পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ჯა ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ বিমলার পত্র “যুবরাজ ! আমি প্রতিশ্রত ছিলাম যে, একদিন আপনার পরিচয় দিব । এখন তাহার সময় উপস্থিত হইয়াছে। ভরসা করিয়াছিলাম, আমার তিলোত্তম অম্বরের সিংহাসনারূঢ় হইলে পরিচয় দিব । সে সকল আশা ভরসা নিম্মুল হইয়াছে । বোপ করি যে, কিছু দিন মধ্যে শুনিতে পাইবেন, এ পুথিবীতে তিলোত্তম কেহ নাই, বিমলা কেহ নাই । আমাদিগের পবমায়ু শেষ হইয়াছে । এই জন্যই এখন আপনাকে এ পত্র লিখিতেছি । আমি মহা পাপীয়সী, বহুবিধ অবৈধ কার্য্য করিয়াছি। আমি মরিলে লোকে নিন্দ করিবে, কতমত কদৰ্য্য কথ। বলিবে, কে তখন আমার ঘৃণিত নাম হইতে কলঙ্কের কালি মুছাইয়া তুলিবে ? এমন কে মুহৃদ আছে ? এক সুহৃদ আছেন, তিনি অচিরাং লোকালয় ত্যাগ করিয়া তপস্তায় প্রস্থান করিবেন । অভিরাম স্বামী হইতে দাসীর কার্য্যোদ্ধার হইবে না । রাজকুমার ! এক দিনের তরেও আমি ভরসা করিয়াছিলাম, আমি আপনার আত্মীয়জনমধ্যে গণ্য হইব । একদিনের তরে আপনি আমার আত্মীয়জনের কৰ্ম্ম করুন | কাহাকেই বা এ কথ। বলিতেছি ? অভাগিনীদিগের মন্দভাগ। অগ্নিশিখাবৎ ষে বন্ধু নিকটে ছিলেন, র্তাহাকেও স্পর্শ করিয়াছে । যাহাই হউক, দাসীর এই ভিক্ষ স্মরণ রাখিবেন । যখন লোকে বলিবে, বিমল কুলটা ছিল, দাসীবেশে গণিক ছিল, তখন কহিবেন, বিমলা নীচজাতিসম্ভব, বিমল মন্দভাগিনী, বিমল দুঃশাসিত রসনাদোমে শত অপরাধে অপরাধিনী, কিন্তু বিমলা গণিক নহে । যিনি এখন স্বর্গে গমন করিয়াছেন, তিনি বিমলার অদৃষ্টপ্রসাদে যথাশাস্ত্র তাহার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন । বিমল একদিনের তরে নিজ প্রভুর নিকটে বিশ্বাসঘাতিনী নহে । এত দিন এ কথা প্রকাশ ছিল না, আজ কে বিশ্বাস করিবে ? কেনই বা পত্নী হইয়া দাসীবৎ ছিলাম, তাহা শ্রবণ করুন - গড়মান্দারণের নিকটবৰ্ত্তী কোন গ্রামে শশিশেখর ভট্টাচার্য্যের বাস। শশিশেখর কোন সম্পন্ন ব্রাহ্মণের পুত্র ; যৌবনকালে যথারীতি বিদ্যাধ্যয়ন করিয়া ছিলেন । কিন্তু অধ্যয়ন স্বভাবদোষ দূর হয় না । জগদীশ্বর শশিশেখরকে সৰ্ব্বপ্রকার গুণদান করিয়াও বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী এক দোষ প্রবল করিয়া দিয়াছিলেন সে যৌবনকালের ' প্রবল দোষ । গড়মান্দারণে জয়ধরসিংহের কোন অকুচরের বংশে একটি পতিবিরহিণী রমণী ছিল । তাহার সৌন্দর্য্য অলৌকিক, তাহার স্বামী রাজসেনামধ্যে সিপাহী ছিল ; এ জন্য বহুদিন দেশত্যাগী। সেই সুন্দরী শশিশেখরের নয়নপথের পথিক হইল। অল্পকালমধ্যেই তাহার ঔরসে পতিবিরহিতার গর্ভসঞ্চার হইল । অগ্নি আর পাপ অধিক দিন গোপন থাকে না । শশিশেখরের দুষ্কৃতি র্তাহার পিতৃকর্ণে উঠিল । পুত্রকৃত পরকুল-কলঙ্ক অপনীত করিবার জন্য শশিশেখরের পিতা সংবাদ লিখিয় গর্ভবতীর স্বামীকে ত্বরিত গৃহে আনাইলেন । অপরাধী পুত্রকে বহুবিধ ভৎসনা করিলেন । কলঙ্কিত হইয়া শশিশেখর দেশত্যাগী হইলেন । শশিশেখর পিতৃগৃহ পরিত্যাগ করিয়া কাশীধামে যাত্রা করিলেন তথায় কোন সৰ্ব্ববিৎ দণ্ডীর বিদ্যার খ্যাতি শ্রত হইয়া তাহার নিকট অধ্যয়নারম্ভ করিলেন । বুদ্ধি অতি তীক্ষু ; দর্শনাদিতে অত্যন্ত সুপটু হইলেন ; জ্যোতিষে অদ্বিতীয় মহামহোপাধ্যায় হইয়। উঠিলেন । অধ্যাপক অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়। অধ্যাপনা করিতে লাগিলেন । o শশিশেখর এক জন শূদ্রীর গৃহের নিকটে বাস করিতেন । শূদ্রীর এক নবযুবতী কন্যা ছিল । ব্রাহ্মণে ভক্তিপ্রযুক্ত যুবতী আহারীয় আয়োজন প্রভৃতি শশিশেখরের গৃহকর্ঘ্য সম্পাদন করিয়া দিত । মাতৃপিতৃকুঙ্কতিভারে আবরণ নিক্ষেপ করাই কৰ্ত্তব্য । অধিক কি কহিব ? শূদ্রীকন্যার গর্ভে শশিশেখরের ঔরসে এই অভাগিনীর জন্ম হইল । শ্রবণমাত্র অধ্যাপক ছাত্রকে কহিলেন শিষ্য ! আমার নিকট দুষ্কৰ্ম্মান্বিতের অধ্যয়ন হইতে পারে না । তুমি আর কাশীধামে মুখ দেখাইও না ? শশিশেখর লজ্জিত হইয়। কাশীধাম হইতে প্রস্থান করিলেন । মাতাকে মাতামহ দুশ্চারিণী বলিয়া গৃহবহিষ্কৃত করিয়া দিলেন । দুঃখিনী মাতা আমাকে লইয়। এক কুটারে রছিলেন । কায়িক পরিশ্রম দ্বারা জীবন ধারণ করিতেন । কেহ দুঃখিনীর প্রতি ফিরিয়া চাহিত না ; পিতারও কোন সংবাদ পাওয়া গেল না । কয়েক বৎসর পরে শীতকালে এক জন আঢ্য পাঠান বঙ্গদেশ হইতে দিল্লীনগরে গমনকালে কাশীধাম দিয়া যান। অধিক রাত্রিতে নগরে উপস্থিত হইয়। রাত্রিতে থাকিবার স্থান পান না ; তাহার সঙ্গে বিবি ও একটি