পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই বলিয়া সুভাষিণী হারাণী বলিয়া বিকে ডাকিল। হারাণী সুভাষিণীর খাস বি । হারাণী আসিল । মোটাসোটা, কাল কুচকুচে, চল্লিশ পার, হাসি মুখে ধরে না, সকলতাতেই হাসি। একটু তিরবিরে। সুভাষিণী বলিল, “একবার তাকে ডেকে পাঠাও।” হারাণী বলিল, “এখন অসময়ে আসিবেন কি ? আমি ডাকিয়া পাঠাই বা কি করিয়া ?” সুভাষিণী ভ্রভঙ্গ করিল, বলিল, “যেমন ক’রে পারিস-ডাক গে যা।” হারাণী হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল । আমি সুভাষিণীকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “ডাকিতে পাঠাইলে কাকে ? তোমার স্বামীকে ?” - স্ব । না ত কি পাড়ার মুদি মিন্‌ষেকে এই রাত্রে ডাকিতে পাঠাইব ? আমি বলিলাম, “বলি, আমায় উঠিয়া যাইতে হইবে কি না, তাই জিজ্ঞাসা করিতেছিলাম।” সুভাষিণী বলিল, “না। এইখানে বসিয়া থাক।” সুভাষিণীর স্বামী আসিলেন । বেশ সুন্দর পুরুষ । তিনি আসিয়াই বলিলেন, “তলব কেন ?” তার পর আমাকে দেখিয়া বলিলেন, “ইনি কে * স্বভাষিণী বলিল, “ওঁর জন্যই তোমাকে ডেকেছি । আমাদের রাধুনী বাড়ী যাবে, তাই ওঁকে তার জায়গায় রাখিবার জন্য আমি মাসীর কাছ হইতে এনেছি । কিন্তু মা ওঁকে রাখিতে চান না ।" র্তার স্বামী বলিলেন, “কেন চান না ?" স্থ । সমত্ত বয়স । স্বভার স্বামী একটু হাসিলেন । বলিলেন, “তা আমায় কি করিতে হইবে ?" স্থ । ওঁকে রাখিয়ে দিতে হবে । স্বামী । কেন ? স্বভাষিণী, তাহার স্বামীর নিকট গিয়া, আমি ন৷ শুনিতে পাই, এমন স্বরে বলিলেন, “আমার হুকুম।” কিন্তু আমি শুনিতে পাইলাম। র্তার স্বামীও তেমনই স্বরে বলিলেন, “ষে আজ্ঞা ।” স্বভা। কখনৃ পারিবে ? স্বামী । খাওয়ার সময় । তিনি গেলে আমি বলিলাম,—“উনি যেন রাখাইলেন, কিন্তু এমন কটু কথা সয়ে আমি থাকি কি প্রকারে ?” *...* সুভাষিণী । লে পরের কথা পরে হবে । গঙ্গা ত অার এক দিনে বুজিয়া যাইবে না । " రి রাত্রি নয়টার সময়, সুভাষিণীর স্বামী (তার নাম রমণবাবু) আহার করিতে আসিলেন। র্তার মা কাছে গিয়া বসিল । সুভাষিণী আমাকে টানিয়া লইয়া চলিল ! বলিল, “কি झुम्ल, দেখি গে চল !" আমরা আড়াল হইতে দেখিলাম, নানাবিধ ব্যঞ্জন রান্না হইয়াছে, কিন্তু রমণবাবু একবার একটু করিয়া মুখে দিলেন, আর সরাইয়। রাখিলেন। কিছুই খাইলেন না। র্তার মা জিজ্ঞাস করিলেন, “কিছুই ত খেলি না বাবা ?” পুত্র বলিল, “ও রান্না ভূত-প্রেতে খেতে পারে না ; বামুন ঠাকুরাণীর রান্না খেয়ে খেয়ে অরুচি জন্মে গেছে । মনে করেছি, কাল থেকে পিসিমার বাড়ী গিয়ে খেয়ে আসব ।” তখন গৃহিণী ছোট হয়ে গেলেন। বলিলেন, “তা করতে হবে না যাদু ! আমি আর রাধুনী আনাইতেছি ।” বাবু হাত ধুইয়া উঠিয় গেলেন। দেখিয়া স্বভাষিণী বলিল, “আমাদের জন্য ভাই ওঁর খাওয়া হুইল না । তা না হোক—কাজটা হইলে হয় ।” আমি অপ্রতিভ হইয়া কি বলিতেছিলাম, এমন সময় হারাণী আসিয়া সুভাষিণীকে বলিল, “তোমার শাশুড়ী ডাকিতেছেন।” এই বলিয়া সে খামক আমার দিকে চাহিয়া হাসিল । আমি বুঝিয়াছিলাম, হাসি তার রোগ, সুভাষিণী শাশুড়ীর কাছে গেলে, আমি আড়াল হইতে শুনিতে লাগিলাম । সুভাষিণীর শ্বাশুড়ী বলিতে লাগিল, “সে কায়েত ছুড়টে চলে গেছে কি ?” সুভা । ন}, তার এখনও খাওয়া হয় নাই বলিয়া যাইতে দিই নাই । গৃহিণী বলিলেন, “সে রাধে কেমন ?” স্বভা । তা জানি না । গৃ। আজ না হয় সে নাই গেল। কাল তাকে দিয়া দুই একখানা রাধিয়ে দেখিতে হুইবে । সুভ। তবে তাকে রাখি গে । এই বলিয়া সুভাষিণী আমার কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ভাই, তুমি রাধিতে জান ত ? আমি বলিলাম, “জানি । তা ত বলেছি।” সুভা । ভাল রাধিতে পার ত? আমি । কাল খেয়ে দেখে বুঝতে পারিবে । স্বভা ৷ যদি অভ্যাস না থাকে, তবে বল, আমি কাছে বসিয়া শিখিয়ে দিব । আমি হাসিলাম । বলিলাম, পরের কথা পরে হবে ।”