পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

...}. বিষবৃক্ষ ** >。 লইয়া আসিও । আমি কমলকেও অনুরোধ করিয়া লিখিলাম । আমি গহনা গড়াইতে ও বিবাহের আর আর উদ্যোগ করিতে প্রবৃত্ত হইলাম। কলিকাতায় বিলম্ব করিও না । কলিকাতায় না কি ছয়মাস থাকিলে মনুষ্য ভেড়া হয়। আর যদি কুন্দকে স্বয়ং বিবাহ করিবার অভিপ্রায় করিয়া থাক, তবে বল, আমি বরণডাল সাজাইতে বসি ।" তারাচরণ কে, তাহ পরে প্রকাশ করিব । কিন্তু সে যেই হউক, স্বৰ্য্যমুখীর প্রস্তাবে নগেন্দ্র এবং কমল মণি উভয়ে সম্মত হইলেন । সুতরাং স্থির হইল যে, নগেন্দ্র যখন বাড়ী যাইবেন, - তখন কুন্দকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইবেন ; সকলে আহলাদ পূৰ্ব্বক সম্মত হইয়াছিলেন। কমলও কুন্দের জন্য কিছু গহন গড়াইতে দিলেন । কিন্তু মনুষ্য ত চিরান্ধ ! কয়েক বৎসর পরে এমন এক দিন আসিল, যখন কমলমণি ও নগেন্দ্র ধূল্যবলুষ্ঠিত হইয়া কপালে করাঘাত করিয়া ভাবিলেন যে, কি কুক্ষণে কুন্দনন্দিনীকে পাইয়াছিলাম। কি কুক্ষণে স্বৰ্য্যমুখীর পত্রে সম্মত হুইয়াছিলাম । এখন কমলমণি, স্থৰ্যমুখী, নগেন্দ্র তিন জনে মিলিত হইয়া বিষবীজ রোপণ করিলেন । পরে তিন জনেষ্ট হাহাক:র করিবেন । এখন বজরা সাজাইয়। নগেন্দ্র কুন্দকে গোবিন্দপুরে যাত্রা করিলেন । কুন্দ স্বপ্ন প্রায় ভুলিয়া গিয়াছিল । নগেন্দ্রের সঙ্গে যাত্রাকালে একবার ভাহা স্মরণপথে আসিল । কিন্তু নগেন্দ্রের কারুণ্যপূর্ণ মুখকান্তি এবং লোকবৎসল চরিত্র মনে করিয়া কুন্দ কিছুতেই বিশ্বাস করিল না যে, ইহা হইতে তাহীর অনিষ্ট হুইবে । অথবা - কেহ কেহ এমন পতঙ্গ বৃত্ত ধে, জলস্ত বহিরাশি দেখিয়াও তন্মধ্যে প্রবিষ্ট হয় । লইয়! ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ তারাচরণ কবি কালিদাসের এক মালিনী ছিল, ফুল যোগাইত। কালিদাস দরিদ্র ব্রাহ্মণ । ফুলের দাম দিতে পারিতেন ন}—তৎপরিবর্তে স্বরচিত কাব্যগুলিন মালিনীকে পড়িয়া শুনাইতেন । এক দিন মালিনীর পুকুরে একটি অপূৰ্ব্ব পদ্ম ফুটিয়াছিল । মালিনী তাহা আনিয়া কালিদাসকে উপহার দিল। কবি তাহার পুরস্কারস্বরূপ মেঘদূত পড়িয়া শুনাইতে লাগিলেন । মেঘদুত কাব্য রসের সাগর, কিন্তু সকলেই জানেন যে, তাহার প্রথম কবিতা কয়টি কিছু নীরস । মালিনীর ভাল লাগিল না—সে বিরক্ত হইয়া উঠিয় চলিল। কবি জিজ্ঞাসা করিলেন, “মালিনী সখি ! চলিলে যে ?” মালিনী বলিল, “তোমার কবিতায় রস কৈ ?” কবি । মালিনী ! তুমি কখন স্বর্গে যাইতে পারিবে না । মালিনী । কেন ? কবি । স্বর্গের সিড়ি আছে, লক্ষযোজন সিড়ি ভাঙ্গিয় স্বর্গে উঠিতে হয় । আমার এই মেঘদূতকাব্যস্বর্গেরও সিড়ি আছে । এই নীরস কবিতাগুলিন সেই সিড়ি । তুমি এই সামান্ত সিড়ি ভাঙ্গিতে পারিলে না—তবে লক্ষযোজন সিড়ি ভাঙ্গিবে কি প্রকারে ? মালিনী তখন ব্ৰহ্মশাপে স্বৰ্গ হারাইবার ভয়ে ভীত হইয়া আদ্যোপাস্ত মেঘদূত শ্রবণ করিল। শ্রবণাস্তে প্রীত হইয়া, পরদিন মদনমোহিনী নামে বিচিত্রা মালা গাথিয় আনিয়া কবিশিরে পরাইয়া গেল । আমার এই সামান্ত কাব্য স্বৰ্গও নয়-ইহার লক্ষযোজন সিড়িও নাই ; রসও অল্প, সিড়িও ছোট । এই নীরস পরিচ্ছেদ কয়টি সেই সিড়ি । যদি পাঠকশ্রেণীমধ্যে কেহ মালিনীচরিত্র থাকেন, তবে তাহাকে সতর্ক করিয়া দিই যে, তিনি এ সিড়ি না ভাঙ্গিলে সে রসমধ্যে প্রবেশলাভ করিতে পারিবেন न1 ।। স্বৰ্য্যমুখীর পিত্ৰালয় কোন্নগর । র্তাহার পিতা এক জন ভদ্র কায়স্থ ; কলিকাতায় কোন হোঁসে কেশিয়ারি করতেন । স্থৰ্য্যমুখী তাহার একমাত্র সস্তান । শিশুকালে শ্ৰীমতী নামে এক বিধবা কায়স্থকন্ত দাসীভাবে তাহার গৃহে থাকিয়া স্বৰ্য্যমুখীকে লালনপালন করত । শ্রীমতীর একটি শিশুসন্তান ছিল, তাহারই নাম তারাচরণ। সে স্বৰ্য্যমুখীর সমবয়স্ক । স্থৰ্য্যমুখী তাহার সহিত বাল্যকালে খেলা করিতেন এবং বাল্যসখিত্ব প্রযুক্ত তাহার প্রতি তাহার ভ্রাতৃবৎ স্নেহ জন্মিয়াছিল । শ্ৰীমতী বিশেষ রূপবতী ছিল, সুতরাং অচিরাৎ বিপদে পতিত হইল। গ্রামস্থ এক জন দুশ্চরিত্র ধনী ব্যক্তির চক্ষে পড়িয়া সে সুৰ্য্যমুখীর পিতার গৃহ । ত্যাগ করিয়া গেল । কোথায় গেল, তাহ কেহ বিশেষ জানিতে পারিল না । কিন্তু শ্ৰীমতী আর ফিরিয়! আসিল না । -