পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లRe জগতসিংহের চক্ষু হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইতে লাগিল। কহিলেন, “এক কি করিতে পারি ?--তবে তোমার সখীর রক্ষার্থ প্রাণত্যাগ করিব।” শত্রুর ভীমনাদ আরও নিকটবৰ্ত্তী হইল। অস্ত্রের ঝঞ্চনাও শুনা যাইতে লাগিল । বিমলা চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলেন,—“তিলোত্মা ! এ সময়ে কেন তুমি অচেতন হইলে ? তোমাকে কি প্রকারে রক্ষা করিব ?” ' ' তিলোত্তম চক্ষুরুন্মীলন করিলেন । বিমল কহিলেন,-“তিলোত্তস্থঃ জ্ঞান হইতেছে ; রাজকুমার ! রাজকুমার ! এখন তিলোত্তমাকে বাঁচাও ” রাজকুমার কছিলেন –“এ ঘরের মধ্যে থাকিলে কার সাধ্য রক্ষা করে ? এখনও যদি ঘর হইতে বাহির হইতে পারিতে, তবে আমি তোমাদিগকে দুর্গের বাহিরে লইয়া ষাইতে পারিলেও পারিতাম : কিন্তু তিলোত্তমার స్ట్రో বিমল ! ঐ পাঠান সিঁড়িতে উঠিউছে । আমি অগ্রে প্রাণ দিবই, কিন্তু পরিতাপ যে, প্রাণ দিয়াও তোমাদের বাচাইতে পারিলাম ন! ” বিমলা পলকমধ্যে তিলোত্তমাকে ক্রোড়ে তুলিয়৷ কহিলেন, “তবে চলুন ; আমি তিলোত্তমাকে লইয়। যাইতেছি ।" বিমলা আর জগতসিংহ তিন লম্ফে কক্ষদ্বারে আসিলেন। চারি জন পাঠান সৈনিকও সেই সময়ে বেগে ধাবমান হইয়া কক্ষদ্বারে আসিয়া পড়িল । জগতসিংহ কহিলেন, —“বিমলা, আর হইল না, আমার পশ্চাৎ আইস ।" পাঠানের শিকার সম্মুখে পাইয়। “আল। লা— ছো” চীৎকার করিয়া, পিশাচের দ্যায় লাফাইতে লাগিল । কাটস্থিত অস্ত্রে ঝঞ্চন। বাঞ্জিয় উঠিল । সেই চীৎকার শেষ হইতে ন হইতেই জগতসিংহের অসি এক জন পাঠানের হৃদয়ে আমূল সমারোপিত হইল। 繫 টীৎকার করিতে করিতে পাঠান প্রাণত্যাগ করল। পাঠানের বক্ষ হইতে অসি তুলিবার পূৰ্ব্বেষ্ট আৰু এক জন পাঠানের বর্শাফলক জগৎসিংহের গ্রীবাদেশে আসিয় পড়িল । বর্শ পড়িতে ন পড়ি তেই বিদ্যুম্বৎ হস্তচালন দ্বারা কুমার সেই বর্শ বমিকরে ধৃত করিলেন এবং তৎক্ষণাৎ সেই বর্শারই প্রতিঘাতে বর্শানিক্ষেপীকে ভূমিশায়ী করিলেন । বাকী দুই জন পাঠান নিমেষমধ্যে এককালে জগতসিংহের মস্তক লক্ষ্য করিয়া অসির প্রহার করিল জগতসিংহ পলক ফেলিতে অবকাশ না লইয়াদক্ষিণ-হস্তস্থ অসির আঘাতে এক জনের অসি সহিত প্রকোষ্ঠচ্ছেদ করিয়া ভূতলে ফেলিলেন ; দ্বিতীয়ের প্রহার নিবারণ করিতে পারিলেন না ; অসি মস্তকে লাগিল না বটে, কিন্তু বঙ্কিমচঞ্জের গ্রন্থাবলী স্কন্ধদেশে দারুণ আঘাত পাইলেন । কুমার আঘাত পাইয়া যন্ত্রণায় ব্যাখশর পৃষ্ট ব্যান্ত্রের ন্যায় দ্বিগুণ প্রচণ্ড হইলেন : পাঠান আসি তুলিয়া পুনরাঘাতের উদ্যম করিতে না করিতেই কুমার দুই হস্তে দৃঢ়তর মুষ্টি বদ্ধ করিয়া ভীষণ অসিধারণ পূৰ্ব্বক লাফ দিয়া, আঘাতকারী পাঠানের মস্তকে মারিলেন, উষ্ণৗষ সহিত পাঠানের মস্তক দুই খণ্ড হইয়া পড়িল । কিন্তু এই অবসরে মে সৈনিকের হস্তচ্ছেদ হইয়াছিল, সে বামহস্তে কটি হইতে তীক্ষু ছুরিক। নির্গত করিয়া রাজপুল্ল শরীর লক্ষ্য করিল ; যেমন রাজপুত্রের উল্লম্ফোখিত শরীর ভূতলে অবতরণ করিতেছিল, অমনি সেই চুরিক রাজপুঞ্জের বিশাল বাহুমধ্যে গভীর বিঁধিয়া গেল । রাজপুত্র সে আঘাত সূচিবেধমাত্র জ্ঞান করিয়া পাঠানের কটিদেশে পৰ্ব্বতপাতবৎ পদাঘাত করিলেন—ষবন দূরে নিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িল । রাজপুল্ল বেগে ধাবমান হইয়া তাহার. শিরচ্ছেদ করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, এমন সময়ে ভীমনাদে “আল্লা - ল্লা—হে" শব্দ করিষা অগণিত পাঠানসেনাস্রোত কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিল। রাজপুত্ৰ দেখিলেন, যুদ্ধ করা কেবল মরণের কারণ । রাজপুলের অঙ্গ রুধিরে প্লাবিত হইতেছে ; রুধিরোৎ সর্গে দেহ ক্রমে ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছে । তিলোত্তম। এখনও বিচেতন হইয়। বিমলার ক্রেীড়ে রহিয়াছেন । বিমলা তিলোত্তমাকে ক্রোড়ে করিয়া কঁাদিতেছেন । তাহারও বস্ত্র রাজপুত্রের রক্তে আৰ্দ্ৰ হইয়াছে । কক্ষ পাঠান সেনায় পরিপূর্ণ হইল । রাজপুল এবার অসির উপর ভর করিয়া নিশ্বাস ছাড়িলেন । এক জন পাঠান কহিল, -“রে নফর ! অস্ত্র ত্যাগ কর তোরে প্রাণে মারিব না ।" নিৰ্ব্বাণে|মুখ অগ্নিতে যেন কেহ ঘৃতাহুতি দিল অগ্নিশিখাবৎ লম্ফ দিয়৷ কুমার দাস্তিক পাঠানের মস্তকচ্ছেদ করিয়া নিজ চরণতলে পাড়িলেন । আসি ঘূরাইয়া ডাকিয়া কহিলেন, -“যবন । রাজপুতের কি প্রকারে প্রাণত্যাগ করে দেখ, ।” অনন্তর বিদ্যদ্বৎ কুমারের অসি চমকিতে লাগিল । রাজপুত্ৰ দেখিলেন যে, একাকী আর যুদ্ধ হইতে পারে না কেবল যত পারেন, শক্রনিপাত করিয়া প্রাণত্যাগ করাই তাহার উদ্দেশ্য হইল। এই অভিপ্রায়ে শত্ৰুতরঙ্গের মধ্যস্থলে পড়িয়া বজ্ৰমুষ্টিতে দুই হস্তে অসিধারণ পূৰ্ব্বক সঞ্চালন করিতে লাগিলেন । আর আত্মরক্ষার দিকে কিছুমাত্ৰ মনোযোগ রহিল না, কেবল অজস্র আঘাত করিতে লাগিলেন । এক, দুই, তিন,—প্রতি আঘাতেই হয় কোন পাঠান ধরাগায়ী, নচেৎ কাহারও