পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>S কুমার বীরমদে মত্ত হইয়া অবাধে ব্লণজয় করিতে লাগিলেন । শৈলেশ্বর ! সুন্দরীর সরল দৃষ্টতে এই যোদ্ধ পরাভূত হইয়া ছিলেন, সে সুন্দরীকে সেনা-কোলাহল-মধ্যে কি তাহার একবারও মনে পড়ে নাই ? যদি না পড়িয়৷ থাকে, তবে জগৎসিংহ তোমারই ন্যায় পাষাণ । দশম পরিচ্ছেদ মন্ত্রণার পর উদ্যোগ যে দিবস অভিরাম স্বামী বিমলার প্রতি ক্রুদ্ধ ভূইয়া তাহাকে গৃহবহিস্কৃত করিয়া দেন, তাহার পরদিন প্রদোষকালে বিমলা নিজ কক্ষে বসিয়া বেশভূষা করিতেছিলেন। পঞ্চত্রিংশ বর্মীয়ার বেশভূষা ? কেনই বা না করিবে ? বয়সে কি যৌবন ষয় ? যৌবন যায় রূপে আর মনে ; যার রূপ নাই, সে বিংশতি বয়সেও বৃদ্ধ ; যার রূপ আছে, সে সকল বয়সেই যুবতী। যার মনে রস নাই, সে চিরকাল প্রবীণ ; যার মনে রস আছে, সে চিরকাল নবীন । বিমলার আজও রূপে শরীর ঢল ঢল করিতেছে । রুসে মন টল-টল করিতেছে । বয়সে আরও রসের পরিপাক। পাঠক মহাশয়ের যদি কিঞ্চিৎ বয়স হুইয়া থাকে, তবে এ কথা অবশু স্বীকার করিবেন। কে বিমলার সে তামূলরাগরক্ত ওষ্ঠাধর দেখিয়া ৰলিবে, এ যুবতী নয় ? তাহার কজ্জলনিবিড় প্রশস্ত লোচনের চকিত কটাক্ষ দেখিয়া কে বলিবে যে, এ চতুৰ্ব্বিংশতির পরপারে পড়িয়াছে ? কি চক্ষু ! সুদীর্ঘ, চঞ্চল, আবেশময় ! কোন কোন প্ৰগল্‌ভযৌবন কামিনীর চক্ষু দেখিবামাত্র মনোমধ্যে বোধ হয় যে, এ রমণী দপিতা ; এ রমণী সুখলালসাপরিপূর্ণ। বিমলার চক্ষু সেইরূপ । আমি নিশ্চিত পাঠক মহাশয়কে বলিতেছি, বিমলা যুবতী, স্থিরযৌবন বলিলেও বলা যায় । তাহার সে চম্পকবর্ণ ত্বকের কোমলতা দেখিলে কে বলিবে ষে, ষোড়শী তাহার অপেক্ষ কোমল ? ষে একটি অতিক্ষুদ্র গুচ্ছ অলককেশ কুঞ্চিত হইয়া কণমূল হইতে অসাব খানে কপোলদেশে পড়িয়াছে, কে দেখিয়া বলিবে যে, যুবতীর কপোলে যুবতীর কেশ পড়ে নাই ; পাঠক ! মনশ্চক্ষু উন্মীলন কর, যেখানে বসিয়া দর্পণ সম্মুখে বিমলা কেশবিন্যাস করিতেছে, তাহা দেখ ; বিপুল কেশগুচ্ছ ৰামকরে লইয়া সম্মুখে রাখিয়া যে প্রকারে বঙ্কিমচঞ্জের গ্রন্থাবলী তোমার মনির মধ্যে ধে । ভাষ্কাতে চিরুণী দিতেছে, দেখ ; নিজ ধোঁৰনভাৰ ' ' দেখিয়া টিপি টিপি ষে হালিতেছে, তাহ দেখ ; যধ্যে মধ্যে বীণানিন্দিত মধুরস্বরে যে মৃদ্ধ মৃদ্ধ সঙ্গীত করিতেছে, তাহ। শ্রবণ কর ; দেখিয়া শুনিয়া বল, বিমলা অপেক্ষ কোন নবীন তোমার মনোমোহিনী ? বিমলা কেশ বিন্যস্ত করিয়া কবরীবন্ধন করিলেন না, পৃষ্ঠদেশে বেণী লম্বিত করিলেন, গন্ধবারিসিক্ত রুমালে মুখ পরিষ্কার করিলেন ; গোলাপ-পূর্গকপূর-পূর্ণ তাম্বুলে পুনৰ্ব্বার ওষ্ঠাধর রঞ্জন করিলেন ; মুক্তাভূষিত কঁাচলি লইয়। বক্ষে দিলেন ; সৰ্ব্বাঙ্গে কনকরত্নভূষ। পরিধান করিলেন ; | কি ভাবিয়া তাহার কিয়দংশ পরিত্যাগ করিলেন : বিচিত্র কারুকার্য্যখচিত বসন পরিলেন ; মুক্তশোভিত পাদুক গ্রহণ করিলেন এবং সুবিন্যস্ত চিকুরে যুবরাজ-দত্ত বহুমূল্য মুক্তাহার রোপিত করিলেন । বিমল বেশ করিয়া তিলোত্তমার কক্ষে গমন করিলেন । তিলোত্তম দেখিবামাত্র বিস্ময়াপন্ন হইলেন ; হাসিয়া কহিলেন,-“এ কি বিমলা ! এ বেশ কেন ?” বিমলা কহিলেন, “তোর সে কথtয় কাজ কি ?” তি । সত্য বল না, কোথায় যাবে ? বি । আমি ষে কোথায় যাব, “তোমাকে কে বলিল ? তিলোত্তম অপ্রতিভ হইলেন । বিমলা তাহার লজ্জা দেখিয়া সকরুপে ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন,— “আমি অনেক দূর যাব " তিলোত্তমার মুখ প্রফুল্ল পদ্মের স্তায় হর্যবিকসিত হুইল । মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, —“কোথ। যাবে ?" বিমল৷ সেইরূপ মুখ টিপিয়া হাসিতে হাসিতে কহিলেন;– “আন্দাজ কর না ?” তিলোত্তম তাহার মুখপানে চাহিয়া রছিলেন। বিমলা তখন তাহার হস্তধারণ করিয়া “গুন দেখি” বলিয়া গবাক্ষের নিকট লইয়া গেলেন । তথায়ু কাণে কাণে কহিলেন,-“আমি শৈলেশ্বরমন্দিরে যাব ; তথায় কোন রাজপুত্রের সহিত সাক্ষাৎ হুইবে ।” তিলোত্তমার শরীর রোমাঞ্চিত হইল। কিছুই উত্তর করিলেন না । বিমলা বলিতে লাগিলেন, “অভিরাম ঠাকুরের সঙ্গে আমার কথা হইয়াছিল ; ঠাকুরের বিবেচনায় জগৎসিংহের সহিত তোমার বিবাহ হইতে পারে না। তোমার বাপ কোনমতে সম্মত হইবেন না। তার