পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

... è বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ব্ৰ । রাজি না হইয়াই বা কি করি ? কিন্তু বঙ্গল করি কি প্রকারে ? দেখিতে পাইবে ষে । হর। কেন দেখিতে পাইবে ? আমি তোমার সম্মুখে উইল বদল করিয়া লইতেছি, তুমি দেখ দেখি, টের পাও কি না ? - হরলালের অন্য বিদ্যা থাকুক না থাকুক, হস্তকৌশল বিদ্যায় যৎকিঞ্চিৎ শিক্ষা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন । তখন উইলখানি পকেটে রাখিলেন, আর একখানি কাগজ হাতে লইয়। তাহাতে লিখিবার উপক্রম করিলেন। ইত্যবসরে হাতের কাগজ পকেটে, পকেটের কাগজ হাতে কি প্রকারে আসিল, ব্রহ্মানন্দ তাহ। কিছুই লক্ষিত করিতে পারিলেন না। ব্ৰহ্মানন্দ হরলালের হস্ত কৌশলের প্রশংসা করিতে লাগিলেন । হরলাল বলিলেন, “এই কৌশলটি তোমায় শিখাইয়া দিব।” এই বলিয়। হরলাল সেই অভ্যস্ত কৌশল ব্ৰহ্মানন্দকে অভ্যাস করাইতে লাগিলেন । দুই তিন দণ্ডে ব্ৰহ্মানন্দের সেই কৌশলটি অভ্যস্ত হুইল । তখন হরলাল কহিল যে, “আমি এক্ষণে চলিলাম। সন্ধ্যার পর বাকি টাক। লষ্টয়া আসিব ।” বলিয়া সে বিদায় হইল। . হরলাল চলিষা গেলে, ব্ৰহ্মানন্দের বিষম ভয়সঞ্চার হইল। তিনি দেখিলেন যে, তিনি যে কার্য্যে স্বীকৃত হইয়াছেন, তাহ রাজদ্বারে মহা দণ্ডাহঁ অপরাধ—কি জানি, ভবিষ্যতে পাছে তাহাকে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ ছইতে হয় । আবার বদলের সময় যদি কেহ ধরিয়া ফেলে ? তবে তিনি এ কার্য্য কেন করেন ? না করিলে হস্তগত সহস্র মুদ্রা ত্যাগ করিতে হয় । তাহাও হয় না । প্রাণ থাকিতে নয় । হায় ! ফলাহার ! কত দরিদ্র ব্রাহ্মণকে তুমি মৰ্ম্মাস্তিক পীড়া দিয়াছ। এ দিকে সংক্রামক জর প্লীহায় উদর পরিপূর্ণ, তাহার উপর ফলাহার উপস্থিত । তখন কাংস্তপাত্র বা কদলীপত্রে সুশোভিত লুচি, সন্দেশ, মিহিদান, সীতাভোগ প্রভৃতির অমলধবল শোভা সন্দর্শন করিয়া দরিদ্র ব্ৰাহ্মণ কি করিবে ? ত্যাগ করিবে, না আহার করিবে ? আমি শপথ করিয়া বলিতে পারি ষে, ব্রাহ্মণঠাকুর যদি সহস্ৰ বৎসর সেই সজ্জিত পাত্রের নিকট বসিয়া তর্ক-বিতর্ক করেন, তথাপি তিনি এ কুট প্রশ্নের মীমাংসা করিতে পারিবেন না—এবং মীমাংস করিতে না পারিয়া অন্যমনে—পরদ্রব্যগুলি উদরসাত্ব করিবেন । ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষ মহাশয় ঠিক তাই করিল। হরলালের এ টাকা হজম করা ভার-জেলখানার ভয় আছে ; কিন্তু ত্যাগ করাও যায় না । লোভ বড়, কিন্তু বদহজমের ভয়ও বড় ব্ৰহ্মানন্দ মীমাংসা করিতে পারিল না । মীমাংসা করিতে ন পারিয়া দরিদ্র ব্রাহ্মণের মত উদরসাৎ করিবার দিকেই মন রাখিল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ সন্ধ্যার পর ব্ৰহ্মানন্দ উইল লিখিয়া ফিরিয়া আসিলেন । দেখিলেন যে, হরলাল আসিয়া বসিয়া আছেন । হরলাল জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইল ?” ব্ৰহ্মানন্দ একটু কবিতাপ্রিয়। হাসিয়া বলিলেন,— “মনে করি চাদ। ধরি হাতে দিই পেড়ে, বাবল গাছে হাত লেগে আঙ্গুল গেল ছিড়ে ।” হর । পার নাই না-কি ? ব্র । ভাই, কেমন বাধ-বাধ ঠেকিতে লাগিল । কর । পার নাই ? ব্র । না ভাই—এই ভাই তোমার জাল উইল নাও । এই তোমার টাকা । এই বলিয়া ব্ৰহ্মানন্দ কৃত্রিম উইল ও বাক্স হইতে পাঁচ শত টাকার নোট বাহির করিয়া দিলেন । ক্রোধে এবং বিরক্তিতে হরলালের চক্ষু আরক্ত এবং অধর কম্পিত হইল। বলিলেন, "মুখ, অকৰ্ম্ম, স্ত্রীলোকের কাজটাও তোমা হইতে হইল না ? আমি চলিলাম । কিন্তু দেখিও, যদি তোম। হইতে এই কথার বাষ্পমাত্র প্রকাশ পায়, তবে তোমার জীবনসংশয় ।” ব্ৰহ্মানন্দ কছিলেন, “সে ভাবন করিও না । কথা আমার নিকট প্রকাশ পাইবে না।” সেখান হইতে উঠিয়া হরলাল ব্ৰহ্মানন্দের পাকশালায় গেলেন । হরলাল ঘরের ছেলে, সৰ্ব্বত্রই গমনাগমন করিতে পারেন । পাকশালায় ব্ৰহ্মানন্দের ভ্ৰাতৃকন্যা রোহিণী রাধিতেছিল । এই রোহিণীতে আমার বিশেষ কিছু প্রয়োজন আছে । অতএব তাহার রূপ-গুণ কিছু বলিতে হয়, কিন্তু আজিকালি রূপবর্ণনার বাজার নরম—আর গুণ-বর্ণন হাল আইনে আপনার ভিন্ন পরের করিতে নাই ! তবে ইহা বলিলে হয় যে, রোহিণীর যৌবন পরিপূর্ণ-রূপ উছলিয়া পড়িতেছিল, শরতের চন্দ্র ষোলকলায় পরিপূর্ণ। সে অল্পবয়সে বিধবা হইয়াছিল, কিন্তু বৈধব্যের অনুপযোগী অনেকগুলি দোষ তাহার ছিল । দোষ, সে কালাপেড়ে ধুতি পরিত, হাতে চুড়ি পরিত, পানও বুঝি খাইত । এ দিকে রন্ধনে সে দ্রৌপদীবিশেষ বলিলে হর। ঝোল, তিনি কষ্ট্রে