পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&3 স্নেহশালী ; কিন্তু রমণবাবুর মত, এখনকার ছেলেদের মত উচ্চশিক্ষিত নহেন । তিনি ঠাকুর-দেবতা খুব মানিতেন । নানা দেশ ভ্রমণ করিয়া ভূত, প্রেত, ডাকিনী, যোগিনী, মায়াবিনী প্রভৃতির গল্প শুনিয়াছিলেন । সে সকল একটু বিশ্বাস করিতেন । তিনি আমার দ্বারা যেরূপ মুগ্ধ হইয়াছিলেন, তাহাও তাহার এই সময়ে স্মরণ হইল ; যাহাকে আমার অসাধারণ বুদ্ধি বলিতেন, তাহাও স্মরণ হইল। যাহা বুঝিতে পারেন নাই, তাহাও স্মরণ হইল। অতএব আমি যে বলিলাম, আমি মানুষী নহি, তাহাতে র্তাহার একটু বিশ্বাস হইল। তিনি কিছুকাল স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন । কিন্তু তার পর নিজ বুদ্ধিবলে, সে বিশ্বাসটুকু দুর করিয়া বলিলেন, “আচ্ছা, তুমি কেমন মায়াবিনী, আমি যা জিজ্ঞাসা করি, বল দেখি ?” অামি । জিজ্ঞাসা কর । তিনি । তামার স্ত্রীর নাম ইন্দির, জান, তার বাপের নাম কি ? অামি ৷ চরমোহন দত্ত । তিনি । তাহার বাড়ী কোথায় ? আমি । মহেশপুর । তিনি । তুমি কে ! ! ! অামি । ত| ত বলিয়াছি যে, পরে বলিব । মাচুষ নষ্ট । তিনি । তুমি বলিয়াছিলে, তোমার বাপের বাড়ী কালাদীঘি । কালাদীঘির লোক এ সকল জানিলে জানিতে পারে । এইবার বল, হরমোহন দত্তের বাড়ীর সদর দরওয়াজ কোন মুখ ? আমি। দক্ষিণমুখ । একটা বড় ফটকে দুই পাশে দুইটা সিংহী । তিনি । তার কয় ছেলে ? আমি ) এক । তিনি । নাম কি ? আমি । বসন্তকুমার । তিনি । তার কয় ভগিনী । আমি । আপনার বিবাহের সময় ষ্টেটি ছিল । তিনি । নাম কি ? আমি । ইন্দির। তার কামিনী । তিনি। তার বাড়ীর নিকট কোন পুকুর আছে ? আমি । আছে। নাম দেবীদীঘি, তাতে খুব পদ্ম ফুটে । তিনি । হুঁ, তা দেখিয়াছিলাম । তুমি কখন মহেশপুরে ছিলে ? তার বিচিত্র কি ? তাই এত বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী জান । আর গোটাকতক কথা বললেন। ईनिद्रांद्र বিবাহে সম্প্রদান কোথায় হয় ? আমি । পূজার দালানের উত্তরপশ্চিম কোণে । তিনি। কে সম্প্রদান করে ? আমি । ইন্দিরার খুড়া কৃষ্ণমোহন দত্ত। তিনি । স্ত্রী-আচারকালে এক জন আমার বড় জোরে কান মলিয়া দিয়াছিল । তার নাঙ্গ আমার মনে আছে । বল দেখি তার নাম ? আমি । বিন্দুঠাকুরাণী—বড় বড় চোখ, রাঙ্গ৷ রাঙ্গা ঠোঁট, নাকে ফাদি নথ । তিনি। ঠিক ! বোধ হয়, তুমি বিবাহের দিন উপস্থিত ছিলে। তাদের কুটুম্ব নও ত? আমি । কুটুম্বের চেয়ে, চাকরাণী কি রাধুনীর মেয়ের জানা সম্ভব নয়, এমন দুই একটা কথা জিজ্ঞাসা কর না ? তিনি। ইন্দিরার বিবাহ কবে হইয়াছিল ? আমি -- সালে বৈশাখ মাসের ২৭ তারিখে শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশীতে । তিনি চুপ করিয়া ভাবিলেন । তার পর বলিলেন, “আমায় অভয় দাও, আমি আর দুইটা কথা জিজ্ঞাসা করিব ?" আমি । অভয় দিতেছি, ষল । তিনি। বাসরঘরে সকলে উঠিয়া গেলে, আমি ইন্দিরাকে নির্জনে একটি কথা বলিয়াছিলাম, সে তাহার উত্তর দিয়াছিল । কি কথা সে, বল দেখি ? বলিতে আমার একটু বিলম্ব হইল। কারণ, সে কথাটা মনে করিতে আমার চক্ষে জল আসিয়াছিল । আমি তাহ সামলাইতেছিলাম । তিনি বলিলেন, “এইবার বোধ হয় ঠকিলে ! বাচিলাম—তুমি মায়াবিনী নয় !” আমি চক্ষের জল চক্ষের ভিতর ফেরৎ দিয়া বলিলাম, “তুমি ইন্দিরাকে জিজ্ঞাসা করিলে, ‘বল দেখি আজ তোমার সঙ্গে আমার কি সম্বন্ধ হুইল? ইন্দির বলিল, “আজ হইতে তুমি আমার দেবতা হইলে, আমি তোমার দাসী হইলাম। এই ত গেল একটা প্রশ্ন | আর একটা কি ?” তিনি । আর জিজ্ঞাসা করিতে ভয় করিতেছে । আমি বুঝি বুদ্ধি হারাইলাম । তবু বল। ফুলশয্যার দিন ইন্দিরা তামাসা করিয়া আমাকে গালি দিয়াছিল, আমিও তার কিছু সাজা দিয়াছিলাম। বল দেখি, সে কথাগুলি কি ? আমি । তুমি ইন্দিরার এক হাত ধরিয়া আর হাত কঁাধে দিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে, “ইন্দির, বল দেখি, আমি তোমার কে ? তাতে ইন্দির উত্তর