পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 রাজা । নন্দ ! এত লোক পলাইল—তুমি পলাইলে না কেন ? তাহা হইলে ইহার রক্ষ পাইত । ননা । তোমার মহিষী হইয়া আমি কার সঙ্গে পলাইৰ মহারাজ ! তোমার পুত্ৰকল্প| আমি তোমাকে না বলিয়া কাহার হাতে দিব ? পুত্র বল, কন্যা বল, সকলই ধৰ্ম্মের জন্য । আমার ধৰ্ম্ম তুমি । আমি তোমাকে ফেলির পুলক দ্য লইয়া কোথায় যাইব ? রাজা । কিন্তু এখন উপায় ? নন্দ । এখন তার উপায় নাই । অনাথ । দেখিয়া মুসলমান যদি দয়া করে । না করে, জগদীশ্বর ধাতু| করিবেন, তাহাই হইবে । মহারাজ ! রাজার ঔরসে ইহাদের জন্ম । রাজকুলের সম্পদ বিপদ উভয়ই আছে-ভজন্ত আমার তেমন চিন্ত নাই | পাছে, তোমাম কন্স কাপুরুষ বলে, আমার সেই বড় ভাবনা । রাজা । তবে বিধাত ঘহা করিবেন, তাহা হইবে । ইহজন্মে তোমাদের সঙ্গে এই দেখা ! এই বলিয়া আর কাম কথা ল। কহিয়া রাজ! সজ্জার্থ অস্ত্ৰগৃহে গেলেন । নন্দ। বালকবালিকাদিগকে সঙ্গে লইয়া রাজার সঙ্গে সস্ত্রগুহে গলেন । রাঙ্গ| রণসজ্জায় আপনাকে বিভূষিত করিতে লাগিলেন, নন্দ বালকবালিকাগুলি লইয়। চক্ষু মুছিতে মুছিতে দেখিতে লাগিল । যোদ্ধৃবেশ পরিধান করিয়া, সৰ্ব্বাঙ্গে অস্ত্র বাধিয়া, সীতারাম আবার সাতারামের মত শোভ। পাইতে লাগিলেন । তিনি তখন বীরদৰ্পে, মৃতু্য কামনার একাকী দুর্গদ্বারাভিমুখে চলিলেন । নন্দ। আবার মাটীতে পড়িয়া কাদিতে লাগিল । একাকী দুর্গদ্বারে যাইতে দেখিলেন নৈ, বে বর্দীতে জয়ন্তীকে বেত্ৰাঘাত করিবার জন্য আন্ধঢ় করিয়াছিলেন, সেই বেদীতে দুই জন কে বসিয়। রহিন্ধছে । সেই মৃত্যুকাম ধোদ্ধারও ঈদয়ে ভয়সঞ্চার চইল । শশব্যস্তে নিকটে আসিয়। দেখিলেন--ত্রিশূল হুস্তে, গৈরিকভন্মরুদ্রাক্ষবিভূষিত। জয়ন্তীষ্ঠ প। ঝুলাই। বসিয়া আছে । তাহার পাশে সেইরূপ ভৈরবীবেশে শ্ৰী । রাজা তাহাদিগকে সেই বিধম সময়ে, তাহুর আসন্নকালে, সেই বেশে সেই স্থানে সমাসীন দেখিয়। কিছু ভীত হইলেন, বলিলেন, “তোমরা আমার এই আসন্নকালে এখানে আসিয়া কেন বসিয়া আছ ? তোমাদের এখনও কি মনস্কামন। সিদ্ধ হয় नोट्टे ?” জয়ন্তী ঈষৎ হাসিল। রাজ দেখিলেন, ত্র গদগদকণ্ঠ, সজললোচন-কথা কহিবে ইচ্ছা করিতেছে, تح؟ එ বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী কিন্তু কথ! কহিতে পারিতেছে না । রাজা তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিলেন । শ্ৰী কিছু বলিল না । রাজ তখন বলিলেন, “ঐ ! তোমারই অদৃষ্ট ফলিয়াছে। তুমিই আমার মৃত্যুর কারণ । তোমাকে ‘প্রিয়প্রাণহী বলিয়। আগে ত্যাগ করিয়া ভালই করিয়াছিলাম। এখন অদৃষ্ট ফলিয়াছে—আর কেন আসিয়াছ ?” শ্ৰী । আমার তাঙ্গুষ্ঠেয় কৰ্ম্ম আছে—তাহা করিতে আসিয়াছি । আজ তোমার মৃত্যু উপস্থিত, আমি তোমার সঙ্গে মরিতে আসিয়ছি । রাঙ্ক । সন্ন্যাসিনী কি আহুমুত হয় ? স্ত্রী। সন্ন্যাসীষ্ট তউক, আর গৃঙ্গষ্ট হউক, মরিবার অধিকার সকলেরই আছে । রাজা । সন্ন্যাসীর কন্ম নাই । তুমি কৰ্ম্ম তাগ করিয়াছ—তুমি আমার সঙ্গে মরিবে কেন ? আমার সঙ্গে নন্দ যাইবে, প্রস্থত চটয়াতৃে, তুমি সন্ন্যাসধৰ্ম্ম পালন কর । শ্রী মহারাজ ! সখি এত কাল অমাব উপর রাগ করেন নাই, তবে আঞ্জ রাগ করিবেন ন! ! আমি আপনার কাছে যে অপরাধ করিয়াছি—ত এষ্ট আপনার আর আমার আসয় মৃত্যুকালে বুঝিয়াছি। এই আপনার পারে মাথ। দিপ্ল, - এই বলিয়া স্ত্রী মঞ্চ হইতে নামিয়া, সীতারামের চরণের উপর পাঁড়য়া, উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল— “এই তোমার পারে হাত দিয়ু বলিতেছে -আমি আজি সন্ন্যাসিনী নই, তামার অপরাধ ক্ষমা করিবে ? আমায় আবার গ্রহণ করিবে ?" সীতা । তোমায় ত বড় আদরেই গ্রহণ করিয়া ছিলাম-এখন আর ত গ্রহণের সময় নাই । শ্ৰী । সময় আছে---আমার মরিবার সময় যথেষ্ট আছে । সীতা । তুমিষ্ট আমার মহিষী ৷ শ্ৰী রাজার পদধূলি গ্রহণ করিল ! জয়ন্তী বলিল, “আমি ভিখারিণী আশীৰ্ব্বাদ করিতেছি—আঞ্জ হইতে অনন্তকাল আপনার উভয়ে জয়যুক্ত হইবেন " সীতা । মা ! তোমার নিকট আমি বড় অপরাধী। তুমি যে আজ আমার তুর্দশা দেখিতে আসিস্নাছ, তাহা মনে করি না. তোমার আশীৰ্ব্বাদেই বুঝিতেছি, তুমি যথার্থ দেবী। এখন আমায় বল, তোমার কাছে কি প্রায়শ্চিত্ত করিলে তুমি প্রসন্ন হও ? ঐ শোন ! মুসলমানের কামান ! আমি ঐ কামানের মুখে এখনই এই দেহ সমর্পণ করিব । কি করিলে তুমি প্রসন্ন হও, তা এই সময়ে বল ।