পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rê দীনবন্ধু-জীবনী । তিনি তাহাকে আদর্শ করিতে পারিতেন । কিন্তু তঁহার উপর আদর্শের এমনই বল, যে সেই আদর্শের কোন অংশ ত্যাগ করিতে পারিতেন না। তোরাপের সৃষ্টিকালে, তোরাপ যে ভাষায় রাগ প্ৰকাশ করে, তাহ বাদ দিতে পারিতেন না। আব্দুরীর সৃষ্টিকালে, আব্দুরী যে ভাষায় রহস্য করে, তাহা বাদ দিতে পারিতেন না । নিমচাঁদ গড়িবার সময়ে, নিমৰ্চাদ যে ভাষায় মাতলামি করে, তাহা ছাড়িতে পারিতেন না। অন্য কবি হইলে সহানুভুতির সঙ্গে একটা বন্দোবস্ত করিত,--বলিত,-“তুমি আমাকে তোরাপের বা আদুরীর বা নিমচাঁদের স্বভাব চরিত্র বুঝাইয়া দাও-কিন্তু ভাষা আমার পছন্দ মত হইবে। ;-ভাষা তোমার কাছে লইব না।” কিন্তু দীনবন্ধুর সাধ্য ছিল না, সহানুভূতির সঙ্গে কোন প্রকার বন্দোবস্ত করেন। সহানুভূতি তঁাকে বলিত, “আমার হুকুম-সব টুকু লাইতে হইবে—ময় ভাষা। দেখিতেছ না যে, তোরাপের ভাষা ছাড়িলে, তোরাপের রাগ আর তোরাপের রাগের মত থাকে না, আব্দুরীর ভাষা ছাড়িলে, আব্দুরীর তামাসা আর আদুরীর তামাসার মত থাকে না, নিমৰ্চাদের ভাষা ছাড়িলে, নিমচাদের মাতলামি আর নিমৰ্চাদের মাতলামির মত থাকে না ? সব টুকু দিতে হবে।” দীনবন্ধুর সাধ্য ছিল না যে বলেন- যে “না তা হবে না।-”তাই আমরা একটা আস্ত তোরাপ, আস্ত নিমৰ্চাদ, আস্ত আব্দুরী দেখিতে পাই। রুচির মুখ রক্ষা করিতে গেলে, ছোড়া তোরাপ, কাটা আব্দুরী, ভাঙ্গা নিমচাঁদ আমরা পাইতাম । আমি এমন বলিতেছি না যে, দীনবন্ধু যাহা করিয়াছেন, বেশ করিয়াছেন । গ্রন্থে রুচির দোষ না ঘটে, ইহা সৰ্ব্বতোভাবে বাঞ্ছনীয়, তাহাতে সংশয় কি ? আমি যে কয়টা কথা বলিলাম। তাহার উদ্দেশ্য প্ৰশংসা বা নিন্দা নহে । মানুষটা বুঝানই আমার উদ্দেশ্য । দীনবন্ধুর রুচির দোষ, তঁাহার ইচ্ছায় ঘটে নাই। তঁহার তীব্ৰ সহানুভূতির গুণেই ঘটিয়াছে। গুণেও দোষ জন্মে, ইহা সকলেই জানে। কথাটায় আমরা মানুষটা বুঝিতে পারিতেছি। গ্ৰন্থ ভাল হৌক আর মন্দ হৌক, মানুষটা বড় ভালবাসিবার মানুষ । তঁহার জীবনেও তাই দেখিয়াছি । দীনবন্ধুকে যত লোক ভাল বাসিয়াছে, এমন আমি কখন দেখি নাই বা শুনি নাই। সেই সৰ্ব্ব-ব্যাপিনী তীব্ৰ সহানুভূতিই তাহার কারণ " দীনবন্ধুর এই দুইটা গুণ -( ১ ) তিঁাহার সামাজিক অভিজ্ঞতা, (২) তঁাহার প্রবল এবং স্বাভাবিক সৰ্ব্ব-ব্যাপী সহানুভূতি, তাহার কাব্যের গুণ দোষের