পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খার প্রেয়সী হইয়া বসিয়াছ ? না হবে কেন, যে হাসি, যে অঙ্গভঙ্গী, ষে সরস কথা-রহস্ত, ষে কটাক্ষ ! আবার সরাব ! কতলু খা, সাবধান ! কতলু খ৷ কি করিবে ! যে চাহনি চাহিয়া বিমলা হাতে সুরাপাত্র দিতেছে ! ও কি ধ্বনি ? এ কে গায় ? এ কি মানুষের গান, না, সুররমণী গায় ? বিমল গায়িকাদিগের সহিত গায়িতেছে। কি মুর ! কি ধ্বনি ! কি লয় ! কতলু খাঁ, এ কি ? মন কোথায় তোমার, কি দেখিতেছ ? সমে সমে হাসিয়া কটাক্ষ করিতেছে ; ছুরির অধিক তোমার হৃদয়ে বসাইতেছে, তাঁহাই দেখিতেছ? আমনি কটাক্ষে প্রাণ হরণ করে, আবার সঙ্গীতের সন্ধি সম্বন্ধ কটাক্ষ । আরও দেখিয়াছ, কটাক্ষের সঙ্গে আবার অল্প মস্তক-দোলন ? দেখিয়াছ সঙ্গে সঙ্গে কেমন কর্ণাভরণ জুলিতেছে ? ই ! আবার সুর ঢাল দে মদ দে, এ কি ! এ কি ! বিমল উঠিয়া নাচিতেছে! কি সুন্দর । কিব। ভঙ্গী ! দে মদ ! কি অঙ্গ ! কি গঠন ! কতলু র্থ ! জাহাপন ! স্থির হও ! স্থির ! উঃ ! কতলুর শরীরে অগ্নি জলিতে লাগিল । পিয়াল ! আহা ! দে পিয়াল ! মেরি পিয়ারি ! আবার কি ? এর উপর হাসি, এর উপর কটাক্ষ । সরাব ! দে সরাব ! কতলু খ উন্মত্ত হইল। বিমলাকে ডাকিয়। কহিল “তুমি কোথায় প্রিয়তমে !" বিমলা কতলু খাঁর স্বন্ধে এক বাহু দিয়া কহিলেন “দাসী শ্রীচরণে ”—অপর করে ছুরিক।– তৎক্ষণাৎ ভয়ঙ্কর চীৎকার ধ্বনি করিয়া বিমলাকে কতলু খাঁ দূরে নিক্ষেপ করিল ; এবং যেই নিক্ষেপ করিল, অমনি আপনিও ধরাতলশায়ী হইল । বিমল। ভাহার বক্ষঃস্থলে আমূল তীক্ষু ছুরিক বসাইয়। দিয়াছিলেন । “পিশাচী—সয়তানী !" কতলু গ৷ এই কথ। বলিয়া চীৎকার করিল। “পিশাচী নহি—সয়তানী নছি—বীরেন্দ্রসিংহের বিধব। স্ত্রী।” এই বলিয়৷ বিমলা কক্ষ হইতে দ্রুতবেগে পলায়ন করিলেন । কতলু খার বাঙ নিষ্পত্তি ক্ষমতা ঝটিতি রহিত হইয়া আসিতে লাগিল। তথাপি সাধ্যমত চীৎকার করিতে লাগিল । বিবির যথাসাধ্য চীৎকার করিতে লাগিল। বিমলাও চীৎকার করিতে করিতে ছুটলেন । কক্ষাস্তরে গিয়া কথোপকথন-শব্দ পাইলেন । ৰিমল উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিলেন। এক কক্ষ পরে দেখেন তথায় eারী ও খোজাগণ রহিয়াছে। চীৎকার শুনিয়া ও বিমলার ত্রস্তভাব দেখিয়া তাহারা জিজ্ঞাসা করিল, বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী প্রত্যুৎপন্নমতি বিমলা কহিলেন, “সৰ্ব্বনাশ হইয়াছে। শীঘ্ৰ যাও, কক্ষমধ্যে মোগল প্রবেশ করিয়াছে, বুঝি নবাবকে খুন করিল।” প্রহরী ও খোজাগণ উর্দ্ধশ্বাসে কক্ষাভিমুখে ছুটিল । বিমলাও উৰ্দ্ধশ্বাসে অন্তঃপুর দ্বারাভিমুখে পলায়ন করিলেন । দ্বারে প্রহরী প্রমোদক্রান্ত হইয়া নিদ্রা ধাইতেছিল, বিমল বিনা বিঘ্নে দ্বার অতিক্রম করিলেন ; দেখিলেন, সৰ্ব্বত্রই প্রায় ঐরুপ, অবাধে দোঁড়িতে লাগিলেন । বাহিরে ফটকে দেখিলেন, প্রহরিগণ জাগরিত । এক জন বিমলাকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কে ও, কোথা যাও ?” তখন অস্তঃপুরমধ্যে মহা কোলাহল উঠিয়াছে, সকল লোক জাগিয়া সেই দিকে ছুটিতেছিল । বিমলা কহিলেন, “বসিয়া কি করিতেছ, গোলযোগ শুনিতেছ না ?” প্রহরী জিজ্ঞাস করিল, “কিসের গোলযোগ ?” বিমল কহিলেন, “অস্তঃপুরে সর্বনাশ হইতেছে, নবাবের প্রতি আক্রমণ হইয়াছে।” প্রহরিগণ ফটক ফেলিয়া দৌড়িল ; বিমল নিৰ্ব্বিঘ্নে নিষ্ক্রাস্ত হইলেন । বিমল ফটক হইতে কিয়দর গমন করিয়া দেখিলেন যে, এক জন পুরুষ এক বৃক্ষতলে দাড়াইয়। আছেন। দৃষ্টিমাত্র বিমল তাহাকে অভিরাম স্বামী বলিয়া চিনিতে পারিলেন । বিমল তাহার নিকট যাইবামাত্র অভিরাম স্বামী কহিলেন, “আমি বড়ই উদ্বিগ্ন হইতেছিলাম ; দুর্গমধ্যে কোলাহল কিসের ?” বিমল উত্তর করিলেন, “আমি বৈধব্য যন্ত্রণার প্রতিশোধ করিয়া আসিয়াছি । এখানে আর অধিক কথায় কাজ নাই, শীঘ্র আশ্রমে চলুন ; পরে সবিশেষ নিবেদিব । তিলোত্তম। আশ্রমে গিয়াছে ত ?” অভিরাম স্বামী কহিলেন, “তিলোত্তম অগ্ৰে অগ্ৰে আশ মানীর সহিত যাইতেছে, শীঘ্র সাক্ষাৎ হইবে ।” এই বলিয়। উভয়ে দ্রুতবেগে চলিলেন । অচিরাৎ কুটারমধ্যে উপনীত হইয় দেখিলেন, ক্ষণপূৰ্ব্বেই আয়েষার অনুগ্রহে তিলোত্তম। আশ মানীর সঙ্গে তথায় আসিয়াছেন। তিলোত্তম অভিরাম স্বামীর পদযুগলে প্রণত হইয়া রোদন করিতে লাগিলেন । অভিরাম স্বামী তাহাকে স্থির করিয়া কহিতে লাগিলেন, “ঈশ্বরেচ্ছায় তোমরা দুরাত্মার হস্ত হইতে মুক্ত হইলে, এখন আর তিলাৰ্দ্ধ এ দেশে তিষ্ঠান নছে । যবনের সন্ধান পাইলে এবারে প্রাণে মারিয়া, প্রভুর