পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল (È হর । পুজি করিও, দশ টাকা মতি গোয়ালিনীকে দিও । ব্র । গোয়ালা-ফোয়ালার কোন এলাকা রাখি না । কিন্তু আমায় করিতে হুইবে কি ? হর । দুইটি কলম কাট । দুইটি যেন ঠিক मृषांन ज्ञ्याः । ব্র । আচ্ছা ভাই—যা বল, তাই শুনি । এই বলিয়া ঘোষজা মহাশয় দুইটি নূতন কলম লইয়া ঠিক সমান করিয়া কাটিলেন এবং লিখিয়। দেখিলেন যে, দুইটিরই লেখা এক প্রকার দেখিতে হয়। তখন হরলাল বলিলেন, “ইহার একটি কলম বাক্সেতে তুলিয়া রাখ। যখন উইল লিখিতে যাইবে, এই কলম লইয়া গিয়া ইহাতেই উইল লিখিবে । দ্বিতীয় কলমটি লইয়া এখন একখানা লেখাপড়া করিতে করিতে হুইবে । তোমার কাছে ভাল কালি আছে ?” ব্ৰহ্মানন্দ মসীপাত্র বাহির করিয়া লিখিয়া দেখাইলেন । হরলাল বলিতে লাগিলেন, “ভাল, এই কালি উইল লিখিতে লইয়া যাইও ।” ব্র । তোমাদিগের বাড়ীতে কি দোয়াত-কলম নাই ষে, আমি ঘাড়ে করিয়া নিয়া যাব ? হর । আমার কোন উদেষ্ঠ আছে—নচেং তোমাকে এত টাকা দিলাম কেন ? ব্র । আমিও তাই ভাবিতেছি বটে, ভাল বলেছ ভাই রে ! হর । তুমি দোয়াত-কলম লইয়া গেলে কেহ ভাবিলেও ভাবিতে পারে আজি এটা কেন ? তুমি সরকারী কালি-কলমে গালি পাড়িও ; তাহ হইলেই শোধরাইবে । ব্র । তা সরকারী কালিকলমকে শুধু কেন ? সরকারকে শুদ্ধ গালি পাড়িতে পারিব । হর । তত আবিষ্ঠক নাই । এক্ষণে আসল কৰ্ম্ম আরম্ভ কর । তখন হরলাল দুইখানি জেনারেল লেটার কাগজ ব্ৰহ্মানন্দের হাতে দিলেন । ব্ৰহ্মানন্দ বলিলেন, “এ ষে সরকারী কাগজ দেখিতে পাই ।” “সরকারী নহে—কিন্তু উকীলের বাড়ীর লেখাপড়া এই কাগজে হইয়া থাকে। কৰ্ত্তাও এই কাগজে উইল লেখাইয়া থাকেন, জানি । এজন্য এই কাগজ আমি সংগ্ৰহ করিয়াছি । ষাহ বলি, তাহা এই কালি-কলমে লেখ ।” ব্ৰহ্মানন্দ লিখিতে আরম্ভ করিল। হরলাল একখানি উইল লেখাইয়। দিলেন। তাছার মৰ্ম্মার্থ এই, —কৃষ্ণকান্ত রায় উইল করিতেছেন । তাহার নামে যত সম্পত্তি আছে, তাহার বিভাগ কৃষ্ণকাস্তের পরলোকান্তে এইরূপ হইবে । যথা—বিনোদলাল, তিন আনা, গোবিন্দলাল এক পাই, গৃহিণী এক পাই, শৈলবর্তী এক পাই, হরলালের পুত্র এক পাই, হরলাল জ্যেষ্ঠ পুত্ৰ বলিয়া অবশিষ্ট বারে+ আনা । * লেখা হইলে ব্ৰহ্মানন্দ কহিলেন, “এখন ত উইল । লেখা হইল, দস্তখত করে কে ?” “আমি” বলিয়া হরলাল ঐ উইলে কৃষ্ণকান্ত রায়ের এবং চারি জন সাক্ষীর দস্তখত করিয়া দিলেন । می ব্ৰহ্মানন্দ কহিলেন, “ভাল, এ ত জাল উইল ।” হর । এই সাচ্চ উইল হইল, বৈকালে যাহ লিখিবে, সেই জাল । ব্র । কিসে ? হর । তুমি যখন উইল লিখিতে যাইবে, তখন এই উইলখানি আপনার এই পিরাণের পকেটে লুকাইয়া লইয়। যাইবে । সেখানে গিয়া এই কালিকলমে র্তাহাদের ইচ্ছামত উইল লিখিবে । কাগজ, কলম, কালি, লেখক একই ; সুতরাং দুইখানি উইল দেখিতে এক প্রকার হইবে । পরে উইল পড়িয়া শুনান ও দস্তখত হইয় গেলে শেষে তুমি স্বাক্ষর করিবার জন্য লইবে । সকলের দিকে পশ্চাৎ ফিরিয়া দস্তখত করিবে । সেই অবকাশে উইলখানি বদলাইয়৷ লইবে । এইখনি কৰ্ত্তাকে দিয়া কৰ্ত্তার উইলখানি আমাকে আনিয়া দিবে। ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষ ভাবিতে লাগিল । বলিল, “বলিলে কি হয়---বুদ্ধির খেলাটা খেলেছ ভাল ।” হর । ভাবিতেছ কি ? ব্র ৷ ইচ্ছা করে বটে, কিন্তু ভয় করে । তোমার টাকা ফিরাইয়। লও। আমি কিন্তু জালের মধ্যে থাকিব না । “টাকা দাও।” বলিয়া হরলাল হাত পাতিল । ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষ নোট ফিরাইয়া দিল । নোট লইয়া হরলাল উঠিয়া চলিয়া যাইতেছিল। ব্ৰহ্মানন্দ তখন আবার তাহাকে ডাকিয়া বলিল, “বলি ভায়া কি গেলে ?” “না” বলিয়া হরলাল ফিরিল। ব্র । তুমি এখন পাঁচ শত টাকা দিলে। আর কি দিবে ? - হর । তুমি সে উইলখানি আনিয়া দিলে আর পাঁচ শত দিব । - ব্র । অনেকটা—টাকা-লোভ ছাড়া স্বায় না । হর । তবে তুমি রাজি হইলে ?