পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8. বন্ধি ਾਂ শুঙ্গি | 航” দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ শ্বশুরবাড়ী চলিলাম

  • , ভগিনীর এই আশীৰ্ব্বাদ লইয়। আমি শ্বশুরবাড়ী ...যাইতেছিলাম। আমার শ্বশুরবাড়ী মনোহরপুর। আমার পিত্ৰালয় মহেশপুর। উভয় গ্রামের মধ্যে স্বশ ক্রোশ পথ, সুতরাং প্রাতে আহার করিয়া যাত্র করিয়াছিলাম, পৌছিতে পাচ সাত দণ্ড রাত্রি হইবে জানিতাম ।

তাই চক্ষে একটু একটু জল আসিয়াছিল। রাত্রিতে আমি ভাল করিয়া দেখিতে পাইব না, তিনি কেমন ; রাত্রিতে ভাল করিয়৷ দেখিতে পাইবেন না, আমি কেমন । মা বহু যত্নে চুল বাপিয়া দিয়াছিলেন । দশ ক্রোশ পথ যাইতে যাইতে গোপ খসিয়া যাইবে, চুল সব স্থানচ্যুত হইয়া যাইবে। পান্ধীর ভিতর ঘামিয়া বিত্র হইয়া যাইব । তৃষ্ণায় মুখের তাম্বলরাগ শুকাইয়। উঠিবে, শ্রাস্তিতে শরীর হতশ্ৰী হইয়। যাইবে । তোমরা হাসিতেছ? আমার মাথার দিব্য, হাসিও না, আমি ভরা যৌবনে C2 . বাড়ী যাইতেছিলাম । পথে কালাদাঘি নামে এক বৃহৎ দীঘিক আছে । তাহার জল প্রায় অধিক্রোশ । পাড় পৰ্ব্বতের ন্যায় উচ্চ । তাহার ভিতর দিয়া পথ । চারি পাশ্বে বটগাছ। তাহার ছায়। শীতল, দীঘির জল নীল মেঘের মত, দৃশ্ব অতি মনোহর। তথা মন্তস্যের সমাগম বিরল । ঘাটের উপর একখান দোকান আছে মাত্র । নিকটে ম্বে গ্রাম আছে, তাহারও নাম কালাদীঘি । দীঘিতে লোকে এক অসিতে ভয় করি ত । দস্থ্যতার ভয়ে এখানে দলবদ্ধ ন হইয়া লোক আসি ত না । এই জন্য লোকে ‘ডাকাতে কালদিঘি বলিত । দোকানদারকে লোকে দমুদিগের সহায় বলিভ । আমার সে সকল ভয় ছিল না । আমার সঙ্গে অনেক লোক—যোল জন বাহক, চারি জন দ্বারবান এবং অন্যান্ত লোক ছিল । যখন আমরা এইখানে পৌছিলাম, তখন বেলা আড়াই প্রহর । বাহকের বলিল, “আমরা কিছু জলটল না খাইলে আর যাইতে পারি ন৷ ” দ্বারবানের যারণ করিল, বলিল, “এ স্থান ভাল নয়।” বাহকের উত্তর করিল “আমরা এত লোক আছি—আমাদিগের ভয় কি ?” আমার সঙ্গের লোকজন ততক্ষণ কেহই কিছু খায় নাই, শেষে সকলেই বাহকদিগের মতে মত করিল। দীঘির ঘাটে বটতলায় আমার পান্ধী নামাইল । আমি হাড়ে জলিয়া গেলাম। " কোথায় কেবল ঠাকুরদেবতার কাছে মানিতেছি, শীঘ্ৰ পৌঁছি—কোথায় বেহাঁরা পান্ধী নামাইয়া হাটু উচু করিয়া ময়লা গাম্‌ছ ঘুরাইয়া বাতাস খাইতে লাগিল। কিন্তু ছি! স্ত্রীজাতি বড় আপনার বুঝে ! আমি যাইতেছি কাধে, তাহারা কাধে আমাকে বহিতেছে ; আমি যাইতেছি ভরা যৌবনে স্বামিসন্দর্শনে—তারা যাইতেছে খালি পেটে একমুঠ ভাতের সন্ধানে ; তারা একটু ময়লা গামছা ঘুরাইয়। বাতাস খাইতেছে বলিয়া আমার রাগ হইল ? ধিক্ ভরা যৌবন ! এই ভাবিতে ভাবিতে আমি ক্ষণেক পরে অমুভবে বুঝিলাম ষে, লোকজন তফাৎ গিয়াছে। আমি তখন সাহস পাইয়। অল্প দ্বার খুলিয়া দীঘি দেখিতে লাগিলাম ! দেখিলাম, বাহকেরা সকলে দোকনের সম্মুখে এক বটবৃক্ষতলে বসিয়া জলপান খাইতেছে। সেই স্থান আমার নিকট হইতে প্রায় দেড় বিঘা ৷ দেখিলাম যে, সম্মুখে অতি নিবিড় মেঘের ন্যায় বিশাল দীঘিকা বিস্তুত রহিয়াছে, চারিপাশ্বে পৰ্ব্বতশ্রেণীবত উচ্চ অথচ সুকোমল, হ্যামল তৃণাবরণশোভিত “পাড়"---পাড় এবং জলের মধ্যে বিস্তৃত ভূমিতে দীর্ঘ বটবৃক্ষশ্রেণী ; পাড়ে অনেক গোবৎস চরিতেছে । জলের উপব জলচর পক্ষিগণ ক্রীড়া করিতেছে—মুণ্ড মুই তরঙ্গহিল্লোলে স্ফটিকভঙ্গ হইতেছে- ক্ষুদ্রোৰ্ম্মি প্রতিঘাতে কদাচিং জলজ পুষ্প, পল এবং শৈবাল তুলিতেছে। দেখিতে পাইলাম যে, আমার দ্বারবানের। জলে নামিয়। স্নান করিতেছে —তাহাদের অঙ্গচালনে তাড়িত হইয়। গ্যামসলিলে শ্বেত মুক্তাহার বিক্ষিপ্ত হইতেছে । আকাশপানে চাহিয়৷ দেখিলাম, কি সুন্দর নীলিম, কি সুন্দর শ্বেতমেঘের স্তর, পরস্পরের মুক্তি বৈচিত্র্য—কিব। নভস্তলে উডঙীন ক্ষুদ্র পক্ষী সকলের নীলিমামধ্যে বিকীর্ণ কৃষ্ণবিন্দুনিচয় তুল্য শোভা । মনে মনে হইল, এমন কোন বিদ্যা নাই কি, যাতে মানুষ পার্থী হইতে পারে ? পাখী হইতে পারিলে আমি এখনই উড়িয়া চিরবাঞ্জিতের নিকট পৌছিতাম । আবার সরোবর প্রতি চাহিয়া দেখিলাম— এবার একটু ভীত হইলাম, দেখিলাম CN, বাহকেরা ভিন্ন আমার সঙ্গের লোক সকলেই এককালে স্বানে নামিয়াছে। সঙ্গে স্ত্রীলোক— এক জন শ্বশুরবাড়ীর, এক জন বাপের বাড়ীর, উভয়েই জলে । আমার মনে একটু ভয় হইল —কেহ নিকটে নাই—স্থান মন, ভাল করে মাই ।