পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী وي বঁাচাইলে তোমার কখনও অমঙ্গল হইবে না । হিন্দুকে হিন্দু ন! রাখিলে কে রাখিবে ? সীতারাম অনেকক্ষণ ভাবিল। পরে বলিল, “তুমি সত্যই বলিয়াছ,হিন্দুকে হিন্দু ন! রাখিলে কে রাখিবে ? আমি তোমার কাছে স্বীকার করিলাম গঙ্গারামের জন্য আমি যথাসাধ্য করিব।”

  • তখন প্রভমনে ঘোমটা টানিয়া ঐ প্রস্থান

করিল । সীতারাম দ্বার অর্গলবদ্ধ করির ভূতাকে আদেশ করিলেন, “আমি যতক্ষণ ন! দ্বার পুলি, ততক্ষণ আমাকে কেহ না ডাকে ” মনে মনে একবার * আবার ভাবিলেন, “ঐ এমন ঐ ? তা ত জানি না । আগে শ্রীর কাজ করিব, তার পর অন্য কখ{ " ভাবিলেন, “হিন্দুকে হিন্দু না রাখিলে কে রাখিবে ?" তৃতীয় পরিচ্ছেদ সীতারামের এক গুরুদেব ছিলেন । তিনি ভট্টাচার্ষ্য আপ্যাপকগোছ মাষ্ট্রয, তসর নামাবলী পর}, মাথাটি ষত্বপূর্বক কেশশূন্ত করিয়াছেন, অবশিষ্ট আছে-—কেবল এক "রেফ " কেশাভাবে চন্দনের যথেষ্ট ঘটা-পুব লম্ব ফোট । আর আর বামুনগিরির সমান সব আছে ! তাঙ্গর নাম চন্দ্রচূড় তর্কালঙ্কার । তিনি সীতারামের নিতান্ত মঙ্গলাকাজক্ষী ! সীতারাম যখন যেখানে বাস করিতেন, চন্দ্রচূড়ও তখন সেইখানে বাস করিতেন । সম্প্রতি ভূষণায় বাস করিতেছিলেন । আমরা আজিকার দিনেও এমন তুষ্ট এক জন অধ্যাপক দেখিয়াছি যে, টোলে ব্যাকরণ সাহিত। পড়াইতে যেমন পটু, অশাসিত তালুকে দাঙ্গা করিতেও তেমনি মজবুত । চন্দ্রচূড় সেই শ্রেণীর লোক । কিছুক্ষণ পরে গৃহ ইষ্টতে নিষ্ক্রাপ্ত হইয়। সীতারাম :গুরুদেবের নিকেতনে উপস্থিত গুষ্টলেন । চন্দ্রচূড়ের সুঙ্গে নিভৃতে সীতারামের অনেক কথা হইল। কি কি কথা হইল, তাহ আমাদের সবিস্তারে লিখিবার প্রয়োজন নাই । কথাবার্তার দল এই হইল যে, :সীতারাম ও চন্দ্রচূড় উভয়ে সেষ্ট রাণিতে নিশ্ৰুস্তি হইয়া সহরের অনেক লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন ; এবং সীতারাম রাত্রিশেষে গৃহে ফিরিয়া আসিয়া আপনার পরিবারবর্গ এক জন আত্মীয় লোকের সঙ্গে মধুমতীপারে পাঠাইয়া দিলেন। ঢতুর্থ পরিচ্ছেদ এক খুব বড় ফরদা জায়গায় সহরের বাহিরে গঙ্গারাম দাসের কবর প্রস্তুত হইয়াছিল । বন্দী সেখানে আসিবার আগেই লোক আসিতে আরম্ভ হইল । অতি প্রতৃষে—তখনও গাছের আশ্রয় হইতে অন্ধকার সরিয়া যায় নাই—অন্ধকারের আশ্রয় হইতে নক্ষত্র সব সরিয়া যায় নাই, এমন সময়ে দলে দলে পালে পালে জীয়স্ত মানুষের কবর দেখিতে লোক আসিতে লাগিল । একটা মাকুম মর, জীবিতের পক্ষে একটা পর্বের সমান । যখন স্তর্যোদয় হইল, তখন মাঠ প্রায় পূরিয়া গিয়াছে, অথচ নগরের সকল গলি, পথ, রাস্তা ইষ্টতে পিপীলিক শ্রেণীর মভ মনুষ্য বাহির হইতেছে । শেষে সে বিস্তৃত স্থানেও স্থানাভাব হইয়। উঠিল । দর্শকের গাছে উঠিয় কোথাও হনুমানের মত আসীন – যেন লাঙ্গুলাভাবে কিঞ্চিৎ বিরস ;–কোথাও বাড়ড়ের মত দাঙ্গুলমান, দিনেদয়ে যেন কিঞ্চিৎ সরস । পশ্চাতে নগরের যে কয়ট। কোটাবাড়া দেখ! যাইতেছিল, তাহার ছাদ মানুষে ভরিয়া গিয়াছে, আর স্থান নাই । কঁাচ ঘরই বেশী, তাইতেও মই লাগাইয়া, মইয়ে প। রাখিয়া, অনেকে ঢালে বসিয়া দেখিতেছে । মাঠের ভিতর কেবল কালে মাথার সমুদ-ঠেসঠেসি, মিশামিশি। কেবল মাষ্ট্ৰয আসিতেছে, জমাট বধিতেছে, সরিতেছে, ঘুরিতেছে, ফিরিতেছে. আবার মিশিতেছে । কোলাহল অতিশয় ভয়ানক । বন্দী এখনও আসিল ন৷ দেখিয় দর্শকেরা অতিশয় অপার হইয়| উঠিল । টাৎকার, গণ্ডগোল, বকীবকি, মারামারি আরম্ভ কুরিল । হিন্দু মুসলমানকে গালি দিতে লাগিল, মুসলমান হিন্দুকে গালি দিতে লাগিল । কেহ বলে, “আল্লা !" কেহ বলে, “ইরিবেtল !" কেহ বলে, “আজ হবে না, ফিরে যাই ।” কেহ বলে, “ঐ এয়েছে দেখ }" সাহার। বৃক্ষ{#ট, তাহার কার্য্যাভাবে গাছের পাত, ফুল এবং ছোট ছোট ডাল ভাঙ্গিয় নিম্নচারাদিগের মাথার উপব ..ফলিতে লাগিল । কেহ কেহ তাহাতেও সন্তুষ্ট ন হইয়া নিষ্ঠাবন প্রক্ষেপ করিতে লাগিল । এই সকল কারণে, যেখানে যেখানে বৃক্ষ, সেইখানে সেইখানে তলচারী এবং শাখাবিহারীদিগের ভীষণ কোন্দল উপস্থিত হইতে লাগিল। কেবল একটি গাছের তলায় সেরূপ গোলযোগ নাই । সে বৃক্ষের তলে বড় লোক দাড়ায় নাই। সমুদ্র মধ্যে ক্ষুদ্র দ্বীপের মত তাহা প্রায় জনশূন্ত । দুই চারি জন লোক সেখানে আছে বটে, কিন্তু তাহারা কোন