S8 ৰ্যোমকেশ কছিল, “অধীর হুইও না । অামার মনোরথ পূর্ণ হইলেই আমি তোমায় ত্যাগ করিব । এখন তোমার সই, ভগিনী মণিমালিনী কোথায় ?” স্থ । আমিই তোমার ভগিনী । ব্যো। তুমি আমার সম্বন্ধীর ভগিনী—আমার ব্ৰাহ্মণীর ভেয়ের ভগিনী—আমার প্রাণাধিক রাধিক ! সৰ্ব্বার্থসাধিক ! এই বলিয়া ব্যোমকেশ মৃণালিনীকে হস্ত দ্বারা আকর্ষণ করিয়া লইয়া চলিল । ষখন মাধবাচার্ষ্য তাহাকে হরণ করিয়াছিল, তখন মৃণালিনী স্ত্রীস্বভাবজুলভ চীৎকারে রতি দেখান নাই, এখনও শব্দ করিলেন না । কিন্তু মৃণালিনী আর সহ করিতে পারিলেন না । মনে মনে লক্ষ ব্রাহ্মণকে প্রণাম করিয়া সবলে ব্যোমকেশকে পদাঘাত করিলেন । ব্যোমকেশ লাথি খাইয়া বলিল,—“ভাল ভাল, ধন্য হইলাম ! ও চরণস্পর্শে মোক্ষপদ পাইব । সুন্দরি । তুমি আমার দ্রৌপদী—অামি তোমার জয়দ্ৰথ ।” পশ্চাৎ হইতে কে বলিল, “আর আমি তোমার অর্জন ” অকস্মাৎ ব্যোমকেশ কাতরস্বরে বিকট চীৎকার করিয়া উঠিল—“রাক্ষসি ! তোর দন্তে কি বিষ আছে ?" এই বলিয়া ব্যোমকেশ মৃণালিনীর হস্ত ত্যাগ করিয়া আপন পৃষ্ঠে হস্তমার্জন করিতে লাগিল । ম্পর্শামুভবে জানিল যে, পৃষ্ঠ দিয়া দরদরিত রুধির পড়িতেছে । মৃণালিনী মুক্তহস্ত হইয়াও পলাইলেন না। তিনিও প্রথমে ব্যোমকেশের দ্যায় বিস্মিতা হইয়াছিলেন, কেন না, তিনি ত ব্যোমকেশকে দংশন করেন নাই । ভলুকোচিত কাৰ্য্য তাহার করণীয় নহে । কিন্তু তখনই নক্ষত্ৰলোকে খৰ্ব্বাকৃতি বালিকাসম্মুখ হইতে অপস্থত হইতে দেখিতে পাইলেন। গিরিজায় তাহার বসনাকর্ষণ করিয়া মৃদুস্বরে, “পলাইয়া আইস” বলিয়া স্বয়ং পলায়ন করিল। পলায়ন মৃণালিনীর স্বভাবসঙ্গত নহে । তিনি পলায়ন করিলেন না । ব্যোমকেশ প্রাঙ্গণে দাড়াইয়া জাৰ্ত্তনাদ করিতেছে এবং কাতরোক্তি করিতেছে দেখিয়া, তিনি গজেন্দ্রগমনে নিজ শয়নাগার অভিমুখে চলিলেন ; কিন্তু তৎকালে ব্যোমকেশের আর্তনাদে গৃহস্থ সকলেই জাগরিত হইয়াছিল । সম্মুখে হৃষীকেশ পুত্রকে শশব্যস্ত দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,— “কি হইয়াছে ? কেন ষাড়ের মত চীৎকার করিতেছ?” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ব্যোমকেশ কহিল, “মৃণালিনী অভিসারে গমন করিয়াছিল, আমি তাহাকে ধৃত করিয়াছি বলিয়া সে আমার পৃষ্ঠে দারুণ দংশন করিয়াছে।” হৃষীকেশ পুত্রের কুরীতি কিছুই জানিতেন না। মৃণালিনীকে প্রাঙ্গণ হইতে উঠিতে দেখিয়া এ কথায় তাহার বিশ্বাস হইল। তৎকালে তিনি মৃণালিনীকে কিছুই বলিলেন না। নিঃশব্দে গজগামিনীর পশ্চাৎ তাহার শয়নাগারে আসিলেন । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ হৃষীকেশ মৃণালিনীর সঙ্গে সঙ্গে তাহার শয়নাগারে আসিয়া হৃষীকেশ কহিলেন– “মৃণালিনি ! তোমার এ কি চরিত্র ?” যু । আমায় কি চরিত্র । হৃ। তুমি কার মেয়ে, কি চরিত্র, কিছুই জানি না, গুরুর অনুরোধে আমি তোমাকে গৃহে স্থান দিয়াছি। তুমি আমার মেয়ে মণিমালিনীর সঙ্গে এক বিছানায় শোও—তোমার কুলটাৰ্বত্তি কেন ? মৃ । অামার কুলটাৰ্বত্তি যে বলে, সে মিথ্যাবাদী । হৃষীকেশের ক্রোধে অধর কম্পিত হইল । কহিলেন, “কি পাপীয়সি ! আমার অল্পে উদর পুরাবি, আর আমাকে দুৰ্ব্বাক্য বলিবি ? তুই আমার গৃহ হইতে দূর হ, না হয় মাধবাচাৰ্য্য-রাগ করিবেন, তা বলিয়া এমন কালসাপ ঘরে রাখিতে পারিব না।” মু। যে আজ্ঞা—কালি প্রাতে আর আমাকে দেখিতে পাইবেন না । হৃষীকেশের বোধ ছিল যে, যে কালে তাহার গৃহবহিষ্কৃত হইলেই মৃণালিনী আশ্রয়হীন হয়, সেকালে এমন উত্তর তাহার পক্ষে সম্ভব নহে। কিন্তু মৃণালিনী নিরাশ্রয়ের আশঙ্কায় কিছুমাত্র ভীতা নহেন দেখিয়া মনে করিলেন যে, তিনি জারগুছে স্থান পাইবার ভরসাঁতেই এরূপ উত্তর করিলেন । ইহাতে হৃষীকেশের কোপ আরও বৃদ্ধি হইল। তিনি অধিকতর বেগে কহিলেন,—“কালি প্রাতে । আজই দুর হও ।” মু। যে আজ্ঞা । আমি সখী মণিমালিনীর নিকট বিদায় হইয়। আজই দূর হইতেছি। এই বলিয়া মৃণালিনী গাত্ৰোখান করিলেন । হৃষীকেশ কছিলেন, “মণিমালিনীর সহিত কুলটার আলাপ কি ?”
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২০৯
অবয়ব