পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলে লইতে পারে, তাহার যাদ্ধা করা ব্যঙ্গ করা যাত্র। চাবি না দিলে সেনাপতি এখনই বলে লইবে। অপর কেহ তৎক্ষণাৎ চাবি ফেলিয়া দিত সন্দেহ নাই, কিন্তু চতুরা বিমল কহিলেন, “মহাশয়! আমি ইচ্ছা! ক্রমে চাবি না দিলে আপনি কি প্রকারে লইবেন ?” এই বলিতে বলিতে বিমলা অঙ্গ হইতে ওড়ন খুলিয়। হস্তে লইলেন । ওসমানের চক্ষু ওড়নার দিকে । তিনি উত্তর করিলেন, “ইচ্ছাক্রমে না দিলে তোমার অঙ্গস্পর্শমুখ লাভ করিব ।” “করুন, বলিয়া বিমলা হস্তস্থিত বস্ত্র অীমকাননে নিক্ষেপ করিলেন । ওসমানের চক্ষু ওড়নার প্রতি ছিল । ষেই বিমলা ওড়না নিক্ষেপ করিয়াছেন, ওসমান অমনি সঙ্গে সঙ্গে হস্ত প্রসারণ করিয়া উডডীয়মান বস্ত্র ধরিলেন । ওসমান খ ওড়ন। হস্তগত করিয়া এক হস্তে বিমলার হস্ত বজমুষ্টিতে ধরিলেন, দন্ত দ্বারা ওড়না ধরিয়া দ্বিতীয় হস্তে চাবি খুলিয়৷ নিজ কটিবন্ধে রাখিলেন । পরে ষাহা করিলেন, তাহাতে বিমলার মুখ শুকাইল । ওসমান বিমলাকে একশত সেলাম করিয়া ষোড়হাতে বলিলেন, “মাফ করিবেন " এই বলিয়া ওড়না লইয়া তদ্বারা বিমলার দুই হস্ত আলিসার সহিত দৃঢ়বদ্ধ করিলেন। বিমলা কছিলেন, *এ কি ?” ওসমান কহিলেন, “প্রেমের ফাস।” বি । এ দুষ্কৰ্ম্মের ফল আপনি অচিরাং পাইবেন। ওসমান বিমলাকে তদবস্থায় রাখিয়া চলিয়া গেলেন । বিমলা চীৎকার করিতে লাগিলেন । কিন্তু কিছু ফলোদয় হইল না । কেহ শুনিতে পাইল না। ওসমান পূৰ্ব্বপথে অবতরণ করিয়া পুনৰ্ব্বার বিমলার কক্ষের নীচের কক্ষে গেলেন । তথায় বিমলার দ্যায়ু জানালার চাবি ফিরাইয়া জানালী দেওয়ালের মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দিলেন । পথ মুক্ত হইলে ওসমান মৃদু মৃদ্ধ শিস দিতে লাগিলেন । তচ্ছ বণমাত্রেই বৃক্ষান্তরাল হইতে এক জন পাদুকাশূন্ত যোদ্ধা গবাক্ষনিকটে আসিয়া গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল। সে ব্যক্তি প্রবেশ করিলে অপর এক ব্যক্তি আসিল, এইরূপে ৰহুসংখ্যক পাঠান-সেন। নিঃশব্দে দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিল । শেষে যে ব্যক্তি গবাক্ষনিকটে আসিল, ওসমান তাহাকে কহিলেন, “আর না, তোমরা বাহিরে থাক, আমার পূর্বকথিত সঙ্কেতধ্বনি শুনিলে তোমরা বাহির হইতে দুর্গ আক্রমণ করিও ; এই কথা তুমি তাজ খাকে বলিও * সে ব্যক্তি ফিরিয়া গেল । ওসমান লব্ধপ্রবেশ সেন লইয়া পুনরপি নিঃশবপদসঞ্চারে প্রাসাদারোহণ করিলেন ; যে ছাদে বিমলা বন্ধনদশায় বসিয়া অাছেন, সেই ছাদ দিয়া গমনকালে কছিলেন, “এই স্ত্রীলোকটি বড় বুদ্ধিমতী, ইহাকে কদাপি বিশ্বাস নাই। রহিম সেখ! তুমি ইহার নিকট প্রহরী থাক। যদি পলায়নের চেষ্টা বা কাহারও সহিত কথা কহিতে উদ্যোগ করে, কি উচ্চ কথা কয়, তবে স্ত্রীবধে ঘুণ। করিও ন৷ ” “ষে আজ্ঞা” বলিয়া রহিম তথায় প্রহরী রহিল। পাঠান-সেনা ছাদে ছাদে দুর্গের অন্যদিকে চলিয়া গেল । উনবিংশ পরিচ্ছেদ প্রেমিকে প্রেমিকে বিমলা যখন দেখিলেন যে, চতুর ওসমান অন্যত্র গেলেন, তখন তিনি ভরসা পাইলেন যে, কৌশলে মুক্তি পাইতে পারিবেন । শীঘ্র তাহার উপায় চেষ্টা করিতে লাগিলেন । প্রহরী কিয়ৎক্ষণ দণ্ডায়মান থাকিলে বিমল তাহার সহিত কথোপকথন আরম্ভ করিলেন । প্রহরী হউক, আর যমদূতই হউক, স্বন্দরী রমণীর সহিত কে ইচ্ছাপূৰ্ব্বক কথোপকথন না করে ? বিমল প্রথমে এ ও সে নানাপ্রকার সামান্ত-বিষয়ক কথাবাৰ্ত্ত কহিতে লাগিলেন । ক্রমে প্রহরীর নাম ধাম, গৃহকৰ্ম্ম, সুখ-দুঃখ-বিষয়ক নানা পরিচয় জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন । প্রহরী নিজ সম্বন্ধে বিমলার এতদূর পর্য্যন্ত ঔৎসুক্য দেখিয়া বড়ই প্রীত হইল । বিমলাও স্বষোগ দেখিয়া ক্রমে ক্রমে নিজ তুণ হইতে শাণিত অস্ত্র-সকল বাহির করিতে লাগিলেন । একে বিমলার অমৃতময় রসালাপ, তাহাতে আবার তাহার সঙ্গে সঙ্গে সেই বিশাল চক্ষুর অব্যর্থ কটাক্ষসন্ধান, প্রহরী একেবারে গলিয়া গেল ! ষখন বিমলা প্রহরীর ভঙ্গিভাবে দেখিলেন যে, তাহার অধঃপাতে যাইবার সময় হুইয়া আসিয়াছে, তখন মৃদ্ধ মৃদ্ধ স্বরে কহিলেন, “আমার কেমন ভয় করিতেছে, সেখ জী, তুমি আমার কাছে বসে না !” - প্রহরী চরিতার্থ হইয়া বিমলার পাশে বসিল । ক্ষণকাল অন্ত কথোপকথনের পর বিমলা দেখিলেন ষে, ঔষধ ধরিয়াছে। প্রহরী নিকটে বসিয়া অবধি ঘন ঘন তাহার পানে দৃষ্টিপাত করিতেছে। তখন