পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুর্গেশনন্দিনী না দেখিয়া কহিলেন, —“তুমি যন্ত্রণ পাইভেচ্ছ, ফিরিয়৷ যাও, পূৰ্ব্বকথা বিস্তৃত হও।” তিলোত্তমার আর ভ্রম রহিল না, অকস্মাৎ বৃক্ষচ্যুত বল্লীবং ভূতলে পতিত হইলেন ।

  • ====

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ মোহু জগতসিংহ আনত হইয়া দেখিলেন, তিলোত্তমার ম্পন্দন নাই । নিজ বস্ত্র দ্বার বাজন করিতে লাগিলেন, তথাপি তাহার কোন সংজ্ঞাচিহ্ন ন| দেখিয়া প্রহরীকে ডাকিলেন । ఖ్వె র্তাহার নিকটে আসিল । জগতসিংহ তাহাকে কহিলেন, “ইনি অকস্মাৎ মূচ্ছিত৷ হইয়াছেন । কে ইহার সঙ্গে আসিয়াছে, তাহাকে আসিয়া শুশ্ৰষ করিতে বল " প্রহরী কহিল,--“কেবল আমিই সঙ্গে আসিয়াছি ” রাজপুল বিস্ময়াপন্ন হইয়। কহিলেন, “তুমি ?” প্রহরী কহিল, “আর কেহ আইসে নাই ।” “ভবে কি উপায় হইবে ? কোন পরিদাসীকে সংবাদ কর " প্রহরা ঢলিল । রাজপুত্র আবার তাহকে ৬াকিয়৷ কহিলেন, “শোন, অপর কাহাকে সংবাদ দিলে গোলযোগ হইবে ; আর আজ রাত্রে কেষ্ট বা প্রমোদ ত্যাগ করিয়া ইহার সাহায্যে আসিবে ?” প্রহরী কহিল, “সেও বটে । আর কাহাকেই ব৷ প্রহরার কারাগারে প্রবেশ করিতে দিবে ? অন্য কোন লোককে কারাগারে আনিতে আমার সাহস হয় ন| |" রাজপুত্ৰ কহিলেন, “তবে কি করিব ? ইহার এক মাত্র উপায় আছে, তুমি ঝটিতি দাসীর দ্বারা নবাবপুত্রীর নিকট এ কথার সংবাদ কর ।” প্রহরী দ্রুতবেগে তদভিপ্রায়ে চলিল। রাজপুত্র সাধ্যমত তিলোত্তমার শুশ্ৰুষা করিতে লাগিলেন । তখন রাজপুত্ৰ মনে কি ভাবিতেছিলেন, কে বলিবে ? চক্ষুতে জল আসিয়াছিল কি না, কে বলিবে ? রাজকুমার একাকী কারাগারে তিলোত্তমাকে লইয়া অত্যন্ত ব্যস্ত হইলেন। যদি আয়েষার নিকট \್ಲಿ যাইতে না পারে, যদি আয়েয কোন উপায় করিতে না পারেন, তবে কি হইবে ? N, তিলোত্তমার ক্রমে অল্প অল্পচেতনা হইতে লাগিল। মুক্ত দ্বারপথে জগৎসিংহ দেথিতে পাইলেন હજી ষে, প্রহরীর সঙ্গে দুইটি স্ত্রীলোক আসিতেছে, এক জঙ্গু অবগুণ্ঠবতী ; দূর হইতেই অবগুণ্ঠনবতীর উন্নত শীন্ধ: সঙ্গীতমধুর পদবিন্যাস, লাবণ্যময়ী গ্রীবাভঙ্গী দেী জানিতে পারিলেন যে, দাসীসঙ্গে আয়েয। স্বয়ং আ ছেন, আর যেন সঙ্গে সঙ্গে ভরসা আসিতেছে। ." আয়েষা ও দাসী প্রহরীর সঙ্গে কারাগারবারেঃ আসিলে, দ্বাররক্ষক অঙ্গুরীয়বাহক প্রহরীকে জিজ্ঞাসা করিল, “ষ্টতাদেরও যাইতে দিতে হইবে কি ?” ১ঃ অঙ্গুরীয়বাচক কহিল, “তুমি জান—আমি জানিঃ ন} । - ፨ রক্ষী কছিল, “উত্তম " এই বলিয়। স্ত্রীলোকদিগকে কক্ষমধ্যে প্রবেশ কবিতে নিষেধ করিল। নিষেধ শুনিয়। আরেস মুখের অবগুণ্ঠন মুক্ত করিয়া কহিলেন, “প্রহরি ! আমাকে প্রবেশ করিতে দাও, যদি ইহাতে তোমার প্রতি কোন মন্দ ঘটে, আমার দোষ দিও।” প্রহরী আয়েষাকে চিনিত না। কিন্তু দাসী চুপি । চুপি পরিচয় দিল। প্রহরী বিস্মিত হইয়া অভিবাদন’ করিল এবং করযোড়ে কহিল, “দীনের অপরাধ মার্জনা হয়, আপনার কোথাও যাইতে নিষেধ নাই ।” - আয়েমা কারাগারমধ্যে প্রবেশ করিলেন । সে সময় তিনি হাসিতেছিলেন না, কিন্তু মুখ স্বতঃসহাস্য : বোধ হইল, হাসিতেছেন । কারাগারের শ্ৰী ফিরিল ; কাহারও বোধ হইল ন যে, এ কারাগার। আয়েয রাজপুলকে অভিবাদন করিয়া কহিলেন, “রাজপুল ! এ কি সংবাদ ?” - রাজপুত্র কি উত্তর করিবেন ? উত্তর না করিয়া অঙ্গুলি নির্দেশে ভূতলশায়িনী তিলোত্তমাকে দেখাইয়া দিলেন । r. আরেষা তিলোত্তমাকে নিরীক্ষণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন “ইনি কে ?” রাজপুত্র সঙ্কুচিত হইয়া কহিলেন, “বীরেন্দ্রসিংহের কণ্ঠ। " আয়েয। তিলোত্তমাকে কোলে করিয়া বসিলেন । আর কেহ কোনরূপ সঙ্কোচ করিতে পারিত, সাতপাচ ভাবিত ; আয়েয। একেবারে ক্রোড়ে তুলিয়৷ লহলেন । আয়েযা যাহা করিতেন, তাহাই সুন্দর দেখাইত ; সকল কাৰ্য্য সুন্দর করিয়া করিতে পারিতেন ; যখন তিলোত্তমাকে ক্রোড়ে লইয়া বসিলেন, জগৎসিংহ আর দাসী উভয়েই মনে মনে ভাবিলেন, “কি সুন্দর ” দাসীর হস্ত দিয়া আয়েষ গোলাব, সরবৎ প্রভৃতি, আনিয়াছিলেন ; তিলোত্তমাকে তৎসমুদয় সেবন ও সেচন করাইতে লাগিলেন । দাসী ব্যঞ্জন করিতে