পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রস্থাবলী প্ৰভো! আপনার কাছে একটা নিবেদন আছে । এ দেহ কলঙ্কিত করাইল কে, তুমি না আমি ? আমি যে অসৎ, অসার, দোষ আমার না , তোমার ? আমার এ মণিহারীর দোকান সাজাইল কে, তুমি না আমি ? যাহা তুমি সাজাইয়াছ, তাহ তোমাকেই দিব । আমি এ ব্যবসা আর রাখিব না । সুখ ! তোমাকে সৰ্ব্বত্র খুজিলাম - পাইলাম না। সুখ নাই—তবে আশায় কাজ কি ? যে দেশে অগ্নি নাই, সে দেশে ইন্ধন তাহরণ করিয়া কি হইবে ? প্রতিজ্ঞা করিয়াছি, সব বিসর্জন দিব । ” 臺 藥 肇 鬱 আমি পরদিন শচীন্দ্রকে দেখিতে গেলাম। দেখিলাম, শচীন্দ্র অধিকতর স্থির-অপেক্ষাকৃত প্রফুল্ল । তাহার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথোপকথন করিতে লাগিলাম। বুঝিলাম, আমার উপর মে বিরক্তি, শচীন্দ্রের মন হইতে তাহা যায় নাই । পরদিন পুনরপি তাহাকে দেখিতে গেলাম । প্রত্যহুই তাহাকে দেখিতে যাইতে লাগিলাম । শচীন্দ্রের দুৰ্ব্বলতা ও ক্লিষ্টভাব কমিল না, কিন্তু ক্রমে স্থৈৰ্য, জন্মিতে লাগিল । প্রধাপ দূর হইল। ক্রমে শচীন্দ্র প্রকৃতিস্থ হইল। রজনীর কথা এক দিনও শচীন্দ্রের মুখে শুনি নাই । কিন্তু ইহা দেখিয়াছি যে, যে দিন হইতে রজনী আসিয়াছিল, সেই দিন হইতে র্তাহার পীড়া উপশম হুইয়া আসিতেছিল । এক দিন যখন আর কেহ শচীন্দ্রের কাছে ছিল না, তখন আমি ধীরে ধীরে বিনা আড়ম্বরে রজনীর কথা পাড়িলাম । ক্রমে তাহার অন্ধতার কথা পাড়িলাম । অন্ধের দুঃখের কথা বলিতে লাগিলাম, এই জগৎসংসার শোভা দর্শনে সে যে বঞ্চিত,—প্রিয়জনদর্শন-মুখে সে যে আজন্মমৃত্যু পৰ্য্যন্ত বঞ্চিত, এই সকল কথা তাহার সাক্ষাতে বলিতে লাগিলাম। দেখিলাম, শচীন্দ্র মুখ ফিরাইলেন, তাহার চক্ষু জলপূর্ণ হইল। অনুরাগ বটে ? তখন বলিলাম, “আপনি রজনীর মঙ্গলাকাজী । আমি সেই জন্য একটি কথার পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিতে চাই । রজনী একে বিধাতা কর্তৃক পীড়িত, আবার আমা কর্তৃক আরও গুরুতর পীড়িত হইয়াছে।” শচীন্দ্র আমার প্রতি করিলেন । আমি বলিলাম, “আপনি যদি সমুদয় মনোযোগ পূৰ্ব্বক শুনেন, তবেই আমি বলিতে প্রবৃত্ত হই ।” বিকট কটাক্ষ নিক্ষেপ শচীন্দ্র বলিলেন, “বলুন ।” আমি বলিলাম, “আমি অত্যন্ত লোভী এবং স্বার্থপর । আমি তাহীর চরিত্রে মোহিত হইয়া তাহাকে বিবাহ করিতে উদ্যোগী হুইয়াছি । সে আমার নিকট বিশেষ কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ ছিল, সেই জন্য আমার অভিপ্রায়ে সম্মত হইয়াছে।” শচীন্দ্র বলিলেন, “মহাশয়, এ সকল কথা অামাকে বলিতেছেন কেন ?" আমি বলিলাম, “আমি ভাবিয়া দেখিলাম, আমি সন্ন্যাসী, আমি নানা দেশ ভ্রমণ করিয়া বেড়াই ; অন্ধ রজনী কি প্রকারে আমার সঙ্গে দেশে দেশে বেড়াইবে ? আমি এখন ভাবিতেছি, অন্য কোন ভদ্রলোক তাহাকে বিবাহ করে, তবে মুখের হয় । আমি তাহাকে অন্ত পাত্রস্থ করিতে চাই । যদি কেহ আপনার সন্ধানে থাকে, সেই জন্য আপনাকে এত কথা বলিতেছি ।” শচীন্দ্র একটু বেগের সহিত বলিলেন, “রজনীর পাত্রের অভাব নাই ।” আমি বুঝিলাম, রজনীর বরপাত্রে কে । তৃতীয় পরিচ্ছেদ পরদিন আবার মিত্রদিগের অালয়ে গিয়া দেখা দিলাম। লবঙ্গলতীকে বলিয়। পাঠাইলাম ষে, আমি কলিকাতা ত্যাগ করিয়া যাইব, এক্ষণে সম্প্রতি প্রত্যাগমন করিব না - তিনি আমার শিষ্য, আমি র্তাহাকে আশীৰ্ব্বাদ করিব । লবঙ্গলতা আমার সহিত পুনশ্চ সাক্ষাৎ করিল, আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “আমি কালি যাহা শচীন্দ্রকে বলিয়া গিয়াছি, তাহা শুনিয়াছ কি ?” ল। শুনিয়াছি, তুমি অদ্বিতীয় । আমাকে ক্ষম করিও, আমি তোমার গুণ জানিতাম না । অামি নীরব হইয়া রহিলাম । তখন অবসর পাইয়া লবঙ্গলতা জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি আমার সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা করিয়াছ কেন ? তুমি না কি কলিকাতা হইতে উঠিয়া যাইতেছ?” আমি । যাইব । ল । কেন ? আমি । যাইব না কেন ? অামাকে যাইতে বারণ করিবার ত কেহ নাই । ল। যদি আমি বারণ করি ? আমি । আমি তোমার কে যে বারণ করিবে ?