পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

es পুষ্পচন্দন দাও, তাহাতে তোমার ধৰ্ম্ম আছে, মুখও আছে, কিন্তু তাহাতে মাটীর পুতুলের কি ? সীতা । কি ভয়ানক কথা ! শ্ৰী । ভয়ানক নহে—অমৃতময় কথা । ঈশ্বর সৰ্ব্বভূতে আছেন । ঈশ্বরে প্রীতিই জীবের সুখ বা ধৰ্ম্ম । তাই সৰ্ব্বভূতকে ভালবাসিবে । কিন্তু ঈশ্বর নিৰ্ব্বিকার, তাহার সুখ-দুঃখ নাই। ঈশ্বরের অংশস্বরূপ ষে আত্মা জাবে আছেন, তাহারও তাই । ঈশ্বরে অপিত যে প্রীতি, তাহাতে তাহার সুখ-দুঃখ নাই । তাই যে কেহ ভালবাসিলে আমরা সুখী হই, সে কেবল মায়ার বিক্ষেপ । সীতা । শ্ৰী ! দেখিতেছি, কোন ভণ্ড সন্ন্যাসীর হাতে পড়িয়া তুমি স্ত্রীবুদ্ধিবশতঃ কতকগুলা বাজে কথ। কণ্ঠস্থ করিয়াছ । ও সকল স্ত্রীলোকের পক্ষে ভাল নহে । ভাল যা, তা বলিতেছি, শুন । আমি তোমার স্বামী, আমার সহবাসই তোমার ধৰ্ম্ম । তোমার ধৰ্ম্মান্তর নাই । আমি রাজা, সকলেরই ধৰ্ম্মরক্ষা আমার কৰ্ম্ম ; এবং স্বামীরও কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্ম যে, স্ত্রীকে ধৰ্ম্মাতুবৰ্ত্তিন করে । অতএব তোমার ধৰ্ম্মে আমি তোমাকে প্রবৃত্ত করিব । তোমাকে যাইতে দিব না । শ্ৰী । তা বলিয়াছি, তুমি স্বামী, তুমি রাজা, তুমি উপকারী । তোমার আজ্ঞা শিরোপার্য । কেবল আমার এইটুকু রলিয়া রাখা যে, আম হইতে তুমি মুখী হইবে না। সীতা । তোমাকে দেখিলেষ্ট সুখী হইব । শ্ৰী । আর এক ভিক্ষ এক্ট, যদি আমাকে গৃহে থাকিতে হইল, তবে আমাকে এষ্ট রাজপুরীমধ্যে স্থান না দিয়া আমাকে একটু পৃথক কুটার তৈয়ারা করিয়া দিবেন। আমি সন্ন্যাসিনী, রাজপুরীর ভিতর আমিও সুখী হুইব না, লোকেও আপনাকে উপহাস করিবে । সীতা । আর কুটীরে রাজমহিষীকে রাখিলে মুলাকে উপহাস করিবে না কি ? শ্ৰী । রাজমহিষী বলিয়। কেহ নাই জানিল । সীতা । আমার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হুইবে ন৷ কি ? শ্ৰী । সে আপনার অভিরুচি । সীতা । তোমার সঙ্গে আমি দেখা-শুনা করিব, অথচ তুমি রাজমহিষী নও, লোকে তোমাকে কি বলিবে জান ? শ্ৰী ৷ জানি বৈ কি । উপপত্নী বিবেচনা করিবে । লোকে আমাকে রাজার মহারাজ ! আমি বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী সন্ন্যাসিনী—আমার মান অপমান কিছুই নাই । বলে বলুক না । আমার মান অপমান আপনারই হাতে । সীতা । সে কি রকম ? ' শ্ৰী । আমি তোমার সহধৰ্ম্মিণী—আমার সঙ্গে ধৰ্ম্মাচরণ ভিন্ন অধৰ্ম্মীচরণ করিও না । ধৰ্ম্মার্থে ভিন্ন যে ইন্দ্রিয়পরিতৃপ্তি, তাহ অধৰ্ম্ম । ইন্দ্রিয় পশুবৃত্তি । পশুবৃত্তির জন্য বিবাহের বাবস্থা দেবত করেন নাই । পশুদিগের বিবাহ নাই । কেবল ধৰ্ম্মার্থেই বিবাহ । রাজর্ষিগণ কখনও বিশুদ্ধচিত্ত না হইয়া সহধৰ্ম্মিণীসহবাস করিতেন না । ইন্দ্রিয়বস্তৃতামাত্রই পাপ । আপনি যখন নিষ্পাপ হইয়া, শুদ্ধচিত্তে আমার সঙ্গে আলাপ করিতে পারিবেন, তখন আমি এই গৈরিক বস্ত্র ছাড়িব, যতদিন আমি এ গেরুয়া না ছাড়িব. তত দিন মহারাজ ! তোমাকে পৃথক্ আসনে বসিতে হুইবে । সীতা । আমি তোমার প্রভু আমার কথাই চলিবে । শ্ৰী । একবার চলিতে পারে, কেন না, তুমি বলবান । কিন্তু আমার এক বল আছে । আমি বনবাসিনী, বনে আমরা অনেক বিপদে পড়ি । এমন বিপদ ঘটিতে পারে যে, তাহা হইতে উদ্ধার নাই । সে সময়ে আপনার রক্ষার জন্ত আমরা সঙ্গে একটু বিষ রাখি। আমার নিকট বিষ আছে— আবশ্ব)ক হইলে খাইব । হায় ! এ ঐ ত সীতারামের ঐ নয় ! অষ্টম পরিচ্ছেদ সাতারাম তাচ বুঝিয়াও বুঝিলেন না । মন কিছুতেই বুঝিল না। সাহার ভালবাসার জিনিষ মরিয়া বাঘ, সেও মৃতদেহের কাছে বসিয়া থাকে ; কিছুক্ষণ বিশ্বাস করে না যে, আর নিশ্বাস নাই । পাগল লিয়ারের মত দর্পণ পুঁজিয়া বেড়ায়, দর্পণে নিশ্বাসের দাগ ধরে কি ন| সীতারাম এত বৎসর পরিয়া মনোমধ্যে একটা ভ্ৰমূৰ্ত্তি গড়িয়া তাহার আরাধনা করিয়াছিল । বাহিরের ঐ ধাই হৌক, ভিতরের শ্লী তেমনই আছে । বাহিরের শ্ৰীকেই ত সীতারাম হৃদয়ে বসাইয়। রাখিয়াছিলেন, সেই বাহিরের শ্ৰী ত বাহিরেই আছে ; তবে সে হৃদয়ের শ্ৰী হইতে ভিন্ন কিসে? ভিন্ন বলিয়া সীতারাম বারেকমাত্রও ভাবিতে পারিলেন না । লোকের বিশ্বাস আর যাই হৌক, লোকে মনে করে, মানুষ য। তাই থাকে । মানুষ ষে কতবার মরে, তাহা