পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইন্দির, 학" আমি অবসর হইয়া পথিপার্শ্বস্থ এক বৃক্ষতলে গুইয়া পড়িলাম । শুইবামাত্র নিদ্রাভিভূত হইলাম। নিদ্রায় স্বপ্ন দেখিলাম যে, মেঘের উপর বসিয়া ইন্দ্রালয়ে শ্বশুরবাড়ী গিয়াছি । স্বয়ং রতিপতি ষেন আমার স্বামী—রতিদেবী আমার সপত্নী। পারিজাত লইয়া তাহার সঙ্গে কোন্দল করিতেছি । এমন সময়ে কাহারও স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গিল। দেখিলাম, এক জন যুবাপুরুষ ; দেখিয়া বোধ হইল, ইতর অস্ত্যজজার্তায়, কুলীমজুরের মত, আমার হাত ধরিয়া টানিতেছে । সৌভাগ্যক্রমে একখান কাঠ সেখানে পড়িয়া ছিল ; তাহা তুলিয়া লইয়া ঘুরাইয়। সেই পাপিষ্ঠের মাথায় মারিলাম। কোথায় জোর পাইলাম, জানি না, সে ব্যক্তি মাথায় হাত দিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে পলাইল । কাঠখানা আর ফেলিলাম না, তাহার উপর ভর দিয়া চলিলাম। অনেক পথ ক্লাটিয়া, এক জন বৃদ্ধ স্ত্রীলোকের সাক্ষাং পাইলাম । সে একটা গাই তাড়াইয়া লইয়। যাইতেছিল । তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, যে, মহেশপুর কোথায় ? মনোহরপুরই বা কোথায় ? প্রাচীন বলিল, “ম, তুমি কে ? আমন সুন্দরী মেয়ে কি পথে-ঘাটে এক বেরুতে আছে ? আহা, মরি মরি, কি রূপ গা ! তুমি আমার ঘরে আইস ।” তাহার ঘরে গেলাম। সে আমাকে ক্ষুধাতুর দেখিয়৷ গাইটি দুইয়। একটু দুধ খাইতে দিল । সে মহেশপুর চিনিত । তাহাকে আমি বলিলাম যে, “তোমাকে টাকা দেওয়াইব—তুমি আমাকে সেখানে রাখিয়৷ আইস ।” তাহাতে সে কহিল যে, “আমার ঘর-সংসার ফেলিয়া ষাইব কি প্রকারে ?” তখন সে যে পথ বলিয়৷ দিল, আমি সেই পথে গেলাম । সন্ধা পর্য্যস্ত পথ হাটিলাম, তাহাতে অত্যন্ত শাস্তি বোধ হইল । এক জন পথিককে জিজ্ঞাসা করিলাম, “ঙ্গ গা, মহেশপুর এখান হইতে কত দূর ?" সে আমাকে দেখিয়। স্তম্ভিতের মত রহিল । অনেকক্ষণ চিন্তা করিয়া কহিল, “তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ ?" যে গ্রামে প্রাচীনা আমাকে পথ বলিয়া দিয়াছিল, আমি সেই গ্রামের নাম করিলাম। তাঁহাতে পথিক কহিল যে, “তুমি ভুলিয়াছ, বরাবর উণ্ট আসিয়াছ। মহেশপুর এখান হইতে এক দিনের পথ ।” আমার মাথা ঘুরিয়া গেল। আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “তুমি কোথায় যাইবে ?” সে বলিল, “আমি এই নিকটে গৌরীগ্রামে যাইব ।” আমি অগত্যা তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলাম । গ্রামমধ্যে প্রবেশ করিয়া সে আমাকে জিজ্ঞাস,ঃ করিল, “তুমি এখানে কাহার বাড়ী যাইবে ?” একটা গাছতলায় শয়ন করিয়া থাকিব ।” পথিক কহিল, “তুমি কি জাতি ?” আমি কহিলাম, “আমি কায়স্থ ।” না | সে কহিল," আমি ব্রাহ্মণ । তুমি আমার সঙ্গে । আইস । তোমার ময়ল মোট কাপড় বটে, কিন্তু আমি কহিলাম, “আমি এখানে কাহাকেও চিনি ; 3. $$. $. ዶሯ جي - তুমি বড়ঘরের মেয়ে । ছোটঘরে এমন রূপ হয় না " । ছাই রূপ ! ঐ রূপ রূপ শুনিয়া আমি জালাতন । হইয়া উঠিয়াছিলাম ; কিন্তু এ ব্রাহ্মণ প্রাচীন, আমি . র্তাহার সঙ্গে গেলাম । আমি সে রাত্রে ব্রাহ্মণের গৃহে দুই দিনের পর একটু বিশ্রাম লাভ করিলাম। সেই দয়ালু বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ যাজক, পৌরোহিত্য করেন । আমার বস্ত্রের অবস্থা দেখিয়া বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ম, তোমার কাপড়ের এমন দশা কেন ? তোমার কাপড় কি কেহ কাড়িয়া লইয়াছে ? আমি বলিলাম, “আজ্ঞা হঁ৷ ” তিনি যজমানদিগের নিকট অনেক কাপড় পাইতেন—দুইখান খাটে। বহরের চৌড় রাঙ্গা পেড়ে সাড়ী আমাকে পরিতে দিলেন । শাখার কড় তাহার ঘরে ছিল, তাহাও চাহিয়া লইয়া পরিলাম । এই সকল কাৰ্য্য সমাধা করিলাম—অতি কষ্টে । শরীর ভাঙ্গিয়া পড়িতেছিল । ব্রাহ্মণঠাকুরাণী দুটি ভাত দিলেন—খাইলাম । একটা মাছর দিলেন, পাতিয়া শুইলাম। কিন্তু এত কষ্টেও ঘুমাইলাম না । আমি যে জন্মের মত গিয়াছি,—আমার যে মরাই ভাল ছিল, কেবল তাহাই মনে পড়িতে লাগিল । यूभ श्झेल नl । প্রভাতে একটু ঘুম আসিল। আবার স্বপ্ন দেখিলাম। দেশিলাম, সম্মুখে অন্ধকারময় ধৰ্মমূৰ্ত্তি বিকট দংষ্ট্র রাশি প্রকটিত করিয়া হাসিতেছে । আর ঘুমাইলাম না। পরদিন প্রাতে উঠিয়া দেখিলাম ষে, আমার অত্যন্ত গা-বেদনা হইয়াছে । প ফুলিয়। উঠিয়াছে ; বসিবার শক্তি নাই । যত দিন না গায়ের বেদন৷ আরাম , হইল তত দিন আমাকে কাজে কাজেই ব্রাহ্মণের গৃহে থাকিতে হইল। ব্রাহ্মণ ও তাহার গৃহিণী আমাকে যত্ন করিয়া রাখিলেন, কিন্তু মহেশপুরে যাইবার কোন উপায় দেখিলাম না । ন, অথবা যাইতে স্বীকার করিল না । পুরুষে অনেকেই স্বীকৃত হইল—কিন্তু তাহাদিগের সহিত একাকিনী যাইতে ভয় করিতে লাগিল । ব্রাহ্মণও নিষেধ কোন স্ত্রীলোকেই পথ চিনিত ।