বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯ© এসেছে । গান যে সুন্দর গায় ! এমন গান কখনও শুনিনে মা ! তুমি একটি শুনিবে ? গা তো গ হরিদাসী । একটি ঠাকরুণবিষয় গ৷ ” হরিদাসী এক অপূৰ্ব্ব শুামাবিষয় গায়িলে স্থৰ্যমুখী তাহাতে মোহিতা ও প্রীত হইয়া বৈষ্ণবীকে পুরস্কার পূর্বক বিদায় করিলেন। বৈষ্ণবী প্রণাম করিয়া এবং কুন্দের প্রতি আর একবার দৃষ্টিক্ষেপ করিয়া বিদায় লইল । স্থৰ্যমুখী চক্ষের আড়ালে গেলেই সে খঞ্জনীতে মৃদু মৃত্ন খেমটা বাজাইয়৷ মৃদু মৃদু গাইতে গাইতে গেল,— “আয় রে চাদের কণা ৷ তোরে খেতে দিব ফুলের মধু, পবৃতে দিব সোণ ৷ আতর দিব শিশি ভোরে, গোলাপ দিব কাৰ্ব্ব ক'রে, আর আপনি সেঞ্জে বাট ভোরে দিব পানের দোন৷ ” বৈষ্ণবী গেলে স্ত্রীলোকেরা অনেকক্ষণ কেবল বৈষ্ণবীর প্রসঙ্গ লইয়াই রহিল। প্রথমে তাহার বড় মুখ্যাতি আরম্ভ হইল। পরে ক্রমে একটু একটু খুঁত বাহির হইতে লাগিল। বিরাজ বলিল, “তা হোঁক্‌, কিন্তু নকটা একটু চাপ ।” তখন বাম। বলিল, “রঙ্গটা বাপু বড় ফেকাসে।" তখন চন্দ্রমুখী বলিল, "চুলগুলো যেন শণের দড়ী।” তখন চাপ। বলিল, “কপালটা একটু উচু ” কমল বলিল, “ঠোট দুখান পুরু।” হারাণী বলিল, “গড়নট। বড় কাঠ কাঠ ” প্রমদ বলিল, “মাগীর বুকের কাছটা যেন যাত্রার সর্থীদের মত, দেখে স্ত্রণ করে " এইরূপে সুন্দরী বৈষ্ণবী শীঘ্রই অদ্বিতীয় কুৎসিত বলিয়া প্রতিপন্ন হইল । তখন ললিত বলিল, “তা দেখিতে যেমন হউক, মাগী গায় ভাল ।” তাছাতেও নিস্তার নাই । চন্দ্রমুখী বলিল, “তাই বা কি, মাগর গলা মোটা।” মুক্তকেশী বলিল, “ঠিক বলেছ – মাগী যেন ষাড় ডাকে ।” অনঙ্গ বলিল, “মঙ্গে গান জানে না, একটাও দাশু রায়ের গান গাইতে পারিল না ।” কনক বলিল, “মাগীর তালবোধ নাই " ক্রমে প্রতিপল্প হইল যে, হরিদাসী বৈষ্ণবী কেবল যে যার-পর-নাই কুৎসিত, এমন নহে-তাহার গানও যার-পর-নাই মন্দ | বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী দশম পরিচ্ছেদ বাবু হরিদাসী বৈষ্ণব দত্তদিগের গৃহ হইতে নিস্ক্রান্ত হইয়া দেবীপুরের দিকে গেল । দেবীপুরে বিচিত্র লৌহরেইল পরিবেষ্টিত এক পুষ্পোদ্যান আছে। তন্মধ্যে নানাবিধ ফলপুষ্পের বৃক্ষ, মধ্যে পুষ্করিণী, তাহার উপরে বৈঠকখান । হরিদাসা সেই পুষ্পোদ্যানে প্রবেশ করিল এবং বৈঠকখানায় প্রবেশ করিয়! এক নিভৃত কক্ষে গিয়া • বেশপরিভাগে প্রবৃত্ত হইল । অকস্মাৎ সেই নিবিড় কেশদামরচিত কবরী মস্তকচু্যত হইয় পড়িল, সে ত পরচুলা মাত্র। বক্ষ হইতে স্তনসুগল খসিল—তাহ বস্ত্রনিৰ্ম্মি ত । বৈষ্ণবী পিত্তলের বালী ও জলতরঙ্গ চুড়ি খুলিব ফেলিল—রসকলি ধুইল। তখন উপযুক্ত পরিচ্ছদ পরিধানানস্তর বৈষ্ণবীর সুবেশ ঘুচিয়া এক অপূৰ্ব্ব সুন্দর সুবাপুরুষ দাড়াইল । সবার বয়স পঞ্চবিংশ বৎসর, কিন্তু ভাগ্যক্রমে মুখমণ্ডলে রোমাবর্ণীর চিঙ্গমাত্র ছিল না । মুখ এবং গঠন কিশোরবয়স্কের দ্যায় । কান্তি পরম সুন্দর । এই যুবাপুরুষ দেবেন্দ্ৰ বাপু । পূৰ্ব্বেষ্ট তাতার কিছু পরিচয় দেওয়া হঠয়াছে । দেবেন্দ্র এবং নগেন্দ্র উভয়েই একবংশসস্থত ; কিন্তু বংশের উভধ শাখার মধ্যে পুরুষাঙ্গুক্রমে বিবাদ চলিতেছে । এমন কি, দেবাপুরের বাবুদিগের সঙ্গে গোপিন্দপুবের বাবুদিগের মুখের আলাপ পর্য্যস্ত ছিল না । পুরুষানুক্রমে তুই শাখায় মোকদম চলিভেছে : শেষে এক বড় মোকদ্দমায় নগেন্দ্রের পিতামহ দেবেস্ট্রের পি তামহকে পরাজিত করায় দেবীপুরের বাবুর একেবারে চীনবল হইয়া পড়িলেন - ডিক্ৰীজারিতে তাঙ্গদের সব্বস্ব গেল -গোবিন্দপুরের বাপুর। তাঙ্গাদের ভালুকসকল কিনিয়া লইলেন । সেই অধধি দেবীপুর স্বতেজ, গোবিন্দপুর বৰ্দ্ধিতন্ত্রী হইতে লাগিল । উভ৭ বংশে আর কখনও মিল হইল ন। দেবেঞ্জের পিতা ক্ষুণ্ণধন-গৌরব পুনৰ্ব্বদ্ধিত করিবার জন্ত এক উপায় করিলেন । গণেশ বাবু নামে আর এক জন জমাদার, হরিপুর জেলার মধ্যে বাস করিতেন । ঠাহার একমাত্র অপত্য হৈমবর্তী । দেবেন্দ্রের সঙ্গে হৈমবঠীর বিবাহ দিলেন । হৈমবভার অনেক গুণ—সে কুরূপ, মুখরা, অপ্রিয়বাদিনী, আত্মপরায়ণ । যখন দেবেন্দ্রের সক্তি ত তাহার বিবাহ হইল, তখন পর্য্যস্ত দেবেন্দ্রের চরিত্র নিষ্কলঙ্ক । লেখাপড়ায় র্যাহার বিশেষ যত্ব ছিল এবং প্রকৃতিও সুধীর