পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ce এখন জজ সাহেবের কাছে ভিন্ন প্রকার বলিতে হইবে । বলিতে হইবে যে, আমরা কিছু জানি না। এই পাচ পাচ শত টাকা নগদ লও। আসামী খালাস হইলে আর পাচ পাঁচ শত টাকা দিব । সাক্ষীরা বলিল, “খেলাপ হলপের দায়ে যে মারা স্বাক্টব ।” মাধবীনাথ বলিলেন, “ভয় নাই । আমি টাকা খরচ করিয়া সাক্ষীর দ্বারা প্রমাণ করাইব যে, ফিচেল খ তোমাদিগকে মারপিট করিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কাছে মিথ্য সাক্ষা দেওয়াইয়াছে ” সাক্ষীরা চতুর্দশ পুরুষমধ্যে কখনও হাজার টাক একত্রে দেখে নাই । তৎক্ষণাৎ সম্মত হইল । সেশনে বিচারের দিন উপস্থিত হইল । গোবিন লাল কাঠগড়ার ভিতর । প্রথম সাক্ষী উপস্থিত হইয়া হলপ পড়িল । উকীল সরকার তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি এই গোবিন্দলাল ওবফে চুণিলালকে চেন ? সাক্ষী । কষ্ট—না,-—মনেও হয় না । উকীল। কখনও দেখিয়াছ ? সাক্ষী । না । উকীল । রোহিণীকে চিনিন্তে ? সাক্ষী । কোন রোহিণী ? উকীল । প্রসাদপুরের কুঠতে যে চিল ? সাক্ষী । আমার বাপের পুরুষে কখনও প্রসাদপুরের কুঠতে যাই নাই । উকীল । রোহিণী কি প্রকারে মরিয়াছে ? সাক্ষী । শুনিতেছি, আত্মহত্যা হইয়াছে । উকীল । খুনের বিষয় কিছু জান ? সাক্ষী । কিছু না ! উকীল তখন, সাক্ষী ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কাছে যে জবানবন্দী দিয়াছিল, তাহ পাঠ করিয়া সাক্ষীকে শুনাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন, তুমি ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কাছে এই সকল কথা বলিয়াছিলে ?” সাক্ষী । কঁ বলিয়াছিলাম । উকীল। যদি কিছু জান না, তবে কেন বলিয়াছিলে ? , , সাক্ষী । মারের ছোটে । ক্ৰিচেল খাঁ মারিয়া জামাদের শরীরে আর কিছু রাখে নাই । এই বলিয়া সাক্ষী একটু কাদিল । দুই চারি দিন পূৰ্ব্বে সহোদর ভ্রাতার সঙ্গে জমী লইয়। কাজিয়৷ করিয়া মারামারি করিয়াছিল ; তাহার-দাগ ছিল । সাক্ষী অম্লানমুখে সেই দাগগুলি ফিচেল পার মারপিটের দাগ বলিয়া জজ সাহেবকে দেখাইল । বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী উকীল সরকার অপ্রতিভ হইয়া দ্বিতীয় সাক্ষী ডাকিলেন । দ্বিতীয় সাক্ষীও ঐরূপ বলিল । সে পিঠে রাঙ্গচিত্রের আট দিয়া ঘা করিয়া আসিয়াছিল-- হাজার টাকার জন্য সব পারা যায়—তাহা জজ সাহেবকে দেখাইল । তৃতীয় সাক্ষীও ঐরূপ গুজরাইল । তখন জজ সাহেব প্রামাণাভাব দেখিয় আসামীকে খালাস দিলেন এবং ফিচেল খার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়া তাহার আচরণ-সম্বন্ধে তদারক করিবার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবকে উপদেশ করিলেন । বিচারকালে সাক্ষীদিগের এইরূপ বিপক্ষতা দেখিয়া গোবিন্দলাল বিস্মিত হইতেছিলেন । পরে যখন ভিড়ের ভিতর মাধবীনাথকে দেখিলেন, তখনই সকল বুঝিতে পারিলেন । খালাস হইয়াও তাহাকে আর একবার জেলে যাইতে হইল-সেখানে জেলার পরোয়ানা পাইলে তবে ছাড়িবে । তিনি যখন জেলে ফিরিয়া যান, তখন মাধবীনাথ তাঙ্গার নিকটস্থ হইয়া কানে কানে বলিলেন, “জেল হইতে খালাস পাইয়া আমার সহিত সাক্ষাৎ করিও । আমার বাস, অমুক স্থান " কিন্তু গোবিন্দলাল জেল হইতে খালাস পাইয়া মাধবীনাথের কাছে গেলেন না । কোথায় গেলেন, কেহ জানিল না । মাধবীনাথ চারি পাচ দিন তাতার সন্ধান করিলেন । কোন সন্ধান পাইলেন না । অগত্য শেষে একাই হরিদ্রাগ্রামে প্রত্যাগমন করিলেন । ত্ৰয়োদশ পরিচ্ছেদ ষষ্ঠ বৎসর মাধবীনাথ আসিয়া ভ্রমরকে সংবাদ দিলেন, “গোবিন্দলাল খালাস হইয়াছে, কিন্তু বাড়ী আসিল না, কোথায় চলিয়া গেল, সন্ধান পাওয়া গেল না।” মাধবী নাথ সরিয়া গেলে ভ্রমর অনেক কঁদিল ; কিন্তু কি জন্য র্কাদিল, বলিতে পারি না ! এ দিকে গোবিন্দলাল খালাস পাষ্টয়া প্রসাদপুরে গেলেন, গিয়া দেখিলেন, প্রসাদপুরের গৃহে কিছু নাই, কেহ নাই । গিয়া শুনিলেন যে, অট্টালিকায় তাহার যে সকল দ্রব্য-সামগ্রী ছিল, তাহা কতক পাচ জনে লুঠিয়া লইয়। গিয়াছিল--অবশিষ্ট লাওয়ারেশ বলিয়া বিক্রয় হইয়াছিল । কেবল বাড়ীটি পড়িয়া আছে—তাহারও কবাট চৌকাট পৰ্য্যন্ত বারোভূতে