পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*** *wo প্রথম পরিচ্ছেদ প্রথম বৎসর হরিদ্রাগ্রামের বাড়ীতে সংবাদ আসিল –গোবিন্দলাল মাত প্রভৃতি সঙ্গে নিৰ্ব্বিঘ্নে সুস্থশরীরে কাশীপামে পৌঁছিয়াছেন । লমবের কাছে কোন পত্র আসিল সা। পত্রাদি আমলাবর্গের কাছে আসিতে লাগিল । অভিমানে ভ্রমরও পত্র লিখিল না । এক মাস গেল, দুই মাস গেল, পলাদি আসিতে লাগিল । শেষ এক দিন সংবাদ আসিল যে, গোবিন্দলাল কাশী হইতে বাড়ী যাত্র করিয়াছেন । ভ্রমর গুনিয়া বুঝিল মল্লা, গোবিন্দলাল কেবল মাকে ভুলাইয়। অন্যত্র গমন করিয়াছেন । বাড়ী আসিবেন, এমন ভরস! হইল না ! এই সময়ে লমর গোপনে সৰ্ব্বদ। রোহিণীর সংবাদ লইতে লাগিল। রোহিণী বঁধে, বাড়ে, খায়, গা ধোয়, জল আনে, আর কিছুই সংবাদ নাই । ক্রমে এক দিন সংবাদ আসিল, রোহিণী পীড়িত । ঘরের ভিতর মুড়ি দিয়া পড়িয়া থাকে, বাহির হয় না । ব্ৰহ্মানন্দ আপনি রাধিয়া খায় । তার পর এক দিন সংবাদ আসিল যে, রোহিণী কিছু সারিয়াছে, কিন্তু পীড়ার মূল যায় নাই । শূলরোগ— চিকিৎসা নাই--রোহিণী আরোগ্য জন্য তারকেশ্বরে হত্যা দিতে যাইবে । শেষ সংবাদ —রোহিণী হত্য দিতে তারকেশ্বরে গিয়াছে, একাই গিয়াছে, —কে সঙ্গে যাইবে ? এ দিকে তিন চারি মাস গেল,—গোবিন্দলাল ফিরিয়া আসিল না । পাচ ছয় মাস হইল, গোবিন্দলাল ফিরিল না, ভ্রমরের রোদনের শেষ নাই । কেবল মনে করিত, এখন কোথায় আছেন,-কেমন আছেন —সংবাদ পাইলেই বাচি । এ সংবাদও পাই ন৷ কেন ? , শেষ ননন্দাকে বলিয়া শাশুড়ীকে পত্র লিখাইল— “আপনি মাত, অবশু পুত্রের সংবাদ পান ।” শাশুড়ী লিখিলেন, “তিনি গোবিন্দলালের সংবাদ পাইয়া থাকেন । গোবিনলাল প্রয়াগ, মথুরা, জয়পুর প্রভৃতি স্থান পরিভ্রমণ করিয়া আপাততঃ দিল্লীতে অবস্থিতি 戀。 ব্রিতীৰ্জ্জ খণ্ড করিতেছেন । শীঘ্র সেখান হইতে স্থানান্তরে গমন করিবেন । কোথাও স্থায়ী হইতেছেন না ।” এদিকে রোহিণীও আর ফিরিল না । ভ্রমর ভাবিতে লাগিলেন, ভগবান জানেন, রোহিণী কোথায় গেল ! আমার মনের সন্দেহ আমি পাপমুখে ব্যক্ত করিব না । ভ্রমর আর সহ্য করিতে পারিলেন না । কঁদিতে কাদিতে ননন্দাকে বলিয়া শিবিকারোহণে পিত্রালয়ে গমন করিলেন । সেখানে গিয়া গোবিন্দলালের কোন সংবাদ পাওয়| দুরূহ দেখিয়া অfবার ফিরিয়া আসিলেন, আসিয়া হরিদ্রাগ্রামে ও স্বামীর কোন সংবাদ ন৷ পাইয়। আবার শাশুড়ীকে পত্র লিখাইলেন । শাশুড়ী এবার লিখিলেন, “গোবিন্দলাল আর কোন সংবাদ দেয় না ; এখন সে কোথায় আছে, জানি না । কোন সংবাদ পাই ন৷ ” এইরূপে প্রথম বৎসর কাটিয়া গেল । প্রথম বৎসরের শেষে ভ্রমর রুগ্নাশয়।ায় শয়ন করিলেন । অপরাজিত ফুল শুকাইয়। উঠিল । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ভ্রমর রুগ্নশম্যাশারিনী শুনিয় লমরের পিতা ভ্রমরকে দেখিতে অসিলেন । লমরের পিতার পরিচর অমর সবিশেষ দিই নাই –এখন দিব । তাহার পিতা মাধবীনাথ সরকারের বয়স একচত্ত্বরিংশত বৎসর। তিনি দেখিতে বড় সুপুরুষ ; তাহার চরিত্র সম্বন্ধে লোকমধ্যে বড় মতভেদ ছিল । অনেকে তাহার বিশেষ প্রশংসা করিত—অনেকে বলিত, তাহার মত দুষ্ট লোক আর নাই । তিনি যে চতুর, তাহা সকলেই স্বীকার করিত—এবং যে তাহার প্রশংস৷ করিত, সেও তাঁহাকে ভয় করিত । মাধবীনাথ কন্যার দশা দেখিয়া অনেক রোদন করিলেন। দেখিলেন সেই হ্যামাসুন্দরী, যাহার সৰ্ব্বাবয়ব সুললিত গঠন ছিল—এক্ষণে বিশুষ্কবদন, শীর্ণ শরীর, প্রকটকণ্ঠাস্থি, নিমগ্ননয়নেন্দাবর । ভ্রমর অনেক র্কাদিল । শেষে উভয়ে রোদন সংবরণ করিলে পর ভ্রমর বলিল, “বাবা, আমার বোধ হয়, আর দিন নাই। আমায় কিছু ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম করাও । আমি