পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০ — আমি রাজার দুলালী -অত খবর রাখিতাম না । ডাকঘরের ঠিকানা ন পাইয়া, কলিকাতার বড় ডাকঘরে রমণবাবুর চিঠি খুলিয়া ফেরত পাঠাইয়৷ দিয়াছিল। - আমি আবার কাদিতে আরম্ভ করিলাম । কিন্তু রবাবু—নী ছোড় । সুভালিণী আসিয়া আমাকে বলিল, “এখন স্বামীব নাম বলিত হইবে ।” আমি তখন লিখিতে শিখিয়াছিলাম স্বামীর নাম লিথিয়া দিলাম । পরে জিজ্ঞাস হইল, “শ্বশুরের নাম ?” তাও লিখিলাম । “গ্রামের নাম ?" তাও বলিয়৷ দিলাম । “ডাকঘরের নাম ?” বলিলাম, “ত কি সানি ?" শুনিলাম, রমণবাবু সেখানে ও পত্র লিখিলেন । কিন্তু কোন উত্তর আসিল না। বড় বিষণ্ণ হইলাম । কিন্তু একটা কথ। তখন মনে পড়িল আমি আশায় বিহবল হইয় পত্র লিখিতে বার করি নাই ; এখন আমার মনে পড়িল, ডাকাতে আমাকে কাড়িয়। লইয়া গিয়াছে ; আমার কি জাতি আছে ? এই ভাবিয়া, শ্বশুর, স্বামী অামাকে প্রত্যাখ্যান করিবেন সন্দেহ নাই । সে স্থলে পত্র লেখা ভাল হয় নাই । এ কথা শুনিয়। স্বভাষিণী চুপ করিয়া রহিল। আমি এখন বুঝিলাম যে, আমার আর ভরস নাই । আমি শয্যা লইলাম । একাদশ পরিচ্ছেদ 顧 একটা চোর। চাহনি এক দিবস প্রাতে উঠিয়া দেখিলাম, কিছু ঘটার আয়োজন । রমণবাবু উকীল । তাহার এক জন বড় মোয়াক্কেল ছিল । দুই দিন ধরিয়া শুনিতেছিলাম, তিনি কলিকাতায় আসিয়াছেন । রমণবাবু ও তাহার পিতা সৰ্ব্বদ। তাহার বাড়ীতে যাতায়াত করিতেছিলেন। তাহার কারণ এই যে, তাহার সহিত কারবারঘটিত কিছু সম্বন্ধ ছিল । আজ শুনিলাম, তাহাকে মধ্যাহ্নে আহারের নিমন্ত্রণ করা হইয়াছে। তাই পাকশাকের বিশেষ আয়োজন হইতেছে। রান্না ভাল চাই-অতএব পাকের ভারটা আমার উপর পড়িল। যত্ন করিয়া পাক করিলাম। আহারের স্থান অন্তঃপুরেই হইল। রামরামবাবু, রমণবাবু ও বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী

নিমন্ত্রিত ব্যক্তি আহারে বসিলেন । পরিবেশনের ভার বুড়ীর উপর –আমি বাহিরের লোককে কখন পরিবেশন করি না। বুড়ী পরিবেশন করিভেছে—আমি রান্নাঘরে অাছি —এমন সময়ে একটা গোলযোগ উপস্থিত হইল । রমণবাবু বুলীকে বড় ধমকাইতেছিলেন । সেই সময়ে একজন রান্নাঘরের ঝি ত্যাসিয়া বলিল, “ইচ্ছে ক’রে লোককে অপ্রতিভ করা ৷" জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি হয়েছে ?" ঝি বলিল, “বুড়া দাদ। বাবুর বাটাতে ( বুড়ী ঝি, দাদাবাবু বলিত )—বৃটিতে ডাল দিতেছিল—তিনি ত৷ দেখেও উন্থ উহু ক'রে হাত বাড়িয়ে দিলেন, সব ডাল হাতে পড়িয় গেল " আমি এ দিকে শুনিতেছিলাম, রমণবাবু বামনীকে ধমকাইতেছেন—“পরিবেশন করতে জান ন ত এস কেন ? অার কাকেও থাল দিতে পার নি ?” রামরামব।ধু বলিলেন, “তোমার কৰ্ম্ম নয় । কুমোকে পাঠাইলা দাও গির। " গৃহিণী সেখানে নাই, বরণ করে কে ? এ দিকে খোদ কৰ্ত্তার হুকুম অমাতাই বা করি কি প্রকারে ? গেলেই গিরী রাগ করিবেশ, তা ও জানি । গুই চারিবার বুড়াকে বুঝাইলাম—বলিলাম, “একটু সাবধান হয়ে দি ও পুইও”—কিন্তু সে ভয়ে আর ঘাইতে স্বীকৃত হইল না । কাজেই আমি হাত ধুইর, মুখ মুছিয়। পরিঙ্কত হুইয়া, কাপড়খান। গুছাইয় পরিয়া, একটু ঘোমটা টানি । পরিবেশন করিতে গেলাম ; কে জানে সে, এমন কাণ্ড বধিবে ? অামি জানি যে, আমি বড় বুদ্ধিমতী —জানি তাম না। যে, স্বভাষিণী আমার এক ভাটে বেটিতে পারে, আর এক হাটে কিলিতে পারে । আমি অবগুণ্ঠনবতা, কিন্তু ঘোমটার স্ত্রীলোকের স্বভাব ঢাকা পড়ে না । ঘোমটার ভিতর হইতে একবার নিমন্ত্রিত বাবুটিকে দেখিয়া লইলাম। দেখিলাম, তাহার বরস ত্রিশ বৎসর্গ বোধ হয় । তিনি গৌরবণ এবং অত্যন্ত স্বপুরুষ ; তাহাকে দেখিয়াই রমণীমনোহর বলিয়া বোধ হইল। আমি বিদ্যুচ্চমকিতের ন্যায় একটু অন্তমনস্ক হইলাম । মাংসের পাত্র লইয়। একটু দাড়াইয়৷ রহিলাম। মামি ঘোমটার ভিভর হইতে তাহাকে ుక সময়ে ভিনি মুখ তুলিলো—দেখিতে পাঠলেন যে, আমি ঘোমটার ভিতর হইতে র্তাহার پانی চাহিয়! আছি । আমি ত জানিয়া শুনিয়া ইচ্ছাপূৰ্ব্বক তাহার প্রতি কোন প্রকার কুটিল কটাক্ষ করি নাই । তত