পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০ গিরিজায়ার মুখে হাসি ধরিল না। বলিল, “তৰে चामि औड आई-- ‘চরণতলে দিমু হে শু্যাম পরাণ-রতন । দিব না তোমারে নাথ মিছার যৌবন ॥ এ রতন সমতুল, ইহা তুমি দিবে মুল, দিবানিশি মোরে নাথ দিবে দরশন ' ঠাকুরাণি, তুমি তাহাকে দেখিয়া ত জীবনধারণ করিবে । আমি তোমার দাসী হইয়াছি, আমার ত তাহাতে পেট ভরিবে না, আমি কি খেয়ে বাচিব ?” মু । আমি দুই একটি শিল্পকৰ্ম্ম জানি । মালা গাথিতে জানি, চিত্র করিতে জানি, কাপড়ের উপর ফুল তুলিতে জানি । তুমি বাজারে আমার শিল্পকৰ্ম্ম বিক্রয় করিয়া দিবে। গি । আর আমি ঘরে ঘরে গীত “মৃণাল অধমে” গাইব কি ? মৃণালিনী অৰ্দ্ধহান্ত, অৰ্দ্ধ সকোপদৃষ্টিতে গিরিজায়ার প্রতি কটাক্ষ করিলেন । গিরিজায়া কহিল, “আমন করিয়া ঢাহিলে আমি গীত গায়িব ।” এই বলিয়া গায়িল,— “সাধের তরণী আমার কে দিল তরঙ্গে । কে আছে কাণ্ডারী হেন, কে যাইবে সঙ্গে ॥” মৃণালিনী কহিল, “যদি এত ভয়, তবে একা এলে কেন ?” গিরিজায়া কহিল, “আগে কি জানি ।” গায়িতে লাগিল,— “ভাসল তরী সকালবেলা, ভাবিলাম এ জলখেলা, মধুর বহিবে বায়ু ভেসে যাব রঙ্গে । এখন—গগনে গরজে ঘন, বহে থর সমীরণ, কুল ত্যজি এলাম কেন, মরিতে আতঙ্কে ॥” মৃণালিনী কহিল, “কুলে ফিরিয়া যাও না কেন ?” গিরিজার গায়িতে লাগিল,— .*মনে করি কুলে ফিরি, বাহি তরী ধারি ধরি, কুলেতে কণ্টকতরু বেষ্টিত ভুজঙ্গে ।” মৃণালিনী কহিলেন, “তবে ডুবিয়া মর না কেন ?” গিরিজায়া কহিল, “মরি, তাহাতে ক্ষতি নাই, কিন্তু” বলিয়া আবার গায়িল,—

  • ধাহারে কাণ্ডারী করি, সাজাইয়া দিল্প তরী, সে কভু না দিল পদ, তরণীর অঙ্গে ॥”

গায়িব । বলিয়া বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রস্থাবলী মৃণালিনী কহিলেন, “গিরিজায়, এ কোন অপ্রে" মিকের গান ?” গি । কেন ? মৃ। আমি হইলে তরী ডুবাই । গি । সাধ করিয়া ? মৃ ৷ সাধ করিয়া । গি । তবে তুমি জলের ভিতর রত্ন দেখিয়াছ । চতুর্থ পরিচ্ছেদ বাতায়নে হেমচন্দ্র কিছুদিন উপবন-গৃহে বাস করিলেন । জনাৰ্দ্দনের সহিত প্রত্যহ সাক্ষাৎ হইত ; কিন্তু ব্রাহ্মণের বধিরতা-প্রযুক্ত ইঙ্গিতে আলাপ হইত মাত্র । মনোরমার সহিত ও সৰ্ব্বদা সাক্ষাৎ হইত, মনোরমা কখন তাহার সহিত উপযাচিক হইয়া কথা কহিতেন, কখন বা বাক্যব্যয় না করিয়া স্থানান্তরে চলিয়া যাইতেন । বস্তুতঃ মনোরমার প্রকৃতি র্তাহার পক্ষে অধিকতর বিস্ময়জনক বলিয়। বোধ হইতে লাগিল । প্রথমতঃ তাহার বয়ঃক্রম দুরনুমেয়, সহজে তাহাকে বালিক বলিয়া বোধ হইত, কিন্তু কখন কখন মনোরমাকে অতিশয় গাম্ভীৰ্য্যশালিনী দেখিতেন । মনোরম কি অদ্যাপি কুমারী ? হেমচন্দ্র এক দিন কথোপকথনচ্ছলে মনোরমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মনোরমা, তোমার শ্বশুরবাড়ী কোথায় ?” মনোরমা কহিল, “বলিতে পারি ন৷ ” আর এক দিন জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “মনোরমা, তুমি কয় বৎসরের হইয়াছ ?” মনোরম। তাঁহাতেও উত্তর দিয়াছিলেন, *বলিতে পারি না ।” মাধবাচার্য্য হেমচন্দ্রকে উপবনে স্থাপিত করিয়া দেশপর্য্যটনে যাত্রা করিলেন । তাহার অভিপ্রায় এই যে, এ সময় গৌড়দেশীয় অধীন রাজগণ যাহাতে নবদ্বীপে সসৈন্ত সমবেত হইয়া গৌড়েশ্বরের আমুকুল্য করেন, তদ্বিষয়ে তাহাদিগকে প্রবৃত্তি দেন । হেমচন্দ্র নবদ্বীপে তাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন ; কিন্তু নিষ্কৰ্ম্মে দিনযাপন ক্লেশকর হইয়া উঠিল । হেমচন্দ্র বিরক্ত হক্টলেন । এক একবার মনে হইতে লাগিল যে, দিগ্বিজয়কে গৃহরক্ষায় রাখিয়া অশ্ব লইয়া একবার গৌড়ে গমন করেন । কিন্তু তথায় মৃণালিনীর সাক্ষাৎ লাভ করিলে তাহার প্রতিজ্ঞাভঙ্গ হইবে, বিনা সাক্ষাতে গৌড়যাত্রায় কি ফলোদয় হুইবে? এই সকল আলোচনায় যদিও গৌড়ষাত্রায় হেমচন্দ্র