পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>や এখনই আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবে । সে পাগল। সে আপনার কাছে আমার কোন নিন্দাবাদ করিলে আমার উত্তর না লইয়া আমার প্রতি আপনি কোপ করিবেন না ।” জেব-উন্নিসা বলিলেন, “তোমার উপর কোপ করিবার আমার সাধ্য নাই । যদি তোমার উপর কখন রাগ করি, তবে আমিই দুঃখ পাইব । তোমার নিন্দ আমি কাণে শুনি না ।” “এ দাসের উপর এইরূপ অনুগ্রহ চিরকাল রাখিবেন," এই বলিয় মবারক পুনৰ্ব্বার বিদায় গ্রহণ করিলেন ।


=----=--

চতুর্থ পরিচ্ছেদ সংবাদ-বিক্রয় যে তাতারী যুবতী অসি চৰ্ম্ম হস্তে লইয়া জেবউল্লিসার গৃহের দ্বারে প্রহরায় নিযুক্ত, সে দরিয়াকে দেখিয়া বলিল, "এত রাত্রে কেন ?” দরিয়া বিবি বলিল, “তা কি পাহারাওয়ালীকে বলিব ? তুই খবর দে ।” তাতারী বলিল, “তুই বেরো- আমি খবর দিব না ।” দরিয়া বলিল, “রাগ কর কেন দেস্তি ? তোমার নজরের লজ্জতেই কাবুল পঞ্জাব ফুতে হয়। তার উপর আবার হাতে ঢাল-তরবার - তুমি রাগিলে কি আর চলে ?—এই আমার পরওয়ান দেখ—আর এত্তেল কর ” প্রহরিণী রক্তধরে একটু মধুর হাসি হাসিয়া বলিল, “তোমাকেও চিলি, তোমার পরওয়ানাও চিনি । তা এত রাত্রিতে কি আর হজরত বেগম সাহেব সুবৃমা কিনিবে ? তুমি কা’ল সকালে এসে । এখন খসম থাকে, খসমের কাছে যা ৪– আর না থাকে যদি—” দরিয়া । তুই জাহান্নামে ষা । তোর ঢালতরবার জাহান্নামে যাকৃ—তোর ওড়না-পায়জামা জাহান্নমে যাকৃ—তুই কি মনে করিস, আমি রাত দুপুরের কাজ না থাকিলে, রাত পুরে এয়েছি ? তখন তাতার চুপি চুপি বলিল, “হজরত বেগম লাহেব এস বকত কুচ মজেমে হোয়েঙ্গ " দরিয়া বলিল, “আরে বাদী, তা কি আমি জানি না ? তুই মজা করিবি ? হুঁ কর।” তখন দরিয়া ওড়নার ভিতর হইতে এক শিশি সৱাৰ বাহির করিল। প্রহরিণী হা করিল—দরিয়া ৰঙ্কিমচজের গ্রন্থাবলী শিশি ভোর তার মুখে ঢালিয়া দিল। তাতারী শুষ্ক নদীর মত এক নিশ্বাসে তাহা গুষিয়া লইল । বলিল, “বিস্মেল্লা ! তোফা সরবৎ আচ্ছ, তুমি খাড়া থাক, আমি এত্তালা করিতেছি ।” প্রহরিণী কক্ষের ভিতর গিয়া দেখিল, জেৰ উল্লিস। হাসিতে হাসিতে ফুলের একটা কুকুর গড়িতেছেনমবারকের মত তার মুখটা হইয়াছে—আর বাদশাহদিগের সেরপেচ কলগার মত তার লেজটা হুইয়াছে। জেব উল্লিসা প্রহরিণীকে দেখিয়া বলিল, “নাচনেওয়ারী লোগ্‌কো বোলাও ” 、 রঙ মহালের সকল বেগমদিগের অামোদের 亂 এক এক সম্প্রদায় নৰ্ত্তকী নিযুক্ত ছিল, ঘরে ঘরে নৃত্যগীত হইত। জেব-উন্নিসার প্রমোদার্থ এক দল নর্তকী ছিল । প্রহরিণী পুনশ্চ কুর্ণিশ করিয়া বলিল, “যে হুকুম । দরিয়া বিবি হাজির, আমি তাড়াইয়া দিয়াছিলাম — মানা শুনিতেছে না ।" জেব। কিছু বখশিশও দিয়াছে ? প্রহরিণী মুন্দরী লজ্জিত হইয়া ওড়নায় আকর্ণ মুখ ঢাকিল। তখন জেব-উল্লিসা বলিল, “আচ্ছ, নাচনেওয়ালী থাকৃ—দরিয়াকে পাঠাইয়া দে ।” দরিয়া আসিয়৷ কুর্ণিশ করিল । তার পর ফুলের কুকুরটি নিরীক্ষণ করতে লাগিল । দেখিয়া বেগম সাহেবা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন হয়েছে দরিয়া ?” দরিয়া ফের কুর্ণিশ করিয়া বলিল, “ঠিক মনসবদার মবারক থ সাহেবের মত হইয়াছে।” জেব । ঠিক ! তুই নিবি ? দরিয়া । কোনটা দিবেন ? মানুষট ? জেব-উল্লিস। ভ্রভঙ্গ করিল। পরে রাগ সামলাইয়া হাসিয়া বলিল, “যেটা তোর খুলী।” দরিয়া । তবে কুকুরটা হজরত বেগম সাহেবার থাক, আমি মানুষটা নিব ।” জেব । কুকুরটা এখন হাতে আছে-মানুষটা এখন হাতে নাই । এখন কুকুরটাই নে । এই বলিয়া জেব উল্লিস আসবসেবন-প্রফুল্লচিত্তে ষে ফুলে কুকুর গড়িয়াছিল, সেই ফুলগুলা দরিয়াকে ফেলিয়া দিতে লাগিলেন । দরিয়া তাহা কুড়াইয়া । লইয়া ওড়নাম্ন তুলিল- নহিলে বে-আদবী হইবে। তার পর সে বলিল, “আমি হুজুরের কৃপায় কুকুর মানুষ দুই পাইলাম।” : - জেৰ। কিসে ? দ। মানুষটা আমার । কুকুরট না