পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল - వ છે. দেরাজ খুললেন এবং অনুসন্ধান করিয়া ঐ উইল বাহির করিলেন । পরে বাক্স হইতে চশমা বাহির করিয়া নাসিকার উপর সংস্থাপনের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন । কিন্তু চশমা লাগাইতে লাগাইতে দুইচারি বার আফিঙ্গের ঝিম্কিনি আসিল—সুতরাং তাহাতে কিছু কালবিলম্ব হইল। পরিশেষে চশম মুস্থির হইলে কৃষ্ণকান্ত উইলে নেত্রপাত করিয়া দেখিয়৷ হান্ত করিয়া কহিলেন, “রোহিণি, আমি কি বুড়ে। হইয়। বিহবল হইয়াছি ? এই দেখ, আমার দস্তখত ।” রোহিণী বলিল, “বালাই, বুড়ো হবে কেন ? আমাদের কেবল জোর করিয়া নাতিনী বল বই ত না । তা ভাল, আমি এখন যাই কাকাকে বলি গিয়া ।” রোহিণী তখন কৃষ্ণকাস্তের শয়ন-মন্দির হইতে নিষ্ক্রান্ত হইল । 豪 一经 密码 豪 গভার নিশীথে কৃষ্ণকান্ত নিদ্র। যাইতেছিলেন, অকস্মাৎ তাহার নিদ্রাভঙ্গ হইল নিদ্রাভঙ্গ হইলে দেখিলেন যে, তাহার শয়নগৃহে দীপ জ্বলিতেছে না । সচরাচর সমস্ত রাত্রি দীপ জ্বলিত ; কিন্তু সে রাত্রে দাপনিৰ্ব্বাণ হইয়াছে দেখিলেন । নিদ্রাভঙ্গকালে এমনও শব্দ তাহার কণে প্রবেশ করিল যে, যেন কে একট চাবি কলে ফিরাইল । এমনও বোধ হইল, যেন ঘরে কে মানুষ বেড়াইতেছে । মানুষ তাহার পর্যাঙ্কের শিরোদেশ পর্য্যন্ত আসিল,—তাহার বালিশে হাত দিল । কৃষ্ণকান্ত আফিঙ্গের নেশায় বিভোর ; না নিদ্রিত না জাগরিত, বড় কিছু হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলেন না। ঘরে যে অলো নাই--তাহাও ঠিক বুঝেন নাই কখন অৰ্দ্ধনিদ্রিত,— কখন অৰ্দ্ধসচেতন,—সচেতনেও চক্ষু খুলে না । একবার দৈবাৎ চক্ষু খুলায় কতকটা অন্ধকার বোধ হইল বটে, কিন্তু কৃষ্ণকান্ত তখন মনে করিতেছিলেন যে, তিনি হরি ঘোষের মোকৰ্দমায় জাল দলিল দাখিল করায় জেলখানায় গিয়াছেন । জেলখান। ঘোরান্ধকার, কিছু পরে হঠাৎ যেন চাবি খোলার শব্দ অল্প কাণে গেল। এ কি জেলের চাবি পড়িল ? হঠাৎ একটু চমক হইল। কৃষ্ণকান্ত শটুক। হাতড়াইলেন, পাইলেন ন—অভ্যাসবশতঃ ডাকিলেন, "হরি ” কৃষ্ণকান্ত অন্তঃপুরে শয়ন করিতেন না—বহিৰ্ব্বী টীতেও শয়ন করিতেন না। উভয়ের মধ্যে একটি ঘর ছিল ; সেই ঘরে শয়ন করিতেন। সেখানে হরি নামক এক জন খানসাম। তাহার প্রহরিস্বরূপ শয়ন করিত । আর কেহ না । কৃষ্ণকান্ত তাছাকেই ডাকিলেন, "হরি ” - কৃষ্ণকান্ত বারেকমাত্র হরিকে ডাকিয়া আবার: আফিমে ভোর হইয়। ঝিমাইতে লাগিলেন । আসল উইল র্তাহার গৃহ হইতে সেই অবসরে অস্তস্থিত হইল। জাল উইল তৎপরিবর্তে স্থাপিত হইল ।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ পরদিন প্রাতে রোহিণী আবার রাধিতে বসিয়াছে, আবার সেখানে হরলাল উকি মারিতেছে। ভাগ্যক্রমে ব্ৰহ্মানন্দ বাড়ী ছিল না, নচিলে কি একটা মনে করিতে পারিত । হরলাল ধীরে ধীরে রোহিণীর কাছে গেল— · রোহিণী বড় চাহিয়া দেখে না। হরলাল বলিল, “চাহিয়া দেখ, হাড়ি ফাটিবে না।” : রোহিণী চাহিয়া দেখিয়া—হাসিল । হরলাল ? বলিল, “কি করিয়াছ ?” রোহিণী অপহৃত উইল আনিয়া হরলালকে দেখিতে দিল । হরলাল পড়িয়া দেখিল—“আসল উইল বটে। তখন সে দুষ্টের মুখে হাসি ধরে না । উইল হাতে করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি প্রকারে আনিলে ?” রোহিণী সে গল্প আরম্ভ করিল। প্রকৃত কিছুই বলিল না। একটি মিথ্য উপন্যাস বলিতে লাগিলবলিতে বলিতে সে হরলালের হাত হইতে উইলখনি লইয়া দেখাইল, কি প্রকারে কাগজখান একটা কলমদানের ভিতর পড়িয়াছিল। উইলচুরির কথা শেষ হইলে রোহিণী হঠাৎ উইলখানি হাতে করিয়৷ উঠিয়া গেল। যখন সে ফিরিয়া আসিল, তখন তাহার হাতে উইল নাই দেখিয়া হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “উইল কোথায় রাখিয়া আসিলে ?” রোহিণী । তুলিয়া রাখিয়া আসিয়াছি। •o হর। আর তুলিয়া রাখিয়া কি হইবে ? আমি এখনই যাইব । রো। এখনই যাইবে ? এত তাড়াতাড়ি কেন ? হর। আমার থাকিবার যে নাই । রো । তা যাও । झ्द्र । ऊँझेल ? রো। আমার কাছে থাক । হর । সে কি ? উইল আমায় দিবে না ?