পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইন্দিরা খুব ছুটিয়া আসিলাম । তিনি একটু প্রকৃতিস্থ হইলেই আমাদের পিছু পিছু ছুটলেন ; কিন্তু অন্ধকার, পথ অচেনা, একটা চৌকাঠ বাধিয়া একটা ছোট রকম আছাড় খাইলেন । আমরা নিকটেই ছিলাম, দুষ্ট জনে দুই দিক্ হইতে হাত ধরিয়া তুলিলাম। কামিনী চুপি চুপি বলিল, “আমরা বিদ্যাধরী, তোমার রক্ষার জন্য সঙ্গে সঙ্গে বেড়াইতেছি ।” এই ব’লয়া তাকে টানিয়া আনিয়া আমার শয্যাগৃহে উপস্থিত করিলাম। সেখানে আলো ছিল । তিনি আমাদের দেখিয়া বলিলেন, “এ কি ? এ ত কামিনী, আর এ ত কুমুদিনী।” কামিনী রাগে দশখানা হইয়া বলিল, “আঃ পোড়াকপাল ! এই বুদ্ধিতে টাকা রোজগার করেছ ? কোদাল পাড় না কি ? এ কুমুদিনী না-ইন্দিরে—ইন্দিরে- ইন্দিরে !! তোমার পরিবার। আপনার পরিবার চিনতে পার zsi tu" তখন স্বামী মহাশয় আহলাদে অজ্ঞান হইয়া আমাকে কোলে টানিয়া লইতে গিয়া কামিনীকেই কোলে টানিয়া লইলেন । সে তার গালে এক চড় মারিয়া হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল । সে দিনের আহলাদের কথা বলিয়া উঠিতে পারি না । বাড়ীতে খুব উৎসব বাধিল । সেই রাত্রে কামিনীতে আর উ-বাবুতে প্রায় একশতবার বাগ সদ্ধ হইল । সকলবারই প্রাণনাথ হারিলেন । একবিংশ পরিচ্ছেদ সেকালে যেমন ছিল কালাদীঘির ডাকাইতির পর আমার অদৃষ্টে যাঙ্গ ঘটিয়াছিল, স্বামী মহাশয় এক্ষণে আমার কাছে সব শুনিলেন । রমণ-বাৰু ও স্বভাষিণী যেরূপ ষড়যন্ত্র করিয়া তাহাকে কলিকাতায় লইয়া গিয়াছিল, তাহাও শুনিলেন। একটু রাগ করিলেন । বলিলেন, “আমাকে এত ঘুরাইবার ফিরাইবার প্রয়োজনট। কি ?” প্রয়োজনটা কি ছিল, তাহাও বুঝাইলাম। তিনি সন্তুষ্ট হইলেন, কিন্তু কামিনী সস্তুষ্ট হইল না । কামিনী বলিল, “তোমায় ঘানিগাছে ঘুরায় নাই, অমনি ছাড়িয়াছে, এইটুকু দিদির দোষ । আবার আবদার নিলেন কি না, গ্রহণ করব না। আরে fমমূষে, যখন আমাদের আলুতা-পরা শ্ৰীপাদপদ্মখানি ভিন্ন তোমার জেতের গতিমুক্তি নাই, তখন অত বড়াই"কেন ?” ૭૧ উবাবু এবার একটা উতোর মারিলেন, বলিলেন, “তখন চিনিতে পরিনে যে ! তোমাদের কি চিনৃতে জোয়ায় ?” কামিনী বলিল, তুমি যে চিনিবে, বিধাতা তা কপালে লিখেন নাই, যাত্রায় শোন নি ? বলে— “ধবলী বলিল শু্যাম, কে ঢেনে তোমারে । চিনি শুধু কাচা ঘাস যমুনার ধীরে ॥ পদচিহ্ন খুজি তব বাণী শুনে কানে । ধ্বজবজাঙ্কুশ তায় গোরু কি তা জানে ?” আমি আর হাসি রাখিতে পারিলাম না। উবাবু অপ্রতিভ হইয়া কামিনীকে বলিলেন, “যা ভাই, আর জালাস নে । যাত্রা করলি, তার জন্য এই পানের থিলিটি প্যালা নিয়ে যা ।” কামিনী বলিল, “ও দিদি । মিত্ৰজার একটু বুদ্ধিও আছে দেখিতে পাই ।” * আমি । কি বুদ্ধি দেখিলি ? - কামিনী । বাবু পানের ঠিলিট রেখে খিলিট দিয়াছেন, বুদ্ধি নয় ? তা তুই একটা কাজ করিস ; মধ্যে মধ্যে তোর পায়ে হাত দিতে দিস—ত হ’লে হাত দরাজ হবে । আমি । আমি কি ওঁকে পায়ে হাত দিতে দিতে পারি? উনি হলেন আমার পতিদেবতা । কামিনী । দেবতা কবে হলেন ? পতি যদি দেবতা, তবে এত দিন ত তোমার কাছে উনি উপদেবতাই ছিলেন ! আমি । দেবত হয়েছেন, যবে ওঁর বিদ্যাধরী গিয়াছে । কামিনী । আহ। বিদ্যাকে ধরি ধরি করেও ধবৃতে পাৰ্বলে না ! তা দেখ মিত্র মহাশয়, তোমার যে বিদ্যl, তাহার সঙ্গে ধরাধরি না থাকাই ভাল। সে বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ে ধরা । আমি । কামিনী, তুই বড় বাড়ালি ! শেষ চুরি চামারি পর্য্যস্ত ঘাড়ে ফেলিতেছিস ? কামিনী । অপরাধ আমার ? যখন মিরমহাশয় কমিসেরিয়েটে কাজ করেন, তখন চুরি ত করেছেন। আর চামারি,—তা যখন রসদ জুগিয়েছেন, তখন চামারিও করেছেন । উবাবু বলিলেন, “বলুক গে, ছেলেমানুষ । অমৃতং বালভাষিতম্ ” কামিনী । কাজেই । তুমি যখন বিদ্যাধরী শাসিতং, তখন তোমার বুদ্ধিং নাশিতং। আমি তৰে আসিতং—ম ডাকিতং । •.