পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম কুলাইতে পারিলেন না । বাকীদার, তহশীলদার, উভয়েই দেশ ছাড়িয়া পলাইতে লাগিল । যে বাকী দার নয়, সেও সঙ্গে সঙ্গে পলাইতে লাগিল । তাই বলিতেছিলাম যে, আগে আগুন ত জলিয়াই ছিল, এখন ঘর পুড়িল ; যদি ঐ ন৷ আসিত, তবে সীতারামের এতট। অবনতি হইত কি ন জানি না ! কেন না, সীতারাম ত মনে মনে স্থির করিয়াছিলেন যে, রাজ্যশাসনে মন দিয়া শ্ৰীকে ভুলিবেন—সে কথা যথাস্থানে বলিয়াছি । অসময়ে আসির। ঐ দেখ। দিল, সে অভিপ্রায় বালির বাধের মত আসক্তির বেগে ভাসিয়া গেল । রাজে। মন দিলেই যে সব আপদ ঘুচিত, তাহ নাই বলিলাম ; কিন্তু শ্ৰী যদি আসিয়া ছিল, তবে সে যদি নন্দার মত রাজপুরীমধ্যে মহিষী ইষ্টয়! থাকিয়া, নন্দার মত রাজার রাজধৰ্ম্মের সহায়তা করিত তাহ হচলে ত সাতারামের এতট। অবনতি ইষ্টত না বোপ হয় ; কেন না, কেবল ঐশ্বৰ্য্যমদে সে অবনতিটুকু হইতেছিল, ঐ ও নন্দার সাহায্যে সেটুকুরও কিছু খঞ্চ ত ইষ্টত । তা শ্ৰী পদি রাজপুরাতে মহিয়া ন! থাকিয়। টিওবিশামে আসিয়। উপপত্নীর মত রহিল, তবে সন্ন্যাসিনার মত ন৷ থাকিয়! সেই মত থাকিলেই এতটা প্রমাদ ঘটিত না । আকাজক্ষ পূণ হইলে তাঙ্গর মোহিনী শক্তির অনেক লাঘব হষ্টত । কিছু দিনের পর রাজার চৈতষ্ঠ হইতে পরিত । ত, সদি শ্ৰী সন্ন্যাসিনী হইয়াহ রহিল, তবে সোজা রকম সপ্লাসিনী ইষ্টলেও এ বিপদ হইত না । কিন্তু এষ্ট ইন্দ্রাণীর মত সমাসিনা বাঘছালে বসিয়। বাক্যে মধুবৃষ্টি করিতে থাকিবে আর সীতারাম কুকুরের মত তক্ষণতে বসিয়। মুখপানে চাহিয়৷ থাকিবে - অথচ সে সীতারামের স্ত্রী ! পাঁচ বৎসর ধরিয়া সাতারাম তাহর জঙ্গ প্রায় প্রাণপাত করিয়াছিলেন । এ দুঃখের কি আর তুলনা হয় ? ইহাতেই সীত। রামের সব্বনাশ ঘটিল। আগে আগুন জলিয়াছিল মাত্র,-“এখন ঘর পুড়িল । সীতারাম আর সহা করিতে ন পারিয়া, মনে মনে সঙ্কল্প করিলেন, শ্রীর উপর বলপ্রয়োগ করিবেন । তবে ধাকে ভালবাসে, তার উপর বলপ্রয়োগ বড় পামরেও পারে না ! শ্রীর উপর রাজার যে ভালবাসা, তাহা এখন কাজেই ইন্দ্রিয়বস্ততায় আসিয়৷ পড়িয়া ছিল । কিন্তু ভালবাসা এখনও ষার নাই । তাই বলপ্রয়োগে ইচ্ছুক হইয়াও সাঁতারাম তাহা করিতে ছিলেন না । বলপ্রয়োগ করিব কি না, এ কথার মীমাংসা করিতে সীতারামের প্রাণ বাহির হইতেছিল । যত দিন না সীতারাম একটা এ দিক্ ও দিক্ স্থির Woo) করিতে পারিলেন, ততদিন সীতারাম এক প্রকার । জ্ঞানশূন্তাবস্থায় ছিলেন । সেই ভয়ানক সময়ের বুদ্ধি" বিপর্যয়ে রাজপুরুনের শূলে গেল, আদায়-তহশীলের , ভারপ্রাপ্ত কৰ্ম্মচারীরা কারাগারে গেল, বাকীদারেরা আবদ্ধ হইল, প্রজা সব পলাইল, রাজ্য ছারখারে ষাইতে লাগিল । শেষে সীতারাম স্তির কপিলেন, শ্রীর প্রতি বলপ্রশ্লোগই করিবেন । কথাট। মনেমপো স্থির হইয়া কার্ঘ্যে পরিণত হইতে ন চীনে চ অকস্মাৎ এক গোলযোগ উপস্থিত হইল । চন্দ্রচূড় ঠাকুর প্লাজাকে আর এক দিন পাকুড়া করিয়া বলিলেন, “মহারাজ ! তীর্থ পর্যটনে যাইব ইচ্ছা করিতেছি । আপনি অনুমতি করিলেট যাই ।” কথাট। রী ৪৮৷র মাথায় সেন বজ্রাঘাতের মত পড়িল । চন্দ্রচূড় গেলে নিশ্চয়ই ত্রকে পরিত্যাগ করিতে শুষ্টবে, রাজ্য পরিত্যাগ করিতে হুইবে । অতএব বাথ চন্দ্রচূড় ঠাকুরকে তীর্থযাত্র হইতে নিবৃত্ত করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন । এখন চন্দচড় ঠাকুরের স্থির সিদ্ধান্ত এই যে, এ পাপরাজ্যে আর বাস করিবেন না, এই পাপিষ্ঠ রাজার কৰ্ম্ম আর করিবেন না । অতএব তিনি সহজে সন্মত হইলেন মা ! অনেক কথাবাৰ্ত্ত হইল। চন্দ্রচুড় অনেক শুিরস্কার করিলেন । ব্লাঙ্গাও অনেক উত্তরপ্রত্যুত্তর করিলেন ! শেসে চন্দচুড় থাকিতে সন্মত হষ্টলেন । কিন্তু কথায় কথা অনেক রাত্রি হইল । কাযেই রাজ সে দিম চিত্তবিশ্রামে গেলেন না। এ দিকে চিন্তবিশ্রামে সেই রাত্রে একটা কাণ্ড উপস্থিত হইল । ষোড়শ পরিচ্ছেদ সেই দিন দৈবগতিকে চিত্তবিশ্রামের দ্বারদেশে এক জন ভৈরবী আসিয়া দর্শন দিল । এখন, চিত্তবিশ্রাম ক্ষুদ্র প্রমোদগুহ হইলেও রাজগৃহ, জনকতক দ্বারবানও দ্বারদেশে আছে । ভৈরবী দ্বারবানূদিগের নিকট পথ ভিক্ষা করিল। দ্বারবানের বলিল, “এ রাজবাড়ী—এখানে একটি । রাণী থাকেন । কাহারও যাইবার হুকুম নাই ।” বল বাহুল্য যে, রাজাদিগের উপরাণীরাও ভৃত্যদিগের নিকট রাণী নাম পাইয় থাকে । - ভৈরব বলিল, “আমার তাহ জানা আছে } রাজাও আমায় জানেন, আমার যাইবার নিষেধ" নাই—তোমরা গিয়া রাজাকে জানাও ” X