পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مجه কর ; এই আমি সশস্ত্র দ্বারদেশে বসিলাম, আমার বিভ্রামের বিশ্ন করিও না। বিশ্ন করিলে যদি পুরুষ হও, তবে ফলভোগ করিবে ; আর যদি স্ত্রীলোক হও, তবে নিশ্চিস্ত হুইয়া নিদ্রা যাও, রাজপুতহস্তে অসিচৰ্ম্ম থাকিতে তোমাদিগের পদে কুশাঙ্কুরও বিধিবে না ।” “আপনি কে ?” বামাস্বরে মন্দিরমধ্য হইতে এই প্রশ্ন হইল । শুনিয়া সবিস্ময়ে পথিক উত্তর করিলেন, “স্বরে বুঝিতেছি, এ প্রশ্ন কোন সুন্দরী করিলেন । আমার পরিচয়ে আপনার কি হইবে ?” মন্দিরমধ্য হইতে উত্তর হইল, “আমরা বড় ভীত হইয়াছি।” যুবক তখন কহিলেন, “আমি যেই হই, আমাদিগের আত্মপরিচয় আপনারা দিবার রীতি নাই । কিন্তু আমি উপস্থিত থাকিতে অবলা জাতির কোন প্রকার বিল্পের আশঙ্কা নাই ।” রমণী উত্তর করিল, “আপনার কথা শুনিয়া আমার সাহস হইল, এতক্ষণ আমরা ভয়ে মৃতপ্রায় ছিলাম। এখনও আমার সহচরী অৰ্দ্ধমূচ্ছিত৷ রছিয়াছেন । আমরা সায়াহ্নকালে এই শৈলেশ্বর শিবপূজার জন্য আসিয়াছিলাম। পরে ঝড় আসিলে আমাদিগের বাহক ও দাসদাসীগণ আমাদিগকে ফেলিয়া কোথায় গিয়াছে, বলিতে পারি না ।” যুবক কহিলেন, “চিন্ত করিবেন না, আপনার ৰিশ্রম করুন, কাল প্রাতে আমি আপনাদিগকে গৃহে রাখিয়া আসিব ।” রমণী কহিল, “শৈলেশ্বর আপনার মঙ্গল করুন - অৰ্দ্ধরাত্রে ঝটিকা বৃষ্টি নিবারিত হইলে যুবক কহিলেন, “আপনার এইখানে কিছুকাল কোনরূপে সাহসে ভয় করিয়া থাকুন। আমি একটা প্রদীপসংগ্রহের জন্য নিকটবৰ্ত্তী গ্রামে যাই ।” এই কথা শুনিয়া যিনি কথা কহিতেছিলেন, তিনি কছিলেন, “মহাশয়, গ্রাম পৰ্য্যন্ত যাইতে হইবে না। এই মন্দিরের রক্ষক এক গুণ তৃত্য অতি নিকটেষ্ট বসতি করে, জ্যোৎস্ব প্রকাশ কষ্টয়াছে ; মন্দিরের বাহির হইতে তাহার কুটার দেখিতে- পাইবেন । সে ব্যক্তি একাকী প্রান্তরমধ্যে বাস করিয়া থাকে, এজন্য সে গৃহে সৰ্ব্বদা অগ্নি জালিবার সামগ্রী রাখে ” যুবক এই কথামুসারে মন্দিরের বাহিরে আসিয়া জ্যোৎস্কার আলোকে দেবালয়-রক্ষকের গৃহ দেখিতে পাইলেন । গৃহদ্বারে গমন করিয়া তাহার নিদ্রাভঙ্গ করিলেন। মন্দির-রক্ষক ভয়প্রযুক্ত দ্বারোদঘাটন না করিয়ু প্রথমে অন্তরাল হইতে কে আসিয়াছে 8 বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী দেখিতে লাগিল । বিশেষ পর্য্যবেক্ষণে পথিকের কোন দম্যলক্ষণ দৃষ্ট হইল না, বিশেষতঃ তৎস্বীকৃত স্বর্ণমুদ্রার লোভ সংবরণ করা তাছার পক্ষে কষ্টসাধ্য হইয়া উঠিল । সাত পাচ ভাবিয়া মন্দির-রক্ষক দ্বার খুলয় প্রদীপ জালিয়া দিল । পাস্থ প্রদীপ আনিয়া দেখিলেন, মন্দিরমধ্যে শ্বেতপ্রস্তর নিৰ্ম্মিত শিবমূৰ্ত্তি স্থাপিত আছে। সেই মূৰ্ত্তির পশ্চাদ্ভাগে দুই জন মাত্র কামিনী । যিনি নবীন, তিনি দ্বীপ দেখিবামাত্র সাবগুণ্ঠনে নম্রমুখী হইয়া বসিলেন। পরন্তু তাহার অনাবৃত প্রকোষ্ঠে হীরকমণ্ডিত চুড় এবং বিচিত্র কারুকার্যখচিত পরিচ্ছদ, তদুপরি রত্নাভরণপারিপাট্য দেখিয়া পান্থ নিঃসন্দেহ জানিতে পারিলেন যে, এই নবীন হীনবংশসস্তৃতা নহে । দ্বিতীয়া রমণীর পরিচ্ছদের অপেক্ষাকৃত হীন৷ র্ঘতায় পথিক বিবেচনা করিলেন যে, ইনি নবীনার সহচারিণী দাসী হইবেন ; অথচ সহচরাচর দাসীর অপেক্ষা সম্পন্ন । বয়ঃক্রম পঞ্চত্রিংশৎ বর্ষ বোধ হইল । সহজেই যুব পুরুষের উপলব্ধি হইল যে, বয়োজ্যেষ্ঠারই সহিত র্তাহার কথোপকথন হুইতেছিল । তিনি সবিস্ময়ে ইহাও পৰ্য্যবেক্ষণ করিলেন যে, তদুভযুমধ্যে কাহারও পরিচ্ছদ এতদেশীয় স্ত্রীলোকদিগের স্তায় নহে, উভয়েই পশ্চিমদেশীয় অর্থাৎ হিন্দুস্থানী স্ত্রীলোকের বেশধারিণী । বুৰক মন্দিরাভ্যস্তরে উপযুক্ত স্থানে প্রদীপ স্থাপন করিয়া রমণীদিগের সম্মুখে দাড়াইলেন । তখন র্তাহার শরীরোপরি দীপরশ্মিসমূহ প্রপতিত হইলে রমণীরা দেখিলেন যে, পথিকের বয়ঃক্রম পঞ্চবিংশতি বৎসরের কিঞ্চিম্মাত্র অধিক হইবে ; শরীর এভাদৃশ দীর্ঘ যে, অষ্ঠের তাদৃশ দৈর্ঘ্য অসৌষ্ঠবের কারণ হইত। কিন্তু যুবকের বক্ষোবিশালতা এবং সৰ্ব্বাঙ্গের প্রচুরায়ত গঠন গুণে সে দৈর্ঘ্য অলৌকিক ঐসম্পাদক হুইয়াছে ; প্রার্টু-সন্তত নবদুৰ্ব্বাদল-তুল্য অথবা তদধিক মনোজ্ঞ কাস্তি ; বসন্ত প্রস্থত নবপত্রাবলীতুল্য বর্ণোপরি ক4চাদি রাজপুতজাতির পরিচ্ছদ শোভা করিতেছিল, কটিদেশে কটিবন্ধে কোষসংবদ্ধ অসি, দীর্ঘ করে দীর্ঘ বর্শ ছিল, মস্তকে উষ্ণাষ, তদুপরি এক খণ্ড হারক, কৰ্ণে মুক্তাসহিত কুণ্ডল ; কণ্ঠে রত্নহার। পরস্পর সম্প্রদর্শনে উভয় পক্ষেই পরস্পরের পরিচয় জন্য বিশেষ ব্যথ হইলেন, কিন্তু কেহুই প্রথমে পরিচয় জিজ্ঞাসার অভদ্রতা স্বীকার করিতে সহসা ইচ্ছুক গুইলেন ম৷ ৷