পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ye বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী শ্ৰীমতী তারাচরণকে ফেলিয়া গিয়াছিল । তারাচরণ স্থৰ্যমুখীর পিতৃগৃহে রহিল । স্বৰ্য্যমুখীর পিত অতি দয়ালুচিত্ত ছিলেন । তিনি ঐ অনাথ বালককে আত্মসন্তানবং প্রতিপালন করিলেন এবং তাহাকে দাসত্বাদি কোন হীনবৃত্তিতে প্রবর্তিত না করিয়া লেখাপড় শিক্ষায় নিযুক্ত করিলেন । তারাচরণ এক অবৈতনিক মিশনারি স্কুলে ইংরেজী শিথিতে লাগিল । পরে স্বর্যমুখীর বিবাহ হইল । তাহার কয়েক বৎসর পরে তাহার পিতার পরলোক হইল । তখন তারাচরণ এক প্রকার মোটামুটি ইংরেজী শিখিয়াছিলেন, কিন্তু কোন কৰ্ম্মকার্যের সুবিধা করিয়া উঠিতে পারেন নাই । সূর্যমুখীর পিতৃপরলোকের পর নিরাশ্রয় হইয়া, তিনি স্বৰ্য্যমুখীর কাছে গেলেন । স্বৰ্য্যমুখী নগেন্দ্রকে প্রবৃত্তি দিয়া গ্রামে একটি স্কুল সংস্থাপিত করাইলেন । তারাচরণ তাহাতে মাষ্টার নিযুক্ত হইলেন । এক্ষণে গ্রান্ট ইন এডের প্রভাবে গ্রামে গ্রামে তেড়িকাটী, টপ্পাবাজ, নিরীহ ভালমানুষ মাষ্টার বাবুর বিরাজ করিতেছেন, কিন্তু তৎকালে সচরাচর "মাষ্টর বাবু” দেখা যাইত না । সুতরাং তারাচরণ এক জন গ্ৰাম্যদেবতার মধ্যে হইয়৷ èfizzia, faz4.733 fs'a Cit'zen of the world এবং Spectato: পড়িয়াছিলেন এবং তিন বুক জিওমেটি তাঙ্গর পঠিত থাকার কথাও বাজারে রাষ্ট্র ছিল । এই সকল গুণে তিনি দেবীপুরনিবাসী জমাদার দেবেন্দ্র বাবুর রাঙ্গসমাজভুক্ত তহলেন এবং বাবুর পারিষদমধ্যে গণ্য হইলেন । সমাজে তারাচরণ বিধবা-বিবাহ, স্ত্রীশিক্ষা এবং পৌত্তলিক বিদ্বেষাদি সম্বন্ধে অনেক প্রবন্ধ লিথিয় প্রতি সপ্তাহে পাঠ করিতেন এবং “হে পরম কারুণিক পরমেশ্বর !" এই বলিয়। তারস্ত করিয়। দীর্ঘ দীর্ঘ বক্ততা করতেন । তাতার কোনটা বা তত্ত্ববোধিনী হইতে নকল করিয়া লইতেন, কোনটা বা স্কুলের পণ্ডিত্তের দ্বার। লেখাষ্ট্ৰয় লইতেন । মুখে সৰ্ব্বদা বলিতেন ---“তোমরা ইটপাটকেলের পূজা ছাড়, খুড়ীজ্যেঠাইয়ের বিবাহ দাও, মেয়েদের লেখাপড় শিখাও, তাহাদের পিঞ্জরার পূরিয়া রাখ কেন ? মেয়েদের বাহির কর " স্ত্রীলোকসম্বন্ধে এতটা লিবরালিটির একটা বিশেষ কারণ ছিল, তাহার নিজের গৃহ স্ত্রীলোকশূন্য। এ পর্য্যন্ত র্তাহার বিবাহ হয় নাই, স্বৰ্য্যমুখী র্তাহার বিবাহের জন্য অনেক স্বত্ন করিয়াছিলেন, কিন্তু র্তাহার মাতার কুলত্যাগের কথা গোবিন্দপুরে প্রচার হওয়ায় কোন ভদ্র কায়স্থ তাহাকে কষ্ঠ দিতে সম্মত 萄 হয় নাই। অনেক ইতর কায়স্থের কাল-কুৎসিত কন্য পাওয়া গেল ; কিন্তু স্থৰ্যমুখী তারাচরণকে ভ্রাতৃবৎ ভাবিতেন, কি প্রকারে ইতর লোকের কন্যাকে ভাইজ বলিবেন, এই ভাবিয় তাহাতে সম্মত হন নাই । কোন ভদ্র কায়স্থের স্বরূপী কস্তার সন্ধানে ছিলেন, এমত কালে নগেন্দ্রের পত্রে কুন্দনন্দিনীর রূপগুণের কথা জানিয় তাহারই সঙ্গে তারাচরণের বিবাহ দিবেন স্থির করিলেন । _, সপ্তম পরিচ্ছেদ পদ্মপলাশলোচনে ! তুমি কে ? কুন্দ নগেন্দ্র দত্তকে সঙ্গে করিয়া গোবিন্দপুরে আসিল । কুন্দ নগেন্দ্রের বাড়ী দেখিয়া অবাকৃ হইল । এত বড় বাড়া সে কখনও দেখে নাই । তাহার বাহিরে তিন মহল, ভিতরে তিন মহল । এক একটি মহল এক একটি বৃহৎ পুরী । প্রথমে যে সদর মহল, তাহাতে এক লোহার ফটক দিয়া প্রবেশ করিতে হয়, তাহার চতুষ্পার্শ্বে বিচিত্র উচ্চ লোহার রেইল । ফটক দিয়া তৃণশূন্ত, প্রশস্ত, রক্তবর্ণ, সুনিৰ্ম্মিত পথে যাইতে হয়। পথের দুই পাশ্বে গো-গণের মনোরঞ্জন, কোমল নবকুণবিশিষ্ট দুই খণ্ড ভূমি । তাহাতে মধ্যে মধ্যে মণ্ডলাকারে রোপিত, সকুসুম পুষ্পবৃক্ষ সকল বিচিত্র পুষ্পপল্লবে শোভা পাইতেছে । সম্মুখে বড় উচ্চ দেড়তলা বৈঠকখান । অতি প্রশস্ত সোপানারোহণ করিয়া তাহাতে উঠিতে হয় । তাহার বারান্দায় বড় বড় মোট ফ্লটেড থাম, হৰ্ম্মভল মৰ্ম্মর প্রস্তরাবৃত। আলিশার উপরে, মধ্যস্থলে এক মুস্ময় বিশাল সিংহ জটা লম্বিত করিয়া লোল জিহব। বাহির করিয়াছে । এষ্টটি নগেন্দ্রের বৈঠকখানা । তৃণপুষ্পময় ভূমিখণ্ডদ্বয়ের দুই পাশ্বে, অর্থাৎ বামে ও দক্ষিণে দুষ্ট সারি একতলা কোঠা, এক সারিতে দপ্তরখানা ও কাছারী, আর এক সারিতে তোষাখান এবং ভূত্যবর্গের বাসস্থান । ফটকের দুই পাশ্বে দ্বাররক্ষকদিগের থাকিবার ঘর । এই প্রথম “ মহলের নাম “কাছারী-বাড়ী ।” উহার পাশ্বে ‘পূজার বাড়া " পূজার বাড়ীতে রীতিমত বড় পূজার দালান ; আর তিন পাশ্বে প্রথামত দোতলা চক বা চত্বর । মধ্যে বড় উঠান । এ মহলে কেহ বাস করে না । দুর্গোৎসবের সময়ে বড় ধুমধাম হয়, কিন্তু এই উঠানে টালির পাশ দিয়া ঘাস গজাইতেছে। দালান, দরদালান, পায়রায় পূরিয়া