পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

수력 অগ্নির আয়োজন প্রথম পরিচ্ছেদ শাহজাদী অপেক্ষা দুঃখী ভাল বলিয়াছি, মবারক রণভূমিতে পৰ্ব্বতের সামুদেশে সহসা অদৃগু হইলেন । অদৃপ্ত হইবার কারণ, তিনি ষে পথে অশ্বারোহণে সৈন্য লইয়। যাইতেছিলেন, তাহার মধ্যে একটা কুপ ছিল। কেহ পৰ্ব্বতোপরি বাস করিবার অভিপ্রায়ে জলের জন্য এই কুপটি খনন করিয়াছিল। এক্ষণে চারি পাশের জঙ্গল কুপের মুখে পড়িয়া কুপটি আচ্ছাদন করিয়াছিল। মবারক তাহ না দেখিতে পাইয়া উপর দিয়া ঘোড়া চালাইলেন । ঘোড়া সমেত তাহার ভিতর পড়িয়া গিয়া অদৃশু হইলেন। তাঁহার ভিতর জল ছিল না। কিন্তু পতনের আঘাতেই ঘোড়াটি মরিয়া গেল । মবারক পতনকালে সতর্ক হইয়াছিলেন ; তিনি বড় বেশী আঘাত পাইলেন না ; কিন্তু কুপ হইতে উঠিবার কোন উপায় দেখিলেন না । যদি কেহ শব্দ শুনিয়া র্তাহার উদ্ধার করে, এ জন্য ডাকাডাকি করিতে লাগিলেন । কিন্তু যুদ্ধের কোলাহলে তিনি কোন উত্তর শুনিতে পাইলেন না । কেবল একবার যেন, দূর হইতে কে বলিল, “স্থির হইয়া থাক—তুলিব ।” সেটাও সন্দেহ মাত্র । যুদ্ধ সমাপ্ত হইলে, রণক্ষেত্র নিঃশব্দ হইলে, কেহ যেন কুপের উপর হইতে বলিল, “বাচিয়া আছ ?” মবারক উত্তর করিল, “আছি। তুমি কে ?” সে বলিল, “আমি যে হই, বড় জখম হইয়াছ কি ?”

  • সামান্ত ।” “আমি একটা কাঠে দুই চারিখানা কাপড় বাধিয়া লম্বা দড়ির মত করিয়াছি । পাকাইয়া মজবুত করিয়াছি। তাহা কুয়ার ভিতর ফেলিয়া দিতেছি। দুই হাতে কাঠের দুই দিক্ ধর—অামি টানিয়া তুলিতেছি ।”

মবারক বিস্মিত হইয়া বলিল, “এ ষে স্ত্রীলোকের স্বর। কে তুমি ?” স্ত্রীলোক বলিল, “এ গলা কি চেন না ?” মৰা ৷ চিনিতেছি । দরিয়া এখানে কোথা হইতে ? বলিল, “তোমারই জন্য। এখন তুলিতেছি -ੇ " এই বলিয়া দরিয়া কাপড়ের কাছিতে বাধা কাঠখানা কুপের ভিতর ফেলিয়া দিল। তরবারি দিয়া কুপের মুখের জঙ্গল কাটিয়া সাফ করিয়া দিল । মবারক কাঠের দুই দিক্‌ ধরিল, দরিয়া তখন টানিয়া তুলিতে লাগিল । জোরে কুলায় না। কান্না আসিতে লাগিল। তখন দরিয়া একটা বৃক্ষের বিনত শাখার উপর বস্ত্ররজজু স্থাপন করিয়া, শুইয়। পড়িয়া টানিতে লাগিল। মবারক উঠিল। দরিয়াকে দেখিয়া মবারক বিস্মিত হইল । বলিল, “এ কি ? এ বেশ কেন ?” দরিয়া বলিল, “আমি বাদশাহী সওয়ার ।” মবা । কেন ? দরি । তোমারই জন্য । মবা । কেন ? দরি । নহিলে তোমাকে আজ বাচাইত কে ? মবা । সেই জন্য কি দিল্লী হইতে এখানে আসিয়াছ ? সেই জন্য কি সওয়ার সাজিয়াছ ? এই যে রক্ত দেখিতেছি ! তুমি ষে জখম হইয়াছ ! কেন এ করিলে ? দরি । তোমার জন্য করিয়াছি । না করিলে তুমি বঁাচিতে কি ? শাহজাদী কেমন ভালবাসে ? মবারক স্নানমুখে, ঘাড় হেঁট করিয়া বলিল, “শাহজাদীরা ভালবাসে না ।” দরিয়া বলিল, “আমরা দুঃখী- আমরা ভালবাসি। এখন বসে, আমি তোমার জন্য দোলা স্থির করিয়া রাখিয়াছি ; লইয়া আসিতেছি । তোমার চোট লাগিয়াছে—ঘোড়ায় চড়া সৎপরামর্শ হইবে না ।” যে সকল দোলা মোগলসেনার সঙ্গে ছিল, যুদ্ধে ভীত হইয়া তাহার বাহকের কতকগুলি লইয়া পলায়ন করিয়াছিল। দরিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে মবারককে কুপমগ্ন হইতে দেখিয়া প্রথমেই দোলার সদ্ধানে গিয়াছিল। পলাতক বাহকদিগকে সন্ধান করিয়া, দুইখানা দোলা ঠিক করিয়া রাখিয়াছিল । তার পর এখন, সেই দোলা ডাকিয়া আনিল । একখানায় আহত মবারককে তুলিল, একখানায় স্বয়ং ਚੋਲਿੰਗ | -