বলিল, “তুই যা ইচ্ছ। তাই বক্বি ত আমার কাছ থেকে উঠে য৷ ” ক্ষীরি বলিল, “ত চড়-চাপড় মারিলেই কি লোকের মুখ চাপ থাকিবে ? তুমি রাগ করিবে বলিয়া আমর ভয়ে কিছু বলি না। কিন্তু না বলিলেও বাচি ন । পাচী চাড়ালনীকে ডাকিয়া জিজ্ঞাস। করিয়া দেখ দেখি—সে দিন অত রাত্রে রোহিণী বাবুর ধাগান হইতে আসিতেছিল কি না ?” ক্ষীরোদার কপাল মন্দ, তাই এমন কথা সকালবেলা ভ্রমরের কাছে বলিল । ভ্রমর উঠিয় দাড়াইয়৷ ক্ষীরোদাকে চড়ের উপর চড় মারিল, কিলের উপর কিল মারিল, তাহাকে ঠেল। মারিয়া ফেলিয়৷ দিল, তাহার চুল ধরিয়। টানিল । শেধে আপনি কঁাদিতে লাগিল । ক্ষীরোদ। মধ্যে মধ্যে ভ্রমরের কাছে চড়ট চাপড়টা খাইত, কখনও রাগ করিত না, কিন্তু আজি কিছু বাড়াবাড়ি, আজ একটু রাগিল । বলিল, “ত ঠাকরুণ, আমাদের মারিলে ধরিলে কি হইবে---তোমারই জন্য আমর। বলি ! তোমাদের কথা লইয়। লোকে একট| হৈ হৈ করে, আমরা তা সষ্টতে পারি না । ত৷ আমার কথায় বিশ্বাস ন হয়, ভূমি পাচাকে ডাকিয়৷ জিজ্ঞাসা কর।” ভ্রমর ক্রোধে দুঃখে কাদিতে কাদিতে বলিতে লাগিল, “তোর জিজ্ঞাস করিতে হয়, তুই করগে, আমি কি তোদের মত ছুঁচে পাজি যে, আমার স্বামীর কথা পাচী চাড়ালনীকে জিজ্ঞাসা করিতে যাইব ? তুই এত বড় কথা আমাকে বলিস ? ঠাকুরাণীকে বলিয়া আমি বাট মেরে তোকে দুর করিয়া দিব । তুই আমার সম্মুখ হইতে দূর হইয়৷ शृ। ” তখন সকালবেল ! উত্তম মধ্যম ভোজন করিয়া ক্ষীরোদা ওরফে ক্ষরি চাকরাণী রাগে গর গৰ্ব করিতে করিতে চলিয়া গেল। এ দিকে ভ্রমর উর্দ্ধমুখে, সজল নয়নে যুক্তকরে মনে মনে গোবিন্দলালকে ডাকিয়া বলিতে লাগিল, “হে গুরো ! শিক্ষক, ধৰ্ম্মজ্ঞ, আমার একমাত্র সত্যস্বরূপ! তুমি কি সে দিন এই কথা আমার কাছে গোপন করিয়াছিলে ?” তার মনের ভিতর যে মন, হৃদয়ের যে লুক্কায়িত স্তান কেহ কখনও দেখিতে পায় না—যেখানে