পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ না প্রভু, তুমি যাও, আমি যাইব না। এতকাল তোমা বিনা যদি আমার কাটিয়াছে, তবে আজিও কাটিবে। সীত। এসো, কথাট। আমি বুঝাইয়া দিব । ঐ । কি বুঝাইবে ? আমি তোমার সহধৰ্ম্মিণী, সকলের আগে । তোমার আর দুই স্ত্রী আছে, কিন্তু আমি সহধৰ্ম্মিণী—আমি কুলটাও নই, জাতিভ্রষ্টাও নই । অথচ বিনা অপরাধে বিবাহের কয়দিন পর হইতে তুমি আমাকে ত্যাগ করিয়াছ । কখনও বল নাই যে, কি অপরাধে ত্যাগ করিয়াছ । জিজ্ঞাসা করিয়াও জানিতে পারি নাই । অনেক দিন মনে করিয়াছি, তোমার এই অপরাধে আমি প্রাণত্যাগ করিব । তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমি করিমু তোমাকে পাপ হইতে মুক্ত করিব ? সে পরিচয় তোমার কাছে আজ না পাইলে আমি এখান হইতে যাইব না । সীতা । সে কথা সব বলিব । কিন্তু একট| কথা আমার কাছে আগে স্বীকার কর –কথাগুলি শুনিয়া তুমি আমায় ত্যাগ করিয়া যাইবে না ? ঐ । আমি তোমায় ত্যাগ করিব ? সীতা । স্বীকার কর, করিবে ন! ? শ্ৰী । এমন কি কথা ? তবে ন! শুনিয়| আগে স্বীকার করি কি প্রকারে ? সীতা । দেখ, সিপাহীদিগের বন্দুকের শব্দ শোন। যাইতেছে । যাহার। পলাইতেছে, সিপাহীর। তাহাদের পাছু ছুটিয়াছে । এই বেলা যদি আইস, এখনও বোধ হয়, তোমাকে নগরের বাহিরে লইয়। যাইতে পারি । আর মুহূৰ্ত্তও বিলম্ব করিলে উভয়ে নষ্ট হইব । তখন ঐ উঠিয় সীতারামের সঙ্গে চলিল । সপ্তম পরিচ্ছদ সীতারাম নিৰ্ব্বিঘ্নে নগর পার হইয়। নদীকূলে পৌছিলেন । পলায়নের অনেক বিঘ্ন । কাজেই বিলম্ব ঘটিয়াছিল । এক্ষণে রাত্রি হইয়াছে। সীতারাম নক্ষত্রালোকে, নদীসৈকতে বসিয়া খ্রীকে নিকটে বসিতে আদেশ করিলেন ; শ্রী বসিলেন । তিনি বলিতে লাগিলেন;–“এখন যাহ। শুনিতে ইচ্ছা করিয়াছিলে, তাহ শোন। না শুনিলেই ভাল হইত। “তোমার সঙ্গে আমার বিবাহের যখন কথাবাৰ্ত্ত স্থির হয়, তখন আমার পিতা তোমার কোষ্ঠী দেখিতে বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী চাহিয়াছিলেন, মনে আছে ? তোমার কোষ্ঠী ছিল না, কাজেই আমার পিতা তোমার সঙ্গে আমার বিবাহ দিতে অস্বীকৃত হইয়াছিলেন । কিন্তু তুমি বড় সুন্দরী বলিয়া আমার মা জিদ করিয়া তোমার সঙ্গে বিবাহ দিয়াছিলেন । বিবাহের মাসেক পরে আমাদের বাড়ীতে এক জন বিখ্যাত দৈবজ্ঞ আসিল । সে আমাদের সকলের কোষ্ঠ দেখিল । তাহার নৈপুণ্যে আমার পিতাঠাকুর বড় আপ্যায়িত হইলেন । সে ব্যক্তি নষ্টকোষ্ঠী উদ্ধার করিতে জানিত । পিতৃঠাকুর তাহাকে তোমার কোষ্ঠী প্রস্তুতকরণে নিযুক্ত করিলেন । - “দৈবজ্ঞ কোষ্ঠী প্রস্তুত করিয়া আনিল পড়িয়া পিতৃঠাকুরকে শুনাইল ; সেই দিন হইতে তুমি পরিত্যাজা। হইলে ।” শ্ৰী ! কেন ? সীতা । তোমার কোষ্ঠীতে বলবান চন্দ্র স্বক্ষেত্রে অর্থাং ককটরাশিতে থাকিয়া শনির ত্রিশাংশগত হইয়াছিল । ঐ ! তাহ হইলে কি হয় ? সীতা । যাহার এরূপ হয়, সে স্ত্রী প্রিয়প্রাণহস্ত্রী হয় । অর্থাৎ আপনার প্রিয়জনকে বধ করে । স্ত্রীলোকের “প্রিয়" বলিলে স্বাৰ্মাই বুঝায়। পতিবধ তোমার কোষ্ঠীর ফল বলিয়। তুমি পরিত্যাজ্য হইয়াছ ! বলিয়। সাতারাম কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন । তার পর বলিতে লাগিলেন, “দৈবজ্ঞ পিতাকে বলিলেন, আপনি এই পুত্রবধুটিকে পরিত্যাগ করুন এবং পুত্রের দ্বিতীয় দারপরিগ্রহের ব্যবস্থা করুন। কারণ, দেখুন, যদিও স্ত্রীজাতির সাধারণতঃ পতিই প্রিয়, কিন্তু যে পতি স্ত্রীর অপ্রিয় হয়, সেখানে এই ফল পতির প্রতি না ঘটিয়া অন্য প্রিয়জনের প্রতি ঘটিবে। স্ত্রী-পুরুষে দেখা-সাক্ষাৎ না থাকিলে, পতি স্ত্রীর প্রিয় হইবে না ; এবং পতি প্রিয় না হইলে, তাহার পতিবধের সম্ভাবনা নাই । অতএব যাহাতে আপনার পুত্রবধুর সঙ্গে আপনার পুত্রের কখন সহবাস ন। হয় বা প্রীতি না জন্মে, সেই ব্যবস্থা করুন । পিতৃদেব এই পরামর্শ উত্তম বিবেচনা করিয়া, সেই দিনই তোমাকে পিত্রালয়ে পাঠাইয়া দিলেন এবং - ------- ASA SSASAS SSAS SSAS

  • চন্দ্রাগারে খাগ্নিভাবে কুঁজত

স্বেচ্ছাবৃত্তিজ্ঞস্ত শিল্পে প্রবীণ ! বাচাংপত্যুঃ সদগুণ ভাগবস্ত সাধবী মন্দস্ত প্রিয়প্রাণহস্ত্রী ॥ —ইতি জাতকাভগুণে ।