পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকাস্তের উইল দেন। এখন তোমাদের কাহাকে যাইতে হইবে না । কিন্তু আমার বিপদের দিন তোমরা দেখা দিও " ষা । কি বিপদ ভ্রমর ? ভ্রমর কাদিতে কঁাদিতে বলিলেন, “যদি তিনি আসেন ?” যা । সে আবার বিপদ কি ভ্রমর ? তোমার হারাধন ঘরে যদি আসে, তার চেয়ে—আহলাদের কথা আর কি আছে ? ভ্র । আহলাদ, দিদি, অহিলাদের কথ। আমার আর কি আছে ? ভ্রমর আর কথা কহিল না । তাহার মনের কথ! যামিনী কিছুষ্ট বুঝিল না। ভ্রমরের মৰ্ম্মান্তিক রোদন ঘামিনী কিছুষ্ট বুঝিল না । ভ্রমর মানসচক্ষে ধূমময় চিত্রবৎ এ কাণ্ডের শেষ ষাক্ত হইবে, তাহ দেখিতে পাইল যামিনী কিছুই দেখিতে পাইল না । যামিনী বুঝিল না যে, গোবিন্দলাল হুতাকারী, ভ্রমর তাঙ্গ। ভুলিতে পারিতেছে না । দ্বাদশ পরিচ্ছেদ পঞ্চম বৎসর ভ্রমর আবার শ্বশুরালয়ে গেল । যদি স্বামী আসে, নিত, প্রতাক্ষা করিতে লাগিল । কিন্তু স্বামী ত আসিল না । দিন গেল, মাস গেল –স্বামী ত আসিল না, কোনস বাদ ও আসিল না । এইরূপে তৃতায় বৎসর ও কাটিয় গেল । গোবিন্দলাল আসিল ন৷ ৷ তার পর চতুর্থ বৎসরও কাটিয়া গেল, গোবিন্দলাল আসিল ন! ! এ দিকে ভ্রমরের ও পীড়। বৃদ্ধি হইতে লাগিল । চাপানি কাসি রোগ –নি তা শরীরক্ষয়- - ষম অগ্রসর –বুঝি আর ইহজন্মে দেখ হইল ন! । তার পর পঞ্চম বংসর প্রবৃত্ত হইল । পঞ্চম বৎসরে একটা বড় ভরি গোলযোগ উপস্থিত হইল । হরিদ্রাগ্রামে সংবাদ আসিল ষে, গোবিন্দলাল ধরা পড়িয়াছে । সংবাদ আসিল যে, গোবিন্দলাল বৈরাগীর বেশে শ্ৰীবৃন্দাবনে বাস করিতেছিল—সেইখান হইতে পুলিস ধরিয়া যশোহর আনিয়াছে, যশোহরে তাহার বিচার হইবে । জনরবে এই সংবাদ ভ্রমর শুনিলেন । জনরবের স্বত্র এই –গোবিন্দলাল ভ্রমরের দেওয়ানজীকে পত্র লিথিয়াছিলেন যে, “আমি জেলে চলিলাম—আমার পৈতৃক বিষয় হইতে আমার রক্ষার জন্য অর্থব্যয় করা যদি তোমাদিগের অভিপ্রায়-সম্মত হয়, তবে এই 懿“ &* সময় । আমি তাহার যোগ্য নহি । আমার বাচিতে ইচ্ছা নাই, তবে কঁাসি যাইতে না হয়, এই ভিক্ষা : জনরবে এ কথা বাড়ীতে জানাইও, আমি পত্র লিখিয়াছি, এ কথ। প্রকাশ করিও না ।” দেওয়ানজী ’ পত্রের কথা প্রকাশ করিলেন না—জনরব বলিয়া অন্তঃপুরে সংবাদ পাঠাইলেন । . ভ্রমর শুনিয়াই পিতাকে আনিতে লোক পাঠাই- . লেন, শুনিবামাত্র মাধবীনাথ কন্যার নিকটে আসিলেন । ভ্রমর তাহাকে নোটে কাগজে পঞ্চাশ হাজার টাক বাহির করিয়া দিয়| সজলনয়নে বলিল, “বাবা, এখন যা করিতে হয়. কর ! দেখিও, আমি আত্মহত্য না করি " মাধবীনাথ ও কাদিতে কাদিতে বলিলেন. “মা, নিশ্চিস্ত থাকিও--আমি আজই যশোহরে যাত্রা , করিলাম । কোন ও চিন্তা করিও না । গোবিন্দলাল সে খুন করিয়াছেন, তাহার কোনও প্রমাণ নাই । আমি প্রতিজ্ঞা করিয়! যাইতেছি যে, তোমার আটচল্লিশ হাজার টাক। বঁাচাইয়ী আনিব-অামার জামাষ্টকে দেশে আনিব ।” মাধবীনাথ তখন যশোহর যাত্রা করিলেন । শুনিলেন যে, প্রমাণের অবস্থা অতি ভয়ানক । ইনস্পেক্টর ফিচেল খুঁ। মোকদ্দমা তদারক করিয়া সাক্ষী চালান দিয়াছিলেন । তিনি রূপে, সোনা প্রভৃতি যে সকল সাক্ষার প্রকৃত অবস্থা জানিত, তাহাদিগের কাহারও সন্ধান পান নাই । সোনা নিশাকরের কাছে ছিল -রূপে কোন দেশে গিয়াছিল, তাহ কেহ জানে না ! প্রমাণের এইরূপ দুরবস্থা দেখিয় নগদ কিছু দিয়৷ ফিচল থ। তিনটি সাক্ষী তৈয়ার করিয়াছিল। সাক্ষীরা ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কাছে বলিল ষে, “আমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছি যে, গোবিন্দলাল ওয়ুফে চুণিলাল স্বহস্তে পিস্তল মারিয়া রোহিণীকে খুন করিয়াছেন । আমরা তখন সেখানে গান শুনিতে গিয়াছিলাম " ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব আহেল। বিলাতী, সুশাসন জন্য সৰ্ব্বদ। গবর্ণমেণ্টের দ্বার। প্রশংসিত হইয় থাকেন –তিনি এই প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া গোবিন্দলালকে সেশনের বিচারে অর্পণ করিলেন । যখন মাধবীনাথ যশোহরে পৌছিলেন, তখন গোবিন্দলাল জেলে পচিতেছিলেন, মাধবীনাথ পৌঁছিয়া সবিশেষ বৃত্তান্ত শুনিয়া বিষণ্ণ হইলেন । তিনি সাক্ষাদিগের নাম-ধাম সংগ্ৰহ করিয়া তাহাদিগের বাড়ী গেলেন । তাহাদিগকে বলিলেন, “বাপু, ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কাছে যা বলিয়াছ, তা বলিয়াছ ।