পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলি । তুমি খুব বুদ্ধিমতী, তাহা বুঝিয়াছি । তুমি কি পরামর্শ দাও, শুনি । আমি । বল দেখি । তিনি । আমাকে বাড়ী যাইতে হুইবে । আমি । বুঝিলাম । তিনি । বাড়া গেলে শীঘ্ৰ ফিরিতে পারিব না । আমি । তাও শুনিতেছি । - তিনি । তোমাকে ফেলিয়া বাইতে পারিব না । ত হ’লে মরিয়া যাইব । প্রাণ আমার কণ্ঠীগত, তবু আমি এক রাশি হাসি হাসিয়া বলিলাম, “পোড়া কপাল! ভাত ছড়াইলে কাকের অভাব কি ?” তিনি । কোকিলের দুঃখ কাকে যার না । আমি তোমাকে লষ্টয়া যাইব । তামি । কোথায় রাখিবে ? কি পরিচয়ে রাখিবে ? তিনি। একটা ভারি জয়চুরি করিব । তাই কা’ল সমস্ত দিন ভাবিয়াছি । তোমার সঙ্গে কথা কহি নাই । আমি । বলিলে যে, এই ইন্দিরা, রামরাম দত্তের বাড়ীতে খুজিয়। পাইয়াছি ? তিনি । অ৷ সৰ্ব্বনাশ ! তুমি কে ? স্বামী মহাশয়, নিস্পন্দ হইয়া, দুই চক্ষের তারা উপর দিকে তুলিয়া, আমার মুখপানে চাহিদা রহিলেন । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কেন, কি হইয়াছে ?” তিনি ৷ ইন্দির নাম জানিলে কি প্রকারে ? আর তামার মনের গুপ্ত অভিপ্রায় বা জানিলে কি প্রকারে ? তুমি মানুষ না কোন মায়াবিনী ? আমি । সে পরিচয় পশ্চাৎ দিব । এখন আমি তোমাকে পালটা জেরা করিব, স্বরূপ উত্তর দাও । তিনি ! ( সভয়ে ) বল । আমি। সে দিন তুমি আমাকে বলিয়াছিলে যে, তোমার স্ত্রীকে পাওয়া গেলেও তুমি গ্রহণ করিবে না, তাঁহাকে ডাকাতে কাড়িয়া লইয়া গিয়াছে ; তোমার জাতি বাইবে । আমাকে ইন্দির বলিয়া ঘরে লইয়া গেলে সে ভয় নাই কেন ? তিনি। সে ভয় নাই ? খুবই আছে। তবে তাহাতে আমার প্রাণের দায় ছিল না—এখন আমার প্রাণ যায়—জাতি বড়, না প্রাণ বড় ? আর সেটাও তেমন বিষম সৃঙ্কট নয়। ইন্দিরা যে জাতিভ্ৰষ্ট হুইয়াছিল, এমন কথা কেহ বলে না। কালাদীঘিতে - *ふ塁る s ইন্দির তিনি। তবে তোমাকে সকল रूष। ভাঙ্গিয়া"#খাস্থার ডাকাতি করিয়াছিল, উ । তাহার একরার করিয়াছে। । ইন্দিরার গহনগাটি মাত্র কাড়িয়া" ছাড়িয়া দিয়াছে। কেবল এখন সে কোথায়ী ဂ္ယီဒီး : কি হইয়াছে, তাই কেহ জানে না ; পাওয়া গেলে একটা কলঙ্ক শূন্ত বৃত্তান্ত অনায়াসেই করিয়ী বল। যাইতে পারে । ভরসা করি, যাহা লিখিয়া দিবেন, তাঁহাতে তাহার পোষকতা করিবে । তাতেও যদি কোন কথা উঠে, গ্রামে কিছু সামাজিক দিলেই গোল মিটিবে । আমাদের টাকা আছে— টাকায় সবাইকে বশীভূত করা যায় । , আমি । যদি সে আপত্তি কাটে, তবে অার আপত্তি কি ? তিনি। গোল তোমাকে লষ্টয় । তুমি জাল ইন্দিরা নদি ধরা পড় ? আমি । তোমাদের বাটীতে আমাকেও কেহ চেনে না, আসল ইন্দিরাকেও কেহ টেনে না, কেন না, কেবল একবার বালিকাবয়সে তাহকে তোমরা দেখিয়াছিলে, তবে ধরা পড়িব কেন ? তিনি । কথায় --নূতন লোক গিয়া জানালোক সাজিলে সহজে কথায় ধরা পড়ে । আমি । তুমি না হয়, আমাকে সব শিখাইয়৷ পড়াইয়া রাখিবে । তিনি । তা ত মনে করিয়াছি, কিন্তু সব কথা ত শিখান যায় না । মনে কর, যদি যে কথা শিখাইতে মনে হয় নাই, এমন কথা পড়ে, তবে ধরা পড়িবে। মনে কর, কখন আসল ইন্দির আসিয়া উপস্থিত হয় উভয়ের মধ্যে বিচারকালে, পূৰ্ব্বকথা জিজ্ঞাসাবাদ হইলে তুমিই ধরা পড়িবে। আমি একটু হাসি হাসিলাম । এমন অবস্থায় হাসিট। আপনি আসে । কিন্তু এখন আমার প্রকৃত পরিচয় দিবার সময় হয় নাই । আমি হাসিয়া বলি লাম, “আমায় কেহ ঠকাইতে পারে না। তুমি এইমাত্র আমায় জিজ্ঞাসা করিতেছিল যে, আমি মানুষ কি মারাবিনী । আমি মাসুৰী নহি, (তিনি শুনিয় শিহরিয়া উঠিলেন ) আমি কি, তার পরে বলিব এখন ইহাই বলিব যে, আমাকে কেহু ঠকাইতে পারে না ।” স্বামী মহাশয় স্তম্ভিত হইলেন। তিনি বুদ্ধিমান কৰ্ম্মঠ লোক । নহিলে এত অল্পদিনে এত টাকা রোজগার করিতে পারিতেন না । মামুষটা বাহিরে একটু নীরস,—কাঠ কাঠ রকম, পাঠক তাহা বুঝিয়া থাকিবেন–কিন্তু ভিতরে বড় মধুর, বড় কোমল, বড়