পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b তুলিতে লাগিল— তখন পরিষ্কার স্বগীয় অন্সরোনিন্দিত তিন গ্রাম সংমিলিত মনোমুগ্ধকর সঙ্গীতের মত শ্রোতৃগণের কর্ণে সেই মুগ্ধকর বাক্য বাজিতে লাগিল । সকলে মুগ্ধ হইয়! শুনিতে লাগিল । তার পর সহস৷ রমা, ধাত্ৰীক্রেড় হইতে শিশুকে কাড়িয়া লইয়l, সীতারামের পদতলে তাহাক ফেলিয়া দিয়! যুক্ত করে বলিতে লাগিল, “মহারাজ ! আপনার আরও সন্তান আছে--অামার আর নই ; মহারাজ ! আপনার রাজ্য আছে -আমর রাজ্য এই শিশু ! মহারাজ ! আপনার ধৰ্ম্ম আছে, কৰ্ম্ম আছে যশ আছে, স্বর্গ আছে—আমি মুক্তকণ্ঠে বলিতেছি, আমার ধৰ্ম্ম এই, কৰ্ম্ম এক্ট, সুশ এষ্ট, স্বর্গ এই—মহারাজ ! অপরাধিনী ইষ্টর থাকি, তবে দণ্ড করুন " —শুলিয়। দর্শকমণ্ডলা অশপুর্ণ ইষ্টর পুনঃপুনঃ জয়ধ্বনি করিতে লাগিল—কিন্তু লোক ভাল-মন তই রকমই আছে—অনেকেই জয়ধ্বনি করিতে লাগিল—কিন্তু আবার অনেকেই তাহতে ধোগ দিল ন! i জয়ধ্বনি ফুরাইলে তাহার কেহ অদ্ধ"rটস্বরে বলিল-“আমার ত এ কথায় বিশ্বাস হয় না।" কোন বর্ষীয়সী বলিল, “পোড়াকপাল ! প্রালে মাস ডাকিয় নিয়। সিয়াছেন —উনি আবার সতী ! কেহ বলিল, “রাক্ত এ কথায় ভুলেন ভুলুন—আমরা এ কথায় ভুলিব না । কেঃ বলিল, “রাণী হুইয়। যদি উনি এই কাজ করবেন. তবে আমরা গরীব-দুঃখা কি না করিব ? এ সকল কথা সীতারামের কানে গেল । তখন রমাকে বলিলেন, “প্রজাস্বর্গ সকলে ত তোমার কথ} বিশ্বাস করিতেছে না ।" রম কিছুক্ষণ মুখ অপনত করিয়া বৃঠিল । চক্ষুতে প্রবল বারিধার বহিল - তার পপ পম সমিলাইল । তখন মুখ তুলিয়। রাজাকে সম্বোপন করিয়! নলিতে লাগিল- “মখন লোকের বিশ্বাস শুইল না, তখন আমার একমাত্র গতি । আপনার রাজপুরীর কলঙ্কস্বরূপ এ জীবন আর রাখিতে পারিব না । আপনি চিত প্রস্তুত করিতে আজ্ঞ। দিন--আমি সকলের সম্মুখেই পুড়িয়া মরি । দুঃখ তাঙ্গতে কিছু নাই, লোকে আমাকে কলঙ্কিনী বলিল—মরিলেই সে দুঃখ গেল । কিন্তু এক নিবেদন মহারাজ ! আপনিও কি আমাকে অবিশ্বাসিনী ভাবিতেছেন ? তাহ হইলে বুঝি -( আবার রমার চক্ষুতে জলের ধারা চুটিল )— বুঝি আমার পুড়িয়া মড়াও বৃথা হইবে । তুমি যদি এই লোক-সমারোহের সম্মুখে বল যে, আমার প্রতি তোমার অবিশ্বাস নাই—তাহা হইলে আমি সেই চিতাই স্বর্গ মনে করিব —মহারাজ ! পরলোকের বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী উদ্ধারকর্তী ভূদেবতুল্য আমার গুরুদেব এই সম্মুখে । আমি তাহার সম্মুখে ইষ্টদেবকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি, আমি অবিশ্বাসিনী নহি । যিনি গুরুর অপেক্ষাও আমার পূজ্য, যিনি মনুষ্য হইয়াও দেবতার অপেক্ষ আমার পূজা, সেই পতিদেবতা আপনি স্বয়ং আমার সম্মুখে—আমি পতিদেবতাকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি, আমি অবিশ্বাসিনী নহি । মহারাজ ! এই নারীদেহ ধারণ করিয়া মে কিছু দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা, দান, রত, নিয়ম করিয়াছি, যদি আমি বিশ্বাসঘাতিনী হইয়! থাকি, তবে সে সকলেরই ফলে যেন বঞ্চিত হষ্ট । পতিসেবার অপেক্ষ স্ত্রীলোকের আর পুণ্য নষ্ট, কাসুমনোবাকে। আমি যে আপনার চরণসেবা করিয়াছি, তাই আপনিষ্ট জানেন,—আমি যদি অবিশ্বাসিনী হঠয়! থাকি, তবে আমি সেন সে পুণ্যফলে বঞ্চিত হই । আমি ইহজীবনে যে কিছু আশী- মে কিছু ভরসা, যে কিছু কামন, ঘ্নে কিছু মানস করিপ্লাছি,—আমি ধদি অবিশ্বাসিনী হই থাকি, সকলই সেন নিস্ফল হয় । মহারাজ ! নারীজন্মে স্বামিসনদর্শনের তুল্য পুণ্যও নাই, সুখ ও নাই –যদি আমি অবিশ্বাসিনী হইয়। থাকি, যেন ঈহজন্মে আমি সে সুখে চিরবঞ্চিত হই । দে পুলের জঙ্গ আমি এই কলঙ্ক রটাইয়াছি—যাহার তুলনায় জগতে আমার আর কিছুই নাই—যদি আমি অবিশ্বাসিন গুই, আমি যেন সেই পুত্ৰমুখদর্শনে চিরবঞ্চিত হই । মহারাজ ! আর কি বলিব—যদি আমি আবিশ্বাসিনী হতীয় থাকি, তবে জন্মে জন্মে যেন নারী জন্ম গ্রহণ করিয়া, জন্মে জন্মে স্বামি পুল্লের মুখদর্শনে চিরবঞ্চিত তই ৷” রম। তার ললিতে পারিল না-ছিন্নল তার মত সভা চলে পড়ি গিয়। মূৰ্ছিত হইল-ধাত্রীগণ পরাপর করিয়৷ অন্তঃপুরে বহিয়৷ লষ্টয় গেল। ধাত্রীক্রোড়স্ত শিশু মা'র সঙ্গে সঙ্গে কাদিতে কঁাদিতে গেল : সভাতলস্ত সকলে আশ্রমোচন করিল । গঙ্গারামের করচরণস্তিত শুস্থলে ঝঞ্চন বাজিয়| উঠিল। দর্শকমণ্ডলী বা ত্যাপীড়িত সমুদ্রের ষ্ঠায় চঞ্চল হইয়া মহান কোলাহল সমুথিত করিল—রক্ষিবর্গ কিছুই নিবারণ করিতে পারিল না । তখন “গঙ্গারাম কি বলে ?” “গঙ্গারাম কি এ কথ! মিছা বলে ?” “গঙ্গারাম ষদি মিছা বলে তবে তাইস, আমরা সকলে মিলিয়া গঙ্গারামকে খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলি।” এইরূপ রব চারিদিক হইতে উঠিতে লাগিল । গঙ্গারাম দেখিল, এই সময়ে লোকের মন ফিরাইতে না পারিলে তাহার আর রক্ষা