পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইন্দিরা ক । আমার ঘরের ভিতর দোর বন্ধ করে । উ। কে দেখেছে ? কা। কেউ না । উ। তেমনতর ত কথা ছিল না । কা । এমন কথাও ছিল ন| যে, তোমাদের সম্মুখে আসিয়া পেশওয়াজ পরিয়া নাচিব । নাচিব স্বীকার করিয়াছিলাম, তা নাচিয়াছি । আমার কথা রাখিয়াছি, তোমরা দেখিতে পাইলে না, তোমাদের অদৃষ্টের দোষ । এখন আমি যে শিকল কিনিয়। রাখিয়াছি, তার কি হ বে? কামিনী যদি নাচের দায়ে এড়াইল, তবে আমার স্বামী গানের জন্য ধরা পড়িলেন । মজলিস হইতে হুকুম হইল, তোমাকে গাইতে হইবে । তিনি পশ্চিমাঞ্চলে রীতিমত গীতবিদ্য শিখিয়াছেন তিনি সনদী খিয়াল গাইলেন । শুনিয়। সে অপারোমণ্ডলী হাসিল । ফরমায়েস করিল, “বদন অধিকারী কি দাশু রায় ।” তাতে উবাৰু অপটু, সুতরাং অসরোগণ সন্তুষ্ট হইল না । এইরূপে দুই প্রহর রাত্রি কাটিল । এ পরিচ্ছেদটি না লিখিলেও লিখিতে পারিতাম । তবে এ দেশের গ্রাম্য স্ত্রীদিগের জীবনের এই ভাগটুকু এখন লোপ পাইয়াছে, ভালষ্ট হইয়াছে । কেন না, ইহার সঙ্গে অশ্লীলত, নির্লজ্জতা, কদাচিৎ বা নীতি আসিয়া মিশিত ; কিন্তু যাহা লোপ পাইয়াছে, তাহার একটি চির দিবার বাসনায় এই পরিচ্ছেদটা লিখিলাম । তবে জানি না, অনেক স্থানে কুরীতি লোপ না পাইয়াও থাকিতে পারে । যদি তাহ হয়, তবে র্যাহারা জামাই দেখিতে পৌরঙ্গীদিগকে ঘাইতে নিষেধ করেন না, তাহদের চোখকান ফুটাইয়া দেওয়া প্রয়োজনীয়। তাই ধরি মাছ না চুষ্ট পানি করিয়া, তাহাঁদের ইঙ্গিত করিলাম । দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ উপসংহার আমি পরদিন শিবিকারোহণে স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ী গেলাম স্বামীর সঙ্গে যাইতেছি, সে একট। মুখ বটে, কিন্তু সেবার ষে যাইতেছিলাম, আর এক প্রকারের সুখ । যাহা কখনও পাই নাই, তাই পাইবার আশায় যাইতেছিলাম ; এখন যাহা পাইয়াছিলাম, তাই আঁচলে বাধিয়া লইয়া যাইতেছিলাম । একটা কবির কাব্য, অপরটা ধনীর ধন। ধনীর ধন কবির কাব্যের সমান কি ? যাহারা ধনোপার্জন 8> . ; করিয়া বুড়ে হইয়াছে, কাব্য হারাইয়াছে, তাহারাও এ কথা বলে না । তাহার বলে, ফুল যতক্ষণ গাছে ফোটে, ততক্ষণই সুন্দর ; তুলিলে আর তেমন সুন্দর থাকে না । স্বপ্ন যেমন সুখের, স্বপ্নের সফলতা কি , তত সুখের হয় ? আকাশ যেমন বস্তুতঃ নীল নয়, আমরা নীল দেখি মাত্র, ধন তেমনই । ধন সুখের নয়, আমরা সুখের বলিয়া মনে করি । কাব্যই সুখ । কেন না, কাব্য আশা, ধন ভোগ মাত্র। তাও সকলের কপালে । নয়। অনেক ধনী লোক কেবল ধনাগারের প্রহরী মাত্র । আমার একজন কুটুম্ব বলেন, রেজুরি গার্ড , তবু মুখে সুখেই শ্বশুরবাড়া চলিলাম। সেখানে এবার নিৰ্ব্বিঘ্নে পৌছিলাম। স্বামী মহাশয় মাতাপিতাসমীপে সমস্ত কথ! সবিশেষে নিবেদন করিলেন । রমণবাবুর পুলিন্দ খোল হইল । তাহার কথার সঙ্গে আমার সকল কপ। মিলিল । আমার শ্বশুরশাশুড়ী সন্তুষ্ট হইলেন । সমাজের লোকও সবিশেষ বৃত্তান্ত জানিতে পারিয়া, কোন কথা তুলিল না । আমি সকল ঘটন। বিবৃত করিয়া সুভাষিণীকে পত্র লিখিলাম। সুভাষিণীর জন্য সৰ্ব্বদ। আমার প্রাণ র্কাদিত, আমার স্বামী আমার অনুরোধে রমণ" বাবুর নিকট হারাণীর জন্য পাচ শত টাক পাঠাইয়া দিলেন। শীঘ্রই স্বভাষিণীর উত্তর পাইলাম । উত্তর আনন্দপরিপূর্ণ। সুভাষিণী-বাবুর হস্তাক্ষরে পত্র লিখিয়ছিল । কিন্তু কথাগুল। সুভাষিণীর নিজের, তাহা কথার রকমেই বুঝা গেল । সে সকলেরই সংবাদ লিখিয়াছিল । দুষ্ট একটা সংবাদ উদ্ধৃত করিতেছি । সে লিখিতেছে, —“হারাণী প্রথমে কিছুতেই টাকা লইবে না । বলে, আমার লোভ বাড়িয়া যাইবে । এটা যেন ভাল কাজই করিয়াছিলাম, কিন্তু এ রকম কাজ ত মনাই হুনু । আমি যদি লোভে পড়িয় মন্দেই রাজী হুই ? আমি পোড়ারমুখীকে বুঝাইলাম যে, আমার ঝাট ন! খাইলে কি তুই এ কাজ করতিস ? সবার বেলাই কি তুই আমার হাতের ঝাটা খেতে পাবি ? মন্দ কাজের বেল কি আমি তোকে তেমনই তোর শুধু মুখে ঝাটা খাওয়াইব ? দুটো গালাগালিও খাবি না', কি ? ভাল কাজ করেছিলি, বখসিস নে । এইরূপ অনেক বুঝান পড়ানতে সে টাকা নিয়াছে। এখন নানারকম ব্রতনিয়ম করিবার ফর্দ করিয়াছে । যত দিন না তোমার এই সংবাদ পাওয়া গিয়াছিল, সে আর হাসে নাই, কিন্তু এখন তার হাসির জালায় বাড়ীর লোক অস্থির হইয়াছে।” পাচিক ব্রাহ্মণী ঠাকুরাণীর সংবাদ স্থভাষিণী । এইরূপ লিখিল । “যে অবধি তুমি তোমার স্বামীৰ