পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইন্দির বুড়ী গিয়া মুখ দেখিল । তখন সে উচ্চৈঃস্বরে কাদিতে লাগিল । আমি বুঝাইতে চেষ্টা করিলাম যে, আমি চুলে মাখাইতে বলিয়াছিলাম, মুখে মাখাইতে বলি নাই। বুড়ী তাহা বুঝিল না। অামার মুণ্ডভোজনের জন্য বম পুনঃ পুনঃ নিমন্ত্রিত হইতে লাগিলেন, শুনিয়া সুভাষিণীর মেয়ে শ্লোক পড়িল— “যে ডাকে যমে, তার পরমাই কমে । তার মুখে পড়ুক ছাই, বুড়ী ম’রে যা ন ভাই ॥” শেষে আমার সেই তিন বৎসরের জামাত। একখানি রাধিবার চেলাকাঠ লইয়া গিয়া বুড়ীর পিঠে বসাইয়া দিল । বলিল, “আমাল চাচুলী ।” তখন “বুড়ী আছড়াইয়। পড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে কঁদিতে লাগিল । সে যত কঁাদে, আমার জামাই তত হাততালি দিয়! নাচে, আর বলে, “আমার চচুলী ।" আমি গিয়। তাকে কোলে নিয়া, তার মুখচুম্বন করিলে তবে থামিল । দশম পরিচ্ছেদ আশার প্রদীপ সেই দিন বৈকালে সুভাষিণী আমার হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়। গিয়া নিভৃতে বসাইল । বলিল, “বেহান, তুমি সেই কালদীঘির ডাকাতির গল্পটি বলিবে বলিয়াছিলে—আজিও বল নাই । তাজ বল না শুনি " আমি অনেকক্ষণ ভাবিলাম ! শেষ বলিলাম, "স আমারই হতভাগ্যের কথা । আমার বাপ বড়মানুষ, এ কথা বলিয়াছি । তোমার শ্বশুরও বড়মানুষ— কিন্তু তুলনায় কিছুই নহেন। আমার বাপ আজিও আছেন—তাহার সেই অতুল ঐশ্বৰ্য্য এখনও আছে, আজিও তাহার হাতীশালে হাতী বাধা । আমি ষে রাধিয়া খাইতেছি, কালাদীঘির ডাকাইতি তাহার । কারণ " এই পর্যন্তু বলিয়া দুই জনেই চুপ করিয়া রছিলাম। স্বভাষিণী বলি, “তোমার স্বদি বলিতে কষ্ট হয়, তবে নাই বলিলে ; আমি না জানিয়া শুনিতে চাহিয়াছিলাম।” : আমি : }་ཀས, “সমস্তই বলিব, তুমি আমাকে ষে স্নেহ কর, 'মার ষে উপকার করিয়াছ, তাহাতে বলিতে কষ্ট নাই ।” আtি. Hর নাম বলিলাম না, ধাপের বাড়ীর নাম বলির o স্বামীর বা শ্বশুরের নাম বলিলাম না, শ্বশু প্রামের নাম বলিলাম না, আর সমস্ত ।। २झ-७० ۵ز বলিলাম। শুনিতে শুনিতে সুভাষিণী কঁাদিতে লাগিল । আমিও যে বলিতে বলিতে মধ্যে মধ্যে র্কাদিয়া ফেলিলাম, তা বল। বাহুল্য | সে দিন এই পর্য্যস্ত। পরদিন সুভাষিণী আমাকে আবার নিভৃতে লইয়। গেল । বলিল, “বাপের নাম বলিতে হইবে।” তাহা বলিলাম । “র্তার বাড়ী যে গ্রামে, তাহাও বলিতে হইবে ।" তাও বলিলাম । সু। ডাকঘরের নাম বল । আমি ডাকঘর ! ডাকঘরের নাম ডাকঘর । স্বভা ৷ দূর পোড়ারমুখী ! যে গ্রামে ডাকঘর, তার নাম । আমি । তা ত জানি না । ডাকঘরই জানি । সু । বলি, যে গ্রামে তোমাদের বাড়ী, সেই গ্রামেই ডাকঘর আছে, না অন্য গ্রামে ? অামি । তা ত জানি না । সুভাষিণী বিষণ্ণ হইল। আর কিছু বলিল না। পরদিন সেইরূপ নিভৃতে বলিল, “তুমি বড়ঘরের মেয়ে, কত কাল আর রাধিয়া খাইবে ? তুমি গেলে আমি বড় কাদিব।--কিন্তু আমার মুখের জন্ত তোমার ক্ষতি করি, এমন পাপিষ্ঠ। আমি নই। আমরা পরামর্শ করিয়াছি—” কথ। শেষ না হইতে হইতেই আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “আমরা কে কে ?” স্থ । আমি আর র-বাৰু। রবাবু কি ন রমণবাবু। এইরূপে সুভাষিণী আমার কাছে স্বামীর নাম ধরিত। তখন সে বলিতে লাগিল, “পরামর্শ করিয়াছি যে, তোমার বাপকে পত্র লিখিব যে, তুমি এইখানে আছ, তাই কাল ডাক ঘরের কথা জিজ্ঞাসা করিতেছিলাম ।” আমি । তবে সকল কথা তাহাকে বলিয়াছ ? স্ব। বলিয়াছি—দোষ কি ? আমি । দোষ কিছু না । তার পর ? স্থ । এখন মহেশপুরেই ডাকঘর আছে, বিবেচনা করিয়া পত্র লেখা হইল । আমি । পত্র লেখা হইয়াছে না কি ? 夜 考11 আমি আহলাদে আটখানা হইলাম। দিন গণিতে লাগিলাম, কত দিনে পত্রের উত্তর আসিবে ? কিন্তু উত্তর আসিল না। আমার কপাল পোড়া— মহেশপুরে কোন ডাকঘর ছিল না । তখন গ্রামে গ্রামে ডাকঘর হয় নাই । ভিন্ন গ্রামে ডাকঘর ছিল