পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& বঙ্কিমচক্সের গ্রন্থাবলী জগৎসিংহুও হাসিয়া কছিলেন, “সঙ্গে গিয়া তোমাদের বাট রাখিয়া আসিব ।” সহচরী দেখিলেন, বিষম সঙ্কট । কোন বিশেষ কারণে তিনি নবীনার পরিচয় দিল্লীশ্বরের সেনাপতির নিকট দিতে সম্মত ছিলেন না, তিনি যে তাহাদিগকে সঙ্গে করিয়া রাখিয়া আসিবেন, ইহাতে আরও ক্ষতি, সে ত পরিচয়ের অধিক ; অতএব সহচরী অধোবদনে রছিলেন । এমন সময়ে মন্দিরের অনতিদূরে বহুতর অশ্বের পদধ্বনি হইল ; রাজপুত্র অতিব্যস্ত হইষা মন্দিরের বাহিরে যাইয়া দেখিলেন যে, প্রায় শত অশ্বারোহী সৈন্ত যাইতেছে। তাহাদিগের পরিচ্ছদ দৃষ্টিমাত্র জানিতে পারিলেন ষে, তাহার। র্তাহারই রাজপুত সেনা । ইতিপূৰ্ব্বে যুবরাজ যুদ্ধ সম্বন্ধীয় কাৰ্য্যসম্পাদনে বিষ্ণুপুর অঞ্চলে যাইয়। ত্বরিত এক শত অশ্বারোহী সেনা লইয়া পিতৃসমক্ষে যাইতেছিলেন । অপরাহ্লে সমভিব্যাহারিগণের অগ্রসর হইয়। আসিয়াছেন ; পশ্চাৎ তাহার এক পথে, তিনি অন্ত পথে যাওয়াতে, তিনি একাকী প্রাস্তরমধ্যে ঝটিকবৃষ্টিতে বিপদগ্ৰস্ত হইয়াছিলেন । এক্ষণে তাহাদিগকে পুনৰ্ব্বার দেখিতে পাইলেন এবং সেনাগণ র্তাহাকে দেখিতে পাইয়াছে কি না, জানিবার জন্ত কহিলেন, “দিল্লীশ্বরের জয় হউক!” এই কথা কহিবামাত্র এক জন অশ্বারোহী তাছার নিকটে আসিল । যুবরাজ তাহাকে দেখিয়া কহিলেন, "ধরমসিংহ, আমি ঝড়বৃষ্টির কারণে এখানে অপেক্ষা করিতে" ছিলাম * ধরমসিংহ নতভাবে প্রণাম করিয়া কহিল, “আমরা যুবরাজের বহু অমুসন্ধান করিয়৷ এখাপেক্ষ আসিয়াছি, অশ্বকে এই বটবৃক্ষের নিকটে পাইয়৷ আনিয়াছি।” জগৎসিংহ কহিলেন, “অশ্ব লইয়। তুমি এইখানে অপেক্ষা কর, আর দুই জনকে নিকটস্থ কোন গ্রাম হইতে শিবিক ও তদুপযুক্ত বাহক আনিতে পাঠাও, অবশিষ্ট সেনাগণকে অগ্রসর হইতে বল ।” ধরমসিংহ এই আদেশ প্রাপ্ত হইয়া কিঞ্চিৎ ৰিস্মিত হইল, কিন্তু প্রভুর আজ্ঞায় প্রশ্ন অনাবশ্বক জানিয়া, “যে আজ্ঞা” বলিয়া সৈন্তদিগকে যুবরাজের অভিপ্রায় জানাইল । সৈন্তমধ্যে শিবিকার বার্তা শুনিয়া ঈষৎ হাস্ত করিয়া অপরকে কহিল, “আজ যে বড় নূতন পদ্ধতি।” কেহ বা উত্তর করিল, “না হবে কেন ? মহারাজ রাজ পুতপতির শত শত মহিষী ৷” কেহ কেহ । এ দিকে যুবরাজের অনুপস্থিতিকালে অবসর পাইয়া অবগুণ্ঠন মোচন পূর্বক সুন্দরী সহচরীকে কহিল, “বিমল, রাজপুত্রকে পরিচয় দিতে তুমি অসম্মত কেন ?” বিমল কহিল, “সে কথার উত্তর আমি তোমার পিতার কাছে দিব ; এক্ষণে অtয় এ কিসের গোলযোগ শুনিতে পাই ?” নবীনা কহিল, “বোধ করি, রাজপুত্রের কোন সৈন্তাদি র্তাহার অনুসন্ধানে আসিয়া থাকিবে, যেখানে স্বয়ং যুবরাজ রহিয়াছেন, সেখানে চিন্তা কর কেন ?” যে অশ্বারোহিগণ শিবিকাবাহুকাদির অন্বেষণে গমন করিয়াছিল, তাহারা প্রত্যাগমন করিবার পূৰ্ব্বেই যে বাহক ও রক্ষিবর্গ স্ত্রীদিগকে রাখিয়া বৃষ্টির সময়ে গ্ৰামমধ্যে গিয়া আশ্রয় লইয়াছিল, তাহার। রিয়া আসিল । দূর হইতে তাহাদিগকে দেখিয়া জগতসিংহ মন্দিরমধ্যে পুনঃ প্রবেশ পুৰ্ব্বক পরিচারি কাকে কহিলেন, “কয়েক জন অস্ত্রধারী ব্যক্তির সহিত বাহকগণ শিবিক লইয়া আসিতেছে, উহার তোমাদিগের লোক কি না, বাহিরে অলিয়। দেখ ” বিমলা মন্দিরদ্ধারে দাড়াইয়া দেখিল যে, তাহারা র্তাহাদিগের রক্ষিগণ বটে । রাজকুমার কহিলেন, “তবে আমি আর এখানে দাড়াইব না, আমার সহিত ইহাদিগের সাক্ষাতে অনিষ্ট ঘটতে পারে। অতএব আমি চলিলাম । শৈলে’ শ্বরের নিকটে প্রার্থনা করি, তোমরা নিৰ্ব্বিঘ্নে বাটী উপনীত হও ; তোমাদিগের নিকট এই প্রার্থনা করি যে, আমার সহিত সাক্ষাৎ হইয়াছিল, এ কথা সপ্তাহ্মধ্যে প্রকাশ করি ও না ; বিশ্বতও হইও না, বরং স্মরণার্থ এই সামান্ত বস্তু নিকটে রাখ । আর আমি তোমার প্রভুকন্যার ষে পরিচয় পাইলাম না, এই কথাই আমার হৃদয়ে স্মরণার্থ চিহ্নস্বরূপ রহিল ।” এই বলিয়া উষ্ণীব হইতে মুক্তাহার লইয়া বিমলার মস্তকে স্থাপন করিলেন । বিমলা মহার্য রত্নহার কেশপাশে ধরিয়া রাজকুমারকে বিনীতভাৰে প্ৰণাম করিয়া কছিল, “যুবরাজ ! আমি যে পরিচয় দিলাম ন, ইহাতে আমাকে অপরাধিনী ভাবিবেন না, ইহার অবশু উপযুক্ত কারণ আছে । যদি আপনি এ বিষয়ে নিতান্ত কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া থাকেন, তবে অদ্য হইতে পক্ষাস্তরে আপনার সহিত কোথায সাক্ষাৎ হইতে পাপ্লিবে, বলিয়া দিন ।” জগৎসিংহ কিয়ুৎকাল চিন্তা করিয়া কছিলেন, “অদ্য হইতে পক্ষাস্তরে রাত্রিকালে এই মন্দিরমধ্যেই