পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

§ মুখে ৰালিৎজাগিল । উজ্জিরুর্কিই দেখিল ন৷ —সুভাষিণী দেখিল । গৃহিণীকে বলিল, “আমি একটু আড়ালে সে সকল কথ। ওঁকে বলি গে। যদি উনি রাজি হন, তবে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইব ।” এই বলিয়া সুভাষিণী আমার হাত ধরিয়া টানিয়া একটা ঘরের ভিতর লইয়া গেল । সেখানে কেহ ছিল না । কেবল ছেলেটি মা’র সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াইয়া গেল । একখানা তক্তপোষ পাতা ছিল, সুভাষিণী তাহাতে বসিল, আমাকে হাত ধরিয়া টানিয়া বসাইল । বলিল, “আমার নাম না জিজ্ঞাসা করিতে বলিয়াছি । তোমার নাম কি.ভাই ?” “ভাই ।” যদি দাসীপনা করিতে পারি, তবে ইহার কাছে পারি, মনে মনে ইহা ভাবিয়। ইহার উত্তর করিলাম, “আমার দুইটি নাম—একটি চলিত, একটি অপ্রচলিত । যেটি অপ্রচলিত, তাহাই হাদিগকে বলিয়াছি ; কাজেই আপনার কাছে এখন তাহাই বলিব । আমার নাম কুমুদিনী ।” ছেলে বলিল, “কুলুডিনী ?" সুভাষিণী বলিল, “আর নাম এখন নাই শুনিলাম, জাতি কায়স্থ বটে ?” হাসিয়া বলিলাম, “আমরা কায়স্থ ।” সুভাষিণী বলিল, কার মেয়ে, কার বউ, কোথা বাড়ী, তাহা এখন জিজ্ঞাসা করিব না। এখন যাহা বলিব, তাহা শুন । তুমি বড়মামুষের মেয়ে, তা আমি জানিতে পারিয়াছি—তোমার হাতে, গলায় গহনার কালি আজও রহিয়াছে । তোমাকে দাসীপনা করিতে বলিব না— তুমি কিছু কিছু রাধিতে জান না কি ?” আমি বলিলাম, “জানি । লয়ে যশস্বিনী ছিলাম।” সুভাষিণী বলিল, “আমাদের বাড়ীতে আমরা সকলেই রাধি । ( মাঝখান থেকে ছেলে বলিল, ‘মা, আমি দাদি ) তবু কলকাতার একটা রেওয়াজমত পাচিকাও আছে । সে মাগীট বাড়ী যাইবে, ( ছেলে বলিল, “ত মা বালী দাই ) এখন মাকে বলিয়া তোমাকে তার জায়গায় রাখাইয়া দিব । তোমাকে রাধুনীর মত রাধিতে হইবে না। আমরা সকলেই রাধিব, তার সঙ্গে তুমি দুই এক দিন রাধিবে । কেমন রাজি ?” ছেলে বলিল, “আজি ? ও আজি ?” म] বলিল, “ੁਝੋ পাঞ্জি r ছেলে বলিল, “আমি বাবু, বাবা পাজি ।” २मृ=9२ ব্লাল্লায় আমি পিত্র SS “আমন কথা বলুতে নাই বাবা!" এই কথ। ছেলেকে বলিয়া আমার মুখপানে চাহিয়া হাসিয়া ; সুভাষিণী বলিল, “নিত্যই বলে ।” আমি বলিলাম, “আপনার কাছে আমি দাসীপন করিতেও রাজি " “আপনি বল কেন ভাই ? বল ত মাকে বলিও । সেই মাকে লইয়। একটু গোল আছে। তিনিও একটু খিটখিটে—তাকে বশ করিয়া লইতে হইবে, তা তুমি পারিবে -আমি মানুষ চিনি। কেমন: রাজি ?” “...: আমি বলিলাম, “রাজি ন হইয়া কি করি ? আমার আর উপায় নাই।” আমার চক্ষুতে আবার জল আসিল । সে বলিল, “উপায় নাই কেন ? রও ভাই, আসল কথা ভুলিয়া গিয়াছি।” স্বভাষিণী ভো করিয়া ছুটিয়া মাসীর কাছে গেল —বলিল, “হঁ। গ, ইনি তোমাদের কে গা ?” ঐটুকু পর্যন্ত আমি শুনিতে পাইলাম । তার মালী কি বলিলেন, তা শুনিতে পাইলাম না । বোধ হয়, তিনি যতটুকু জানিতেন, ভাহাই বলিলেন । বলা বাহুল্য, তিনি কিছুই জানিতেন না, পুরোহিতের কাছে যতটুকু শুনিয়াছিলেন, ততটুকু পৰ্য্যস্ত। ছেলেটি এবার মার সঙ্গে যায় নাই—আমার হাত লইয়া খেলা করিতেছিল । আমি তাহার সঙ্গে কথা কহিতেছিলাম। সুভাষিণী ফিরিয়া আসিল । ছেলে বলিল, “মা, রাঙ্গা হাত দেখ ।” সুভাষিণী হাসিয়া বলিল, “আমি তা অনেকক্ষণ দেখিয়াছি।” আমাকে বলিল, “চল, গাড়ী তৈয়ার । না যাও, আমি ধরিয়া লইয়া যাইব । কিন্তু যে কথাটা বলিয়াছি—মাকে বশ করিতে হুইবে ।” সুভাষিণী আমাকে টানিয়া লইয়া গিয়া গাড়ীতে তুলিল । পুরোহিত মহাশয়ের দেওয়া রাঙ্গা-পেড়ে কাপড় দুইখানির মধ্যে একখানি আমি পরিয়াছিলাম —আর একখানি দড়ীতে শুকাইতেছিল, তাহ লইয়া যাইতে সময় দিল না । তাহার পরিবর্তে আমি স্বভাষিণীর পুত্রকে কোলে লইয়া মুখচুম্বন করতে করিতে চলিলাম । * ..." সপ্তম পরিচ্ছেদ কালির বোতল মা—সুভাষিণীর শাশুড়ী । তাহাকে বশ করিতে হইবে—মুতরাং গিয়াই তাহাকে প্রণাম করিয়া