পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭২ রাখিয়া অশ্বে কশাঘাত করিয়া শিবিরাভিমুখে চলিলেন। ,';, রাজপুত্র শিবিরে উপনীত হইবার পরদিন দ্বিতীয় এক লিপি দূতহস্তে পাইলেন। এই লিপি আয়েবার প্রেরিত । কিন্তু তদৃবৃত্তাস্ত পর-পরিচ্ছেদে বক্তব্য । উনবিংশ পরিচ্ছেদ আয়েষার পত্র আয়েষা লেখনী-হস্তে পত্র লিখিতে বসিয়াছেন । মুখকাস্তি অত্যন্ত গম্ভীর. স্থির ; জগৎসিংহকে পত্র লিখিতেছেন । একখান। কাগজ লইয়া পত্র আরম্ভ করিলেন। প্রথমে লিখিলেন, “প্রাণাধিক”, তখনই প্রাণাধিক শব্দ কাটিয়া দিয়া লিখিলেন, “রাজকুমার,” “প্রাণাধিক” শব্দ কাটিয়া “রাজকুমার" লিখিতে জায়েষার অশ্রধার। বিগলিত হইয়। পত্রে পড়িল । আয়েষ অমনি সে পত্র ছিড়িয়া ফেলিলেন । পুনৰ্ব্বার অন্ত কাগজে আরম্ভ করিলেন ; কিন্তু কয়েক ছত্র লেখ| ইণ্ডে না হইতে আবার পত্র অশ্রুকলঙ্কিত হইল । ক্ষীশ্লেষ। সে লিপিও বিনষ্ট করিলেন । অন্যবারে ঈশ্রচিহ্নপূন্য একখণ্ড লিপি সমাধা করিলেন । সমাধা করিয়া একবার পড়িতে লাগিলেন, পড়িতে নয়নবাম্পে দৃষ্টিলোপ হইতে লাগিল । কোনমতে লিপি বদ্ধ করিয়া দূতহস্তে দিলেন । লিপি লইয়া দূত রাজপুত শিবিরাভিমুখে যাত্রা করিল। আয়েষ। একাকিনী পালঙ্কশয়নে রোদন করিতে লাগিলেন । জগৎসিংহ পত্র পাইয়া পড়িতে লাগিলেন । “রাজকুমার ! , আমি যে তোমার সহিত সাক্ষাৎ করি নাই, সে স্থাখুধৈৰ্য্যের প্রতি অবিশ্বাসিনী বলিয়া নহে। মনে ধ্ৰুরিও ন-আয়েৰ অধীর। ওসমান নিজ হৃদয়মধ্যে অগ্নি জালিত করিয়াছে। কি জানি, আমি তোমার সাক্ষাৎলাভ করিলে যদি সে ক্লেশ পায়, এই अछ३८डभाद्र সহিত সাক্ষাৎ করি নাই ৷ সাক্ষাৎ ট্রা ইলে, তুমি যে ক্লেশ পাইবে, সে ভরসাও করি নাই। নিজের ক্লেশ–সে সকল মুখ দুঃখ জগদীশ্বরের চরণে সমর্পণ করিয়াছি । তোমাকে যদি সাক্ষাতে বিদায় দিতে হইত.. তবে সে ক্লেশ অনায়াসে সহ করিতাম। তোমার সহিত যে সাক্ষাৎ হইল না, এ ক্লেশও পাবাণীর স্তায় সহ করিতেছি। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী তবে এ পত্র লিখি কেন ? এক ভিক্ষা আছে, সেই জন্যই এ পত্র লিখিলাম । যদি শুনিয়া থাক যে, আমি তোমাকে স্নেহ করি, তবে তাহা বিস্তুত হও । এ দেহ বর্তমানে এ কথা প্রকাশ করিব না সঙ্কল্প ছিল, বিধাতার ইচ্ছায় প্রকাশ হইয়াছে, এক্ষণে বিস্তৃত হও । আমি তোমার প্রেমাকাঙ্কিণী নহি । আমি যাহা দিবার, তাহ দিয়াছি ; তোমার নিকট প্রতিদান কিছুই চাহি না । আমার স্নেহ এমন বদ্ধমূল যে, তুমি স্নেহ ন করিলেও আমি সুখী ; কিন্তু সে কথায় আjর কাজ কি ? তোমাকে অসুখী দেখিয়াছিলাম। যদি কখনও সুখী হও, আয়েষাকে স্মরণ করিয়া সংবাদ দিও । ইচ্ছা না হয়, সংবাদ দিও না । যদি কখনও অস্তঃকরণে ক্লেশ পাও, তবে আয়েষাকে কি স্মরণ করিবে ? আমি যে তোমাকে পত্র লিখিলাম, কি যদি ভবিষ্যতে লিখি, তাহাতে লোকে নিন্দ করিবে । আমি নির্দোষী, সুতরাং তাহাতে ক্ষতি বিবেচন। করিও না-যখন ইচ্ছা হইবে, পত্র লিখিও । তুমি চলিলে, আপাততঃ এ দেশ ত্যাগ করিয়া চলিলে । এই পাঠানের শাস্ত নহে । সুতরাং পুনৰ্ব্বার তোমার এ দেশে আসাই সম্ভব । কিন্তু আমার সহিত আর সন্দর্শন হইবে না । পুনঃ পুনঃ হৃদয়মধ্যে চিন্তা করিয়া ইহা স্থির করিয়াছি । রমণী হৃদয় যেরূপ দুৰ্দ্দমনীয়, তাহাতে অধিক সাহস অনুচিত । আর একবারমাত্র তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিব মানস আছে। যদি তুমি এ প্রদেশে বিবাহ কর, তবে আমায় সংবাদ দিও ; আমি তোমার বিবাহকালে উপস্থিত থাকিয়া তোমার বিবাহ দিব । ষিনি তোমার মহিষী হইবেন, তাহার জন্য কিছু সামান্য অলঙ্কার সংগ্ৰহ করিয়া রাখিলাম ; যদি সময় পাই, স্বহস্তে পরাইয়া দিব ! আর এক প্রার্থনা । যখন আয়েযীর মৃত্যুসংবাদ তোমার নিকট যাইবে, তখন একবার এদেশে আসিও। তোমার নিমিত্ত সিন্ধুকমধ্যে যাহা রহিল, তাই আমার অনুরোধে গ্রহণ করিও } আর কি লিখিব ? অনেক কথা লিখিতে ইচ্ছ। করে, কিন্তু নিম্প্রয়োজন । জগদীশ্বর তোমাকে সুখী করিবেন, আয়েযার কথা মনে করিয়া কখনও দুঃখিত হইও না ।” জগতসিংহ পত্র পাঠ করিয়া বহুক্ষণ * তাম্বুমধ্যে পত্ৰহস্তে পাদচারণ করিতে লাগিলেন । পরে অকস্মাৎ শীঘ্রহস্তে একখানা কাগজ লইয়। নিম্নলিখিত পত্র লিখিয়া দূতের হস্তে দিলেন।