পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨.8 চঞ্চলের প্রতি স্থির দৃষ্টি করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “রাজকুমারি ! যে বীর তোমাকে এ বিপদ হইতে রক্ষা করিবে, তাহাকে তুমি কি দিবে ?” রাজকুমারী বুঝিলেন । কাতর অথচ অবিকম্পিতকণ্ঠে বলিলেন, “কি দিব সখি! আমার কি আর দিবার অাছে ? আমি যে অবলা ।” নুিৰ্ম্মল । তোমার তুমিই আছ । চঞ্চল অপ্রতিভ হইয়া বলিল, “দুর হ ।” নিৰ্ম্মল । তা রাজার ঘরে এমন হইয়া থাকে। তুমি যদি রুক্মিণী হইতে পার, যদুপতি আসিয়া অবশ্য উদ্ধার করিতে পারেন । চঞ্চলকুমারী মুখাবনত করিল। যেমন স্থৰ্য্যে!" দয়কালে মেঘমালার উপর আলোর তরঙ্গের পর উজ্জ্বলতর তরঙ্গ আসিয়া পলকে পলুকে নুতন সৌন্দৰ্য্য উন্মেষিত করে, চঞ্চলকুমারীর মুখে তেমনই পলকে পলকে সুখের, লজ্জার, সৌন্দর্য্যের নবনবোন্মেষ হইতে লাগিল। বলিল, “ঙাহাকে পাইব, আমি কি এমন ভাগ্য করিয়াছি ? আমি বিকাইতে চাহিলে তিনি কি কিনিবেন ?” নিৰ্ম্মল । সে কথার বিচারক তিনি--আমরা নই । রাজসিংহের বাহুতে শুনিয়াছি বল আছে ; র্তার কাছে কি দূত পাঠান যায় না ? গোপনে— কেহ না জানিতে পারে, এরূপ দুত কি তাহার কাছে ষায় না ? চঞ্চল ভাবিল । বলিল, “তুমি আমার গুরুদেবকে ডাকিতে পাঠাও । তাiমায় আর কে তেমন ভালবাসে ? কিন্তু তাহাকে সকল কথা বুঝাইয়া বলিয়া আমার কাছে আনিও । সকল কথা বলি তে আমার লজ্জা করিবে ।” এমন সময়ে সখীজন সংবাদ লইয়া ত্যাসিল যে, এক জন মতিওয়ালী মতি বেচিতে আসিয়াছে । রাজকুমারী বলিলেন, “এখন আমার মতি কিনিবার সময় নহে । ফিরাইয়া দাও ” পুরবাসিনী বলিল, “আমরা ফিরাইবার চেষ্টা করিয়াছিলাম, কিন্তু সে কিছুতেই ফিরল না । বোধ হইল যেন, তার কি বিশেষ দরকার অাছে " তখন অগত্য চঞ্চলকুমারী তাহাকে ডাকিলেন। মতিওয়ালী আসিয়া কতকগুলা ঝুটা মতি দেখাইল । রাজকুমারী বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “এই বুট মতি দেখাইবার জন্য তুমি এত জিদ করিতেছিলে ?” মতিওয়ালী বলিল, “না। আমার আরও দেখাইবার জিনিস আছে। কিন্তু তাহা আপনি একটু পুষিদ না হইলে দেখাইতে পারি না ।” চঞ্চলকুমারী বলিল, “আমি এক! তোমার সঙ্গে কথা কহিতে পারিব না ; কিন্তু এক জন সর্থী থাকিবে । নিৰ্ম্মল থাক, আর সকলে বাহিরে যাও ” তখন আর সকলে বাহিরে গেল। দেবী—সে মতিওয়ালী দেবী ভিন্ন আর কেহ নয়—যোধপুরী বেগমের পাঞ্জা দেখাইল । দেখিয়া, পড়িয়া, চঞ্চলকুমারী জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ পাঞ্জা তুমি কোথায় পাইলে ?” দেবী । যোধপুরী বেগম আমাকে দিয়াছেন। চঞ্চল । তুমি তার কে ? - দেবী । আমি তার বাদী । চঞ্চল । কেনই বা এই পাঞ্জা লইয়া এখানে আসিয়াছ ? দেবী তখন সকল কথা বুঝাইয়ু বলিল । শুনিয়া নিৰ্ম্মল ও চঞ্চল পরস্পরের মুখপানে চাহিতে লাগিলেন । চঞ্চল দেবীকে পুরস্কৃত করিয়া বিদায় দিলেন । দেবী যাইবার সময়ে যোধপুরীর পাঞ্জাখানি লইয়া গেল না । ইচ্ছাপূৰ্ব্বক রাখিয়া গেল। মনে করিল, কোথায় ফেলিয়া দিব- কে কুড়াইয়া নিবে । এই ভাষিয়া দেবী চঞ্চলকুমারীর নিকট পাঞ্জ ফেলিয়৷ গেল। সে গেলে পর চঞ্চলকুমারী বলিলেন, “নিৰ্ম্মল, উহাকে ডাক, সে পাঞ্জাখানা ফেলিয়া গিয়াছে ” নিৰ্ম্মল ! ফেলিয়া যায় নাই—বোধ হইল, যেন ইচ্ছাপূর্বক রাখিয়া গিয়াছে। চঞ্চল । আমি নিয়! কি করিব ? নিৰ্ম্মল । এখন রাখ, কোন সময়ে না কোন সময়ে যোধপুরীকে ফেরত দিতে পারিবে । চঞ্চল । তা যাই হোক, বেগমের কথায় আমার বড় সাহস বাড়িল । আমরা দুইটি বালিকায় কি পরামর্শ করিতেছিলাম-- তা ভাল কি মন্দ – ঘটিবে কি না ঘটিবে, কিছুই বুঝিতে পারিতেছিলাম না । এখন সাহস হইয়াছে । রাজসিংহের আশ্রয় গ্রহণ করাই ভাল । নিৰ্ম্মল । এই বলিয়া নিৰ্ম্মল হাসিল । করিয়া হাসিল । নিৰ্ম্মল উঠিয়া গেল। কিন্তু তাহার মনে কিছু মাত্র ভরসা হইল না, সে কাদিতে কঁাদিতে গেল। সে ত অনেক কাল জানি । চঞ্চলও মাথা হেঁট