পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দীনবন্ধু-জীবনী । Gł ২ । কবিত্ব । যে বৎসর ঈশ্বরচন্দ্ৰ গুপ্তের মৃত্যু হয়, সেই বৎসর মাইকেল মধুসুদন দত্ত প্রণীত “তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য” রহস্যসন্দর্ভে প্রকাশিত হইতে আরম্ভ হয় । ইহাই মধুসূদনের প্রথম বাঙ্গাল কাব্য। তার পরবৎসর দীনবন্ধুর প্রথম গ্ৰন্থ “নীলদর্পণ” প্ৰকাশিত হয় । সেই ১৮৫৯৷৷৬০ সাল বাঙ্গালা সাহিত্যে চিরস্মরণীয়-উহ নূতন পুরাতনের সন্ধি স্থল। পুরাণ দলের শেষ কবি ঈশ্বরচন্দ্ৰ অস্তমিত, নূতনের প্রথম কবি মধুসূদনের নবোদয়। ঈশ্বরচন্দ্ৰ খাটি বাঙ্গালী, মধুসুদন ডাহা ইংরেজ । দীনবন্ধু ইহাদের সন্ধিস্তল । বলিতে পারা যায় যে, ১৮৫৯৷৷৬০ সালের মত দীনবন্ধুও বাঙ্গালা কাব্যের নূতন পুরাতনের সন্ধিস্থল। দীনবন্ধু ঈশ্বর গুপ্তের একজন কাব্য-শিষ্য । ঈশ্বরচন্দ্রের কাব্যশিষ্যদিগের মধ্যে দীনবন্ধু গুরুর যতটা কবি-স্ব ভাবের উত্তরাধিকারী হইয়াছিলেন, এত আর কেহ নহে । দীনবন্ধুর হাস্যরসে যে অধিকার, তাহা গুরুর অনুকারী । বাঙ্গালীর প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে দীনবন্ধুর কবিতার যে ঘনিষ্ট সম্বন্ধ, তাহাও গুরুর অনুকারী । যে রুচির জন্য দানবন্ধুকে অনেকে দুষিয়া থাকেন সে রুচিও গুরুর । কিন্তু কবিত্ব সম্বন্ধে গুরুর অপেক্ষা শিষ্যকে উচ্চ আসন দিতে হইবে । ইহা গুরুর ও আগৌরবের কথা নহে । দীনবন্ধুর হাস্যরসে অধিকার যে ঈশ্বর গুপ্তের অনুকারী বলিয়াছি, সে কথার তাৎপৰ্য্য এই যে, দীনবন্ধু ঈশ্বর গুপ্তের সঙ্গে এক জাতীয় ব্যঙ্গ-প্ৰণেতা ছিলেন । আগেকার দেশীয় ব্যঙ্গ-প্ৰণালী এক জাতীয় ছিল-এখন আর এক জাতীয় ব্যঙ্গে আমাদিগের ভালবাসা জন্মিতেছে। আগেকার লোক কিছু মোটা কাজ ভাল বাসিত ; এখন সরুর উপর লোকের অনুরাগ। আগেকার রসিক, লাঠিয়ালের ন্যায় মোটা লাঠি লইয়া সজোরে শত্রুর মাথায় মারিতেন, মাথার খুলি ফাটিয়া যাইত। এখনকার রসিকেরা ডাক্তারের মত, সরু লানসেট খানি বাহির করিয়া, কখন কুচ করিয়া ব্যথার স্থানে বসাইয়া দেন, কিছু জানিতে পারা যায় না, কিন্তু হৃদয়ের শোণিত ক্ষত মুখে বাহির হইয়া যায়। এখন ইংরেজ শাসিত সমাজে ডাক্তারের শ্ৰীবৃদ্ধিলাঠিয়ালের বড় দুরবস্থা। সাহিত্য-সমাজে লাঠিয়াল আর নাই, এমন নহেদুৰ্ভাগ্যক্রমে সংখ্যায় কিছু বাড়িয়াছে, কিন্তু তাহদের লাঠি ঘুণে ধরা, বাহুতে