পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জুগেশনন্দিনী "বাঙ্গালী বটে, ভট্টাচাৰ্য্য। উহার একটা উপাধি আছে, এলেম—এলেম কি ?” “মহাশয় । বাঙ্গালীর উপাধিতে 'এলেম’ শব্দ ব্যবহার হয় না । এলেমকে বাঙ্গালায় বিদ্যা কহে । বিদ্যাভূষণ বা বিদ্যাবাগীশ হইবে।”

  • হঁ। ই, বিদ্যা কি একটl,—রসুন, বাঙ্গালায় হস্তীকে কি বলে, বলুন দেখি ?"

“ਲ੍ਹੇ " “আর ?” “করী, দন্তী, বারণ, নাগ, গজ-” “ষ্ঠ ষ্ট', স্মরণ হইয়াছে ; , উহার নাম গজপতি বিদ্যাদিগগজ ।” “বিদ্যাদিগগজ ! চমৎকার উপাধি ! যেমন নাম, তেমনি উপাধি । উহার সহিত আলাপ করিতে বড় কৌতুহল জন্মিতেছে ।” r ওসমান প। একটু একটু গজপতির কথাবাৰ্ত্ত শুনিয়াছিলেন ; বিবেচনা করিলেন, ইহার সহিত কথোপকথনে ক্ষতি হইতে পারে না । কহিলেন: “ক্ষতি কি ?” উভয়ে নিকটস্ত বাহিরের ঘরে গিয়। ভূত্য দ্বার। গজপতিকে আহবান করিম আনিলেন । নবম পরিচ্ছেদ দিগগজ-সংবাদ ভূত্যসঙ্গে গজপতি বিদ্যাদিগগজ কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিলে রাজকুমার জিজ্ঞাসিলেন, “আপনি ব্রাহ্মণ ?" দিগগজ হস্তভঙ্গী সহিত কহিলেন,— “যাবৎ মেরে স্থিত দেব যাবৎ গঙ্গা মহীতলে, অসারে খলু সংসারে সারং শ্বশুরমন্দিরম্।” জগতসিংহ হাস্ত সংবরণ করিয়া প্রণাম করিলেন । গজপতি আশীৰ্ব্বাদ করিলেন, “খোদা খ। বাবুজীকে ভাল রাখুন " | রাজপুত্ৰ কহিলেন, “মহাশয়, আমি মুসলমান নহি, আমি হিন্দু।” দিগগজ মনে করিলেন, “বেটা যবন, আমাকে ফাকি দিতেছে ; কি একটা মতলব আছে ; নহিলে আমাকে ডাকিবে কেন?” ভয়ে বিষণ্ণবদনে কহিলেন—“খ। বাবুজী, আমি আপনাকে চিনি ; আপনার অন্নে প্রতিপালন, আমায় কিছু বলিবেন না, আপনার শ্ৰীচরণের দাস আমি ” (ද් জগৎসিংহ দেখিলেন ইহাও এক বিস্ত্র । কছিলেন, “মহাশয়, আপনি ব্রাহ্মণ ; আমি রাজপুত, আপনি এরূপ কহিবেন না ; আপনার নাম গজপতি বিদ্যাদিগগজ ।” দিগগজ ভাবিলেন, “ঐ গো ! নাম জানে ! কি বিপদে ফেলিবে ?" করষোড়ে কহিলেন,—“দোহাই সেখজীর আমি গরীব ! আপনার পায়ে পড়ি ।” জগতসিংহ দেখিলেন ব্রাহ্মণ সেরূপ ভীত হইয়াছে, তাহাতে স্পষ্টতঃ উহার নিকট কোন কার্য্যসিদ্ধি হইবে না । অতএব বিষয়াস্তরে কথ। কহিবার জন্ত কহিলেন, “আপনার হাতে ও কি পুতি ?” “আজ্ঞ। এ মাণিকপীরের পুতি ।” “ব্রাহ্মণের হাতে মাণিকপীরের পুতি ?" “আজ্ঞ – আজ্ঞা, আমি ব্রাহ্মণ ছিলাম, এখন ত আর ব্রাহ্মণ নষ্ট ।” রাজকুমার বিস্ময়াপন্ন হইলেন, বিরক্তও হইলেন । কহিলেন “সে কি ? আপনি গড়মানদারণে থাকিতেন ন ?” দিগগজ ভাবিলেন, “এই সৰ্ব্বনাশ করিল ! আমি বীরেন্দ্রসিংহের কুর্গে থাকিতাম, টের পেয়েছে । ধীরেন্দ্রসিংহের যে দশ করিয়াছে, আমারও তাই করিবে ।" ব্রাহ্মণ ত্রাসে কাদিয়া ফেলিল । রাজকুমার কহিলেন “ও কি ও ?” দিগগজ হাত কচলাইতে কচলাইতে কহিলেন, “দোহাই গ৷ বাবা ! আমায় "মের না বাবা ! আমি তোমার গোলাম বাবা ! তোমার গোলাম বাবা ।" “তুমি কি বাতুল হুইয়াছ ?" “না বাব ! আমি তোমারই দাস বাবা ! আমি তোমারই বাবা !" জগতসিংহ অগত্য ব্রাহ্মণকে মুস্থির করিবার জন্ত কহিলেন, “তোমার কোন চিন্তা নাই, তুমি একটু মাণিকপীরের পুতি পড়, আমি শুনি ।” ব্রাহ্মণ মাণিকপীরের পুতি লইয়া স্থর করিয়া পড়িতে লাগিল । যেরূপ যাত্রার বালক অধিকারীর কাণ-মল খাইয় গীত গায়, দিগগজ পণ্ডিতের সেই দশা হইল । ক্ষণেক পরে রাজকুমার পুনৰ্ব্বার জিজ্ঞাসা করি লেন, “আপনি ব্রাহ্মণ হইয়া মাণিকপীরের পুতি ব্রাহ্মণ সুর থামাইয়া কহিল, “আমি মোছলমান হইয়াছি।” রাজপুত্র কছিলেন, “সে কি ?”