२७ বিমলা ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “এত দৌরাত্ম্য কাহার প্রতি হইয়াছে ?” যুবরাজ কহিলেন, “সেনাপতির প্রতিই হইয়াছে।” বিমলা কহিলেন, “মহারাজ এমন অসম্ভব কথা বিশ্বাস করিবেন কেন ?” যুব । আমার সাক্ষী অাছে। বি । মহাশয়, এমন সাক্ষী কে ? যুব । সুচরিত্রে— রাজপুত্রের বাক্য শেষ হইতে না হইতে বিমল৷ কহিলেন, “দাসী অতি কুচরিত্র, আমাকে বিমলা বলিয়া ডাকিবেন ।” রাজপুত্ৰ বলিলেন, “বিমলাই তাহার সাক্ষী ।” বি । বিমলা এমত সাক্ষ্য দিবে না । যুব । সম্ভব বটে, যে ব্যক্তি পক্ষমধ্যে আত্মপ্রতি শ্রুতি বিস্কৃত হয়, সে কি সত্য সাক্ষ্য দিয়া থাকে ? বি । মহাশয় ! কি প্রতিশ্রত ছিলাম, স্মরণ করিয়া দিন । যুব । তোমার সখীর পরিচয় । বিমলা সহসা ব্যঙ্গপ্রিয়তা ত্যাগ করিলেন, গম্ভীরভাবে কহিলেন, “যুবরাজ ! পরিচয় দিতে সঙ্কোচ হয়। পরিচয় পাইয় আপনি যদি অসুখী হন ?" রাজপুত্র কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিলেন, তাহারও ব্যঙ্গাসক্তভাব দূর হইল, চিন্তা করিয়া বলিলেন, *বিমলে ! যথার্থ পরিচয়ে কি আমার অসুখের কোন কারণ আছে ?” বিমলা কহিলেন, “আছে ।” রাজপুত্র পুনরায় চিন্তামগ্ন হইলেন, ক্ষণপরে কহিলেন, “যাহাই হউক, তুমি আমার মানস সফল কর, আমি যে অসহ উৎকণ্ঠ সহ করিতেছি, তাহার অপেক্ষ আর কিছুই অধিক অমুখের হইতে পারে না । তুমি যে শঙ্কা করিতেছ, যদি তাহা সভ্য হয়, তবে সেও এ যন্ত্রণার অপেক্ষা ভাল । অস্তঃকরণকে প্রবোধ দিবার একটা কথা পাই । বিমলে! আমি কেবল কৌতুহলী হইয়া তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসি নাই ; কৌতুহলী হইবার আমার এক্ষণে অবকাশ নাই, অদ্য মাসাৰ্দ্ধমধ্যে অশ্বপৃষ্ঠ ব্যতীত অন্ত শয্যায় বিশ্রাম করি নাই । আমার মন অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়াছে বলিয়াই আসিয়াছি।” বিমলা এই কথা শুনিবার জন্য এত উদ্যম করিতেছিলেন । আরও কিছু শুনিবার জন্তই কহিলেন, “যুবরাজ ! আপনি রাজনীতিতে বিচক্ষণ, বিবেচনা করিয়া দেখুন, এ যুদ্ধকালে কি আপনার ভূপ্রাপ্য রমণীতে মনোনিবেশ করা উচিত ? উভয়ের মঙ্গল বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী হেতু বলিতেছি, আপনি আমার সখীকে বিশ্বত হইতে যত্ন করুন, যুদ্ধের উৎসাহে অবশু কৃতকাৰ্য্য হইবেন - যুবরাজের অধরে মনস্তাপব্যঞ্জক হাস্ত প্রকটিত হইল, তিনি কহিলেন, “কাহাকে বিস্তৃত হইব ? তোমার সখীর রূপ একবার দর্শনেই আমার হৃদয়মধ্যে গভীরতর অঙ্কিত হুইয়াছে, এ হৃদয় দগ্ধ না হইলে তাহা অার মিলায় না । লোকে আমার হৃদয় পাষাণ বলিয়া থাকে, পাষাণে যে মূৰ্ত্তি অঙ্কিত হয়, পাষাণ নষ্ট ন হইলে, তাহ। আর মিলায় না । যুদ্ধের কথা কি বলিতেছ, বিমলে! আমি তোমার সখীকে দেখিয়া অবধি কেবল যুদ্ধেই নিযুক্ত আছি ! কি রণক্ষেত্রে —কি শিবিরে এক পল সে মুখ ভুলিতে পারি নাই ; যখন মস্তকচ্ছেদ করিতে পাঠান খড়গ তুলিয়াছে, তখন মরিলে সে মুখ আর দেখিতে পাইব না, একবার ভিন্ন আর দেখা হইল না, সেই কথাই আগে মনে পড়িয়াছে । বিমলে ! কোথা গেলে তোমার সখীকে দেখিতে পাইব ?” বিমলা আর শুনিয়া কি করিবেন । বলিলেন, “গড়মান্দারণে আমার সর্থীর দেখা পাইবেন, ' তিলোত্তম সুন্দরী ধীরেন্দ্রসিংহের কল্প * জগৎসিংহের বোধ হইল যেন, তাহাকে কালসৰ্প দংশন করিল । তরবারে ভর করিয়া অধোমুখে দণ্ডায়মান হইয়া রহিলেন । অনেকক্ষণ পরে দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন,—“তোমারই কথা সত্য হুইল । তিলোত্তম। আমার হইবে না। আমি যুদ্ধক্ষেত্রে চলিলাম, শক্ররক্তে আমার মুখাভিলাষ বিসর্জন দিব i* বিমল রাজপুত্রের কাতরতা দেখিয়া বলিলেন, “যুবরাজ ! স্নেহের যদি পুরস্কার থাকিত, তবে আপনি তিলোত্তম লাভ করিবার যোগ্য । একেবারেই বা কেন নিরাশ হন ? অাজ বিধি বৈরী,• কাল বিধি সদয় হইতে পারেন ।” আশা মধুরভাবিণী । অতি দুর্দিনে মনুষ্য-শ্রবণে মৃদু মৃদ্ধ কহিয়া থাকে, "মেঘ-ঝড় চিরস্থায়ী নহে, কেন দুঃখিত হও ? আমার কথা শুন । বিমলার মুখে আশা কথা কহিল,—“কেন দুঃখিত হও? আমার কথা শুন ।” জগৎসিংহ আশার কথা শুনিলেন । ঈশ্বরের ইচ্ছা কে বলিতে পারে ? বিধাতার লিপি কে অগ্রে পাঠ করিতে পারে ? এ সংসারে অঘটনীয় কি আছে ? এ সংসারে কোন অঘটনীয় ঘটনা না-ঘটিয়াছে ? রাজপুত্র আশার কথা শুনিলেন । কহিলেন, “क्षांशझे इलेक, च्छ चांभांद्ध भन अठास्र श्रश्द्रि
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৮
অবয়ব