পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ দীনবন্ধু-জীবনী। বল নাই, তাহারা লাঠির ভরে কাতর, শিক্ষা নাই, কোথায় মারিতে কোথায় মারে। লোক হাসায় বটে, কিন্তু হাস্যের পাত্ৰ তাহারা স্বয়ং। ঈশ্বর গুপ্ত বা দীনবন্ধু এ জাতীয় লাঠিয়াল ছিলেন না । তঁহাদের হাতে পাকা বাশের মোটা লাঠি, বাহুতেও অমিত বল, শিক্ষণও বিচিত্র । দীনবন্ধুর লাঠির আঘাতে অনেক জলধর ও রাজীব মুখোপাধ্যায় জলধর বা রাজীব-জীবন পরিত্যাগ করিয়াছে । কবির প্রধান গুণ, স্বষ্টি-কৌশল । ঈশ্বর গুপ্তের এ ক্ষমতা ছিল না। দীনবন্ধুর এ শক্তি অতি প্রচুর পরিমাণে ছিল । তঁহার প্রণীত জলধর, জগদম্বা, মল্লিকা, নিমচান্দ দত্ত প্ৰভৃতি এই সকল কথার উজ্জল উদাহরণ । তবে যাহা সূক্ষ্ম, কোমল, মধুর, আকৃত্ৰিম, করুণ, প্ৰশান্ত - সে সকলে দীনবন্ধুর তেমন অধিকার ছিল না। তঁহার লীলাবতী, তাহার মালতী, কামিনী, সৈরিন্ধনী, সরলা, প্ৰভৃতি রসজ্ঞের নিকট তাদৃশ আদরণীয়া নহে। তাহার বিনায়ক, রমণীমোহন, অরবিন্দ, ললিতমোহন মন মুগ্ধ করিতে পারে না । কিন্তু যাহা স্কুল, অসঙ্গত, অসংলগ্ন, বিপৰ্য্যস্ত, তাহা তাহার ইঙ্গিত মাত্রেরও অধীন। ওঝার ডাকে ভূতের দলের মত স্মরণমাত্ৰ সারি দিয়া আসিয়। | || কি উপায় লইয়া দীনবন্ধু এই সকল চিত্র রচনা করিয়াছিলেন, তাহার আলোচনা করিলে বিস্মিত হইতে হয় । বিস্ময়ের বিষয়, বাঙ্গালা সমাজ সম্বন্ধে দীনবন্ধুর বহুদৰ্শিতা। সকল শ্রেণীর বাঙ্গালীর দৈনিক জীবনের সকল খবর রাখে, এমন বাঙ্গালী লেখক আর নাই। এ বিষয়ে বাঙ্গালী লেখকদিগের এখন সাধারণতঃ বড় শোচনীয় অবস্থা । তঁহাদিগের অনেকেরই লিখিবার যোগ্য শিক্ষা আছে, লিখিবর শক্তি আছে, কেবল যাহা জানিলে তঁহাদের লেখা সার্থক হয় তাহা জানা নাই। তাহারা অনেকেই দেশ-বৎসল, দেশের মঙ্গলাৰ্থ লেখেন, কিন্তু দেশের অবস্থা কিছুই জানেন না। কলিকাতার ভিতর স্বশ্রেণীর লোকে কি করে, ইহাই অনেকের স্বদেশ সম্বন্ধীয় জ্ঞানের সীমা । কেহ বা অতিরিক্ত দুই চারি খানা পল্লীগ্রাম, বা দুই একটা ক্ষুদ্র নগর দেখিয়াছেন, কিন্তু সে বুঝি কেবল পথ ঘাট, বাগান বাগিচা, হাট বাজার । লোকের সঙ্গে মিলেন নাই । দেশ সম্বন্ধীয় তাহদের যে জ্ঞান, তাহা সচরাচর সংবাদপত্ৰ হইতে প্ৰাপ্ত। সংবাদপত্র লেখকেরা আবার সচরাচর (সকলে নহেন) ঐ শ্রেণীর লেখক-ইংরেজেরা ত বটেনই। কাজেই তঁহাদেব কাছেও দেশ