পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯ,ó বাদশাহের সম্মুখে অপিত করিলেন । নজরের অনৰ্য্যত দেখিয়া ঔরঙ্গজেব রুষ্ট হইলেন, কিন্তু মুখে কিছু বলিলেন না। প্রেরিত দ্রব্যের মধ্যে দুইখানি তরবারি ছিল ; একখানি কোষে আবৃত আর একখানি নিষ্কোষ। ঔরঙ্গজেব নিস্কোষ আসি গ্ৰহণ করিয়া আর সব উপহার পরিত্যাগ করিলেন । মাণিকলাল রাজসিংহের পত্র দিলেন । পত্রার্থ অবগত হইয়া ঔরঙ্গজেব ক্রোধে অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন। কিন্তু তিনি ক্রুদ্ধ হইলে সচরাচর বাহিরে কোপ প্রকাশ করিতেন না । তখন মাণিকলালকে বিশেষ সমাদরের সহিত জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন । র্তাহাকে উত্তম বাসস্থান দিবার জন্য বখ শীকে আদেশ করিলেন এবং আগামী কল্য মহারাণার পত্রের উত্তর দিবেন বলিয়া মাণিকলালকে বিদায় করিলেন । তখনই দরবার বরখাস্ত হইল দরবার হইতে উঠিয়া আসিয়াই ঔরঙ্গজেব মাণিকলালের বধের আজ্ঞা করিলেন । বধের আজ্ঞা হইল, কিন্তু যাহারা মাণিকলালকে বধ করিবে, তাহারা মাণিকলালকে খুজিয়া পাইল না। যাহাদিগের প্রতি মাণিকলালের সমাদরের আদেশ হইয়াছিল, তাহারাও খুজিয়া পাইল না । দিল্লীর সর্বত্র খুজিল, কোথাও মাণিকলালকে পাওয়া গেল না । তাহার বধের আজ্ঞা প্রচার হইবার আগেই মাণিকলাল সরিয়া পড়িয়াছিল । বল! বাহুল্য যে, ষখন মাণিকলালের জন্য এত খোজতল্লাস হইতেছিল, তখন সে আপনার পাথরের দোকানে ছদ্মবেশে সওদাগরী করিতেছিল । তাহদীরা মাণিকলালকে ন পাইয়!, তাহার শিবিরে যাহাকে যাহাকে পাইল, তাঙ্গাকে তাহাকে ধরিয়া কোতোয়ালের নিকট লইয়া গেল। তাহার মধ্যে নিৰ্ম্মলকুমারীকেও ধরিয়া লইয়া গেল । কোতোয়াল অপর লোকদিগের কাছে কিছু সন্ধান পাইলেন না, ভয়প্রদর্শন ও মারপিটেও কিছুই হইল না, তাহারা কোন সন্ধান জানে না, কি প্রকারে বলিবে ? কোতোয়াল শেষ নিৰ্ম্মলকুমারীকে জিজ্ঞাসাবাদ আরম্ভ করিলেন—পরদানিশীন বলিয়া তাহাকে এভক্ষণ তফাৎ রাখা হইয়াছিল । কোতোয়াল এখন নিৰ্ম্মলকুমারীকে জিজ্ঞাসা করিলেন । সে উত্তর করিল, “রাণার এল্‌চিকে আমি চিনি না ।” কোতোয়াল । তাহার নাম মাণিকলাল সিংহ । নিৰ্ম্মল । মাণিকলাল সিংহকে আমি চিনি না । কে । তুমি রাণার এলুচির সঙ্গে উদয়পুর হইতে আস নাই ? বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী নি। উদয়পুর আমি কখন দেখিও নাই । কো। তবে তুমি কে ? নি। আমি জুনাব যোগপুরী বেগমের হিন্দু বাদী । কো। জুনাব যোধপুরী মহালের বাহিরে আসে না । নি। আমিও কখন আসি নাই, এইবার হিন্দু এলুচি আসিয়াছে শুনিয়া বেগম সাহেব আমাকে তাহার তাম্বুতে পাঠাইয়া দিয়াছেন । কে । সে কি ? কেন ? নি। কিষণজীর চরণামুতের জন্ত, তাহা সকল রাজপুত রাখিয়া থাকে । কো । তোমাকে ত এক দেখিতেছি । তুমি মহালের বাহিরেই বা আসিলে কি প্রকারে ? নি । ইহার বলে । এই বলিয়া নিৰ্ম্মলকুমারী ষোধপুরী বেগমের পাঞ্জা বস্ত্রমধ্য হইতে বাহির করিয়া দেখাইল । দেখিয়া, কোতোয়াল তিন সেলাম করিল। নিৰ্ম্মলকে বলিল, “তুমি যাও, তোমাকে কেহ আর কিছু বলিবে না।” নিৰ্ম্মল তখন বলিল, “কোতোয়াল সাহেব, আর একটু মেহেরবাণী করিতে হইবে । আমি কখন মহালের বাহির হই নাই । আজ বড় ধর-পাকড় দেখিয়া আমার বড় ভয় হইয়াছে । আপনি যদি দয়া করিয়া একটা আহদী কি, পাইক সঙ্গে দেন, যে আমাকে মহাল পর্যন্ত পৌছিয়া দিয়া আসে, তাহা হইলে বড় ভাল হয় ” কোতোয়াল তখনই এক জন অস্ত্রধারী রাজপুরুষকে উপযুক্ত উপদেশ দিয়া নিৰ্ম্মলকে বাদশাহের অন্তঃপুরে পাঠাইয়া দিলেন । বাদশাহের প্রধান মহিষীর পাঞ্জা দেখিয়া খোজার কেহ কিছু আপত্তি করিল না, নিৰ্ম্মলকুমারী একটু চাতুরীর সহিত জিজ্ঞাসাবাদ করিতে করিতে যোধপুরী বেগমের সন্ধান পাইল । তাহাকে প্রণাম করিয়া সেই পাঞ্জা দেখাইল । দেখিবামাত্র সতর্ক হইয়া রাজমহিষী তাহাকে নিভৃতে লষ্টয়া গিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন। বলিলেন, “তুমি এষ্ট পাঞ্জা কোথায় পাইলে ?” নিৰ্ম্মলকুমারী বলিল, “আমি সমস্ত কথা সবিস্তার বলিতেছি।” নিৰ্ম্মলকুমারী প্রথমে আপনার পরিচয় দিল । তার পর দেবীর রূপনগরের ষাওয়ার কথা, সে যাহা বলিয়াছিল, সে কথা, পাঞ্জা দেওয়ার কথা, তার পর চঞ্চল ও নিৰ্ম্মলের যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, তাছা বলিল । মাণিকলালের পরিচয় দিল। মাণিকলালের সঙ্গে ষে বেগমের বাদীরা