পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ն: বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী সংসারনিৰ্ব্বাহের জন্য ব্যস্ত হইও না বা শারীরিক পরিশ্রম করিও না। রাজবাড়ীতে আমার কার্য্য হইয়াছে—আর এখন অর্থের আমার অভাব নাই। অতএব আমি সংসার চালাইব । তুমি সংসারে কত্রী হইয়া থাক ?” হিরন্ময়ী দেখিলেন, আমলার অর্থের বিলক্ষণ প্রাচুর্য্য। মনে মনে নানাপ্রকার সন্দিহান হইলেন। সপ্তম পরিচ্ছেদ বিবাহের পর পঞ্চমাষাঢ়ের শুক্লা-পঞ্চমী আসিয়া উপস্থিত হইল। হিরন্ময়ী এ কথা স্মরণ করিয়া সন্ধ্যাকালে বিমন হুইয়। বসলেন । ভাবিতেছিলেন, *গুরুদেবের আজ্ঞানুসারে আমি কালি হইতে অঙ্গুরীয়টি পরিতে পারি। কিন্তু পরিব কি ? পরিয়া আমার কি লাভ ? হয় ত স্বামী পাইব, কিন্তু স্বামী পাইবার আমার বাসন নাই। অথচ চিরকালের জন্য কেনই বা পরের মূৰ্ত্তি মনে আঁকিয়া রাখি ? এ দুরন্ত হৃদয়কে শাসিত করাই উচিত। নইলে ধৰ্ম্মে পতিত হইতেছি ।” এমন সময়ে অমল বিস্ময়-বিহবলা হইয়া আসিয়া কহিল, "কি সৰ্ব্বনাশ ! আমি কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না । না জানি কি হইবে ।” হি। কি হইয়াছে ? অ। রাজপুরী হইতে তোমার জন্য শিবিক লইয়া দাস-দাসী আসিয়াছে। তোমাকে লইয়া যাইবে । হি। তুমি পাগল হইয়াছ । আমাকে রাজবাড়ী হইতে লইতে আসিবে কেন ? এমন সময়ে রাজদূত আসিয় প্রণাম করিল এবং কহিল যে, "রাজাধিরাজ পরমভট্টারক শ্ৰীমদনদেবের আজ্ঞা ষে, হিরন্ময়ী এই মুহূর্তেই শিবিকারোহণে রাজাবরোধে যাইবেন ।” হিরন্ময়ী বিস্মিতা হইলেন, কিন্তু অস্বীকার করিতে পারিলেন না । রাজাজ্ঞ অলঙ্ঘ্য । বিশেষ রাজা মদনদেবের অবরোধে যাইতে কোন শঙ্কা নাই । রাজা পরম ধাৰ্ম্মিক এবং জিতেন্দ্রিয় বলিয়া খ্যাত । * তাহার প্রতাপে কোন রাজপুরুষ কোন স্ত্রীলোকের উপর কোন অত্যাচার করিতে পারেন না। হিরন্ময়ী আমলাকে বলিলেন, “আমলে ! আমি রাজদর্শনে যাইতে সন্মতা । তুমি সঙ্গে চল ।” অমল স্বীকৃত হইল । তৎসমভিব্যাহারে শিবিকারোহণে হিরন্ময়ী রাজাবরোধমধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন। প্রতিহারী রাজাকে নিবেদন করিল ষে, শ্রেষ্ঠিকন্ত আসিয়াছে। রাজাজ্ঞা পাইয়া প্রহরীরা এক হিরন্ময়ীকে রাজসমক্ষে লইয় আসিল । অমলা বাহিরে রহিল । অষ্টম পরিচ্ছেদ হিরন্ময়ী রাজাকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। রাজা দীর্ঘাকৃতি পুরুষ ; কবাটবক্ষ ; দীর্ঘহস্ত ; অতি সুগঠিত আকৃতি ; ললাট প্রশস্ত ; বিস্ফারিত আয়ত চক্ষু ; শান্তমূৰ্ত্তি—এরূপ সুন্দর পুরুষ কদাচিৎ স্ত্রীলোকের নয়নপথে পড়ি । রাজাও শ্রেষ্ঠিকন্যাকে দেখিয়া জানিলেন যে, রাজাবরোধেও এরূপ সুন্দরী দুল্লভ । রাজা কহিলেন, “তুমি হিরন্ময়ী ?” হিরণায়ী কহিলেন, “আমি আপনার দাসী ।” রাজা কহিলেন, “কেন তোমাকে ডাকাইয়াছি, তাহা শুন । তোমার বিবাহের কথা মনে পড়ে ?” ছি ! পড়ে। রাজা ! সেই রাত্রে আনন্দ স্বামী তোমাকে যে অঙ্গুরীয় দিয়াছিলেন, তাহ তোমার কাছে আছে ? হি। মহারাজ ! সে অঙ্গুরীয় আছে। কিন্তু সে সকল অতি গুহাবৃত্তান্ত, কি প্রকারে আপনি তাহা অবগত হইলেন ? রাজা তাহার কোন উত্তর না দিয়া কহিলেন, “সে অঙ্গুরীয় কোথায় আছে ? আমাকে দেখাও।” হিরন্ময়ী কহিলেন, “উহা আমি গৃহে রাখিয়া আসিয়াছি। পঞ্চবৎসর পরিপূর্ণ হইতে আরও কয়েক দও বিলম্ব আছে, অতএব তাহা পরিতে আনন্দ স্বামীর ষে নিষেধ ছিল—তাহ এখনও আছে।” রাজা । ভালই—কিন্তু সেই অঙ্গুরীয়ের অনুরূপ দ্বিতীয় যে অঙ্গুরীয় তোমার স্বামীকে আনন্দ স্বামী দিয়াছিলেন, তাহ দেখিলে চিনিতে পারিবে ? হি । উভয় অঙ্গুরীয় একই রূপ ; সুতরাং দেখিলে চিনিতে পারিব । তখন প্রতিহারী রাজাক্তা প্রাপ্ত হইয়া এক সুবর্ণের কোঁটা আনিল । রাজা তাহার মধ্য হইতে একটি অঙ্গুরীয় লইয়া বলিলেন, “দেখ, এই অঙ্গুরীয় কাহার ?” হিরণাস্ত্রী অঙ্গুরীয় প্রদীপালোকে বিলক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া বলিলেন, “দেব! এই আমার স্বামীর অঙ্গুরীয় বটে, কিন্তু আপনি ইহা কোথায় পাইলেন ?” পরে কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিয়৷ বলিলেন, “দেব ! ইহাতে